বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩০

নেপাল-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনীতে চাঁদপুরের ‘রঙের চারু’র ৮ শিল্পীর অংশগ্রহণ

শিশুশিল্পীদের হাত ধরে রঙে রঙিন হলো নেপালের দেয়াল

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
শিশুশিল্পীদের হাত ধরে রঙে রঙিন হলো নেপালের দেয়াল

শিল্প যেখানে কথা বলে, সেখানে ভাষার দরকার পড়ে না। ঠিক তেমনই এক অভূতপূর্ব মুহূর্তের সাক্ষী হলো নেপালের পর্যটন শহর পোখারা, যেখানে শিশুশিল্পীদের কল্পনা আর ক্যানভাসে আঁকা স্বপ্ন ছুঁয়ে গেলো দুই দেশের হৃদয়।

নেপাল-বাংলাদেশ শিশু-কিশোর আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা ২০২৫ অনুষ্ঠিত হলো গত ২৫ জুন, নেপালের পোখারায় কুমুদিনী হোমস সেকেন্ডারি স্কুলের আর্ট গ্যালারিতে। ‘তোমার স্বপ্ন আঁকো’ এই প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছিল দুই প্রতিবেশী দেশের সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার এক অনন্য মেলবন্ধন। এই আন্তর্জাতিক শিল্প আয়োজনের পরিসর ছিলো চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সর্বমোট ২২০ জন এবং নেপালের ৮০ জন খুদে শিল্পী তাদের স্বপ্নের আঁচড় ফেলেছে ক্যানভাসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সামাজিক বাস্তবতা, মনের কল্পনা ও ভবিষ্যতের ভাবনা, সব মিলিয়ে প্রতিটি চিত্রকর্মই যেন হয়ে উঠেছিলো নিঃশব্দে কথা বলা এক একটি কবিতা।

এই বিশাল আয়োজনের গর্বিত অংশীদার ছিলো চাঁদপুরের শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন ‘রঙের চারু’। চাঁদপুর জেলার হয়ে অংশগ্রহণ করে সংগঠনের ৮ জন প্রতিশ্রুতিশীল শিশুশিল্পী। তারা হলেন : সংগঠনের সদস্য প্রতীক পাল, মোমেনা ফাইরোজ মূহিন, আফিফা মাহমুদ, বিন্দু বৈদ্য, জিনিয়া ইসলাম, সিদরাতুল মুনতাহা জোহা, উমা দাস অঙ্কিতা ও জাবেরা ইকরা মম।

তাদের আঁকা চিত্র শুধু শিল্পচর্চার ফল নয়, বরং তাদের অনুভব, সমাজচেতনা এবং স্বপ্নময় কল্পনার পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। ক্যানভাসে তারা যে রঙ ছড়িয়েছে, তা শুধু নেপালের পোখারাকেই নয়, আলোকিত করে তুলেছে বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গন এবং চাঁদপুরকেও।

প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমুদিনী হোমস- এর সম্মানিত চেয়ারম্যান অশোক পালিখে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেপালের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী ও নেপাল ললিতকলা একাডেমির সাবেক কাউন্সিল সদস্য রমেশ স্রেষ্ঠা। সভাপতিত্ব করেন নর্থ ক্যানভাস বাংলাদেশ- এর পরিচালক ও শিশু-কিশোর শিল্পসংস্কৃতি বিকাশে নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক আহসান আহমেদ।

প্রদর্শনী চলাকালে দুই দেশের শিল্পীরা একে অপরের সঙ্গে মতবিনিময় ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে। এতে বন্ধুত্বের সুতোয় গাঁথা হয়ে যায় তাদের। শিশুদের চোখে দেখা স্বপ্ন যখন আন্তর্জাতিক গ্যালারির দেয়ালে স্থান পায়, তখন তা শুধু শিল্প নয়, হয়ে উঠে এক জীবন্ত ইতিহাস।

‘রঙের চারু’র প্রতিষ্ঠাতা ও অভিভাবকবৃন্দ বলেন, আমাদের শিশুরা এমন আন্তর্জাতিক আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভীষণ উচ্ছ্বসিত। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করবে এবং আগামীতে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেকে তুলে ধরার সাহস জোগাবে।

এ ধরনের আয়োজন দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধনকে আরও মজবুত করে তোলে। শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ যেমন ঘটে, তেমনি তাদের মধ্যে তৈরি হয় আন্তঃসাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও মৈত্রীভাবনা। নেপাল-বাংলাদেশ যৌথ চিত্রপ্রদর্শনী ২০২৫ নিঃসন্দেহে এক নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিলো। আর সেই পথে রঙ ছড়িয়ে এগিয়ে চলেছে চাঁদপুরের রঙের চারুর খুদে শিল্পীরা, যারা আজ শুধু আমাদের গর্ব নয়, তারা আন্তর্জাতিক শিল্পভুবনেরও সম্ভাবনাময় নাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়