প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৫
এ চিত্র শুধু শাহরাস্তির নয়, প্রায় সব জায়গার-

‘ভুলে ভরা এনআইডি সংশোধনে হিমশিম খাচ্ছে শাহরাস্তি নির্বাচন অফিস’-গতকাল এমন শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ মো. মঈনুল ইসলাম কাজল একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, জন্মনিবন্ধন, সার্টিফিকেট ও তথ্য সংগ্রহকারীর তথ্য-একটির সাথে অন্যটির মিল নেই। এমনকি জন্মনিবন্ধন ও সার্টিফিকেটের সাথে রয়েছে বেশ গরমিল। তথ্য সংগ্রহকারীর তথ্যের সাথে জন্মনিবন্ধন ও সার্টিফিকেটের নামেও রয়েছে অনেক ফারাক। কী তথ্য সংগ্রহ করেছেন তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজার-এখন এটাই প্রশ্ন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার।
জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্যে ২৫ জানুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। ৬ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত শাহরাস্তিতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে ছবি তোলা হয়। ইতোমধ্যে সবাই ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ২৫ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত পুনরায় ভুল সংশোধনের জন্যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ভেসে উঠে ব্যাপক গরমিল। কেশরাঙ্গা গ্রামের মো. আবুল হোসেনের মেয়ে সাকিবা আক্তার তিশার জন্মনিবন্ধনে ২০০৬ সাল উল্লেখ থাকলেও তার সার্টিফিকেটে রয়েছে ২০০৭ সাল। তথ্য সংগ্রহকারী জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী তাকে ভোটার তালিকায় লিপিবদ্ধ করলেও তিশাকে সার্টিফিকেট নিয়ে পড়তে হবে ভোগান্তিতে। নরিংপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে নাহিদ চৌধুরী তার জন্মনিবন্ধনে নাম দিয়েছেন শুধু নাহিদ। পৌর এলাকার সাহিদুল ইসলামের কোথাও ইংরেজি বানানের মিল নেই। ১০ জুলাই পর্যন্ত পুনরায় সংশোধনে প্রায় ১০ হাজার আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। এরই মধ্যে প্রায় ৬ শতাধিক ভুল শনাক্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ পারভেজ জানান, তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের গাফলতির কারণে এমনটি হয়েছে। ওনারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এমনটা হতো না। আমরা যতোটুকু সম্ভব সংশোধন করে দিচ্ছি, কিন্তু জন্মনিবন্ধন ও সার্টিফিকেট সংশোধনের ক্ষমতা আমাদের নেই। সচেতন মহল মনে করেন, এসব এনআইডি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
জন্ম নিবন্ধনের সময় শিক্ষিত/অশিক্ষিত অভিভাবকের উদাসীনতায় কিংবা সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত সেবা প্রদানকারীদের খামখেয়ালিপূর্ণ মনোভাবের কারণে ভুল হয়। সার্টিফিকেটে ভুল হয় শিক্ষার্থীর নিজের কারণে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের তাড়াহুড়োর কারণে। আর তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারের ভুল হয় দায়িত্বপালনে গোঁজামিল ও দায়সারাভাবে দায়িত্বপালনের কারণে। তথ্য প্রদানে ও গ্রহণে চেক অ্যান্ড রিচেক ফর্মুলা অবলম্বন খুব কমজনই করে। এমতাবস্থায় যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হবে, তাতে ভুল না হয়ে পারে না। আর এই ভুল সংশোধনে নির্বাচন অফিসকে হিমশিম খাওয়াটা স্বাভাবিক। যেটি শাহরাস্তিতে হয়েছে। বস্তুত এমনটি শাহরাস্তি শুধু নয়, দেশের প্রায় সকল উপজেলাতেই কম-বেশি হয়েছে। শাহরাস্তির চিত্র চাঁদপুর কণ্ঠ সহ অন্যান্য পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলার চিত্র গণমাধ্যমকর্মীর নজরে আসে নি বলে সাধারণ্যে জানাজানি হয় নি। তথ্যগত এই ভুলের জন্যে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে চাকুরি, পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কতোটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়, এটা যে ভুগেছে সে-ই উপলব্ধি করতে পারে। অতএব, এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সেবা প্রদানকারী ও তথ্য সংগ্রহকারীদের এসব ভুলের হার কতোটা কমানো যায়, সে ব্যাপারে ভালোভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে, তাদের কাজ মনিটরিং করতে হবে। আর ব্যক্তির সচেতনতা তো সর্বাগ্রে জরুরিই।