বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ২২:৪৭

আমাকে অভয় দিলে আমি সবার টাকা কালেকশনের ভিত্তিতে ফেরত দেবো : জুলহাস মিয়া

গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা যুবধারা সমবায় সমিতি

কামরুজ্জামান টুটুল।।
গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা যুবধারা সমবায় সমিতি
যুবধারা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান জুলহাস মিয়া তার এ বাড়িটি সম্প্রতি বিক্রি করেন। ছবি : চাঁদপুর কণ্ঠ।

হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার, রাজারগাঁও বাজার, চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাট ও চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যান ঘাটের ৪টি অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে যুবধারা সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি মাল্টিপারপাস সমিতি। গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকার আমানতের টাকাসহ এর চেয়ারম্যান জুলহাস মিয়া তার নিজস্ব সম্পত্তি, বাড়ি বিক্রি করে সম্প্রতি এলাকা ছাড়েন। তবে মুঠোফোনে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, তিনি গ্রাহকদের চাপে ও হয়রানির ভয়ে সরে আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাকিলা এলাকায় যুবধারা সমবায় সমিতির প্রধান কার্যালয়সহ চাঁদপুরের চেয়ারম্যানঘাট ও বাবুরহাট ব্রাঞ্চে বেশ কিছুদিন ধরে তালা ঝুলছে। অফিস বন্ধ থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য গ্রাহক এসব শাখার সামনে ভিড় করছেন। অনেকেই ফেসবুকে জুলহাস মিয়ার ছবি দিয়ে তার খোঁজে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ পুরস্কার ঘোষণা করে পোস্টও দিয়েছেন। বেশ ক'জন গ্রাহক প্রায় একই রকম তথ্য দিয়ে জানান, জুলহাস আত্মগোপনে যাওয়ার আগেই গ্রাহকদের সঞ্চয় বই সংগ্রহ করে নিয়ে নেন। বিভিন্নজনকে নগদ অর্থ ও বোনাস দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমানত সংগ্রহ করেছেন। কেউ কেউ ব্যাংক চেক পেলেও তা প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হন। এভাবে ধাপে ধাপে তিনি কয়েক কোটি টাকা তুলে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, কেউ এক লাখ, কেউ চার লাখ, আবার কেউবা ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা রেখেছেন এই সমবায় সমিতিতে। এক নারী গ্রাহক জানান, আমি ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম, এখন কিছুই বুঝে পাচ্ছি না। আরও একাধিক গ্রাহক জানান, টানা ঘোরাঘুরি ও আশ্বাসে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, জুলহাস মিয়ার বাকিলা বাজারের অফিস সংলগ্ন একটি দোকান ২৮ লাখ টাকায় এবং সন্না রোডে ৫ তলার আলিশান বাড়ি আড়াই কোটি টাকায় বিক্রি করে তিনি সপরিবারে এলাকা ছেড়েছেন। এমনকি তার বাবা ও মা সন্না গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়েছেন। প্রতিদিন বহু নারী-পুরুষ গ্রাহক এসে আমানত না পেয়ে কান্নাকাটি করে আর অভিশাপ দিয়ে বাকিলা ত্যাগ করেন।

এছাড়া জুলহাসের বিরুদ্ধে চাঁদপুর কোর্টে ‘চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার সমিতি’র পক্ষ থেকে দেয়া ৭৫ লাখ টাকার দুটি চেক প্রতারণা মামলা চলমান রয়েছে বলে বেশ কয়েকজন গ্রাহক জানান। এদিকে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ গ্রাহক একযোগে থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান। তারা আরো বলেন, সে আগে থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ভাগবে বলে। তাই আমাদের আমানতের বই হাতিয়ে নিয়ে গেছে। যদি জুলহাস সত্যি আত্মগোপন না করে থাকেন, তবে দ্রুত ফিরে এসে আমাদের অর্থ ফেরত দিন। নতুবা আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।

এদিকে বহু চেষ্টার পর মুঠোফোনে জুলহাস মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কিছুদিন আগে বাবুরহাট শাখায় গ্রাহকরা তাদের টাকার জন্যে আমার স্টাফদের মারধর করে। সবাইকে আমি একত্রে মূলধন ফেরত দেবো কীভাবে? কারণ, তাদের টাকা তো মাঠে আমি দিয়ে রেখেছি। আমাকে তো টাকা রোলিং করার সুযোগ দিতে হবে। গ্রাহকদের হামলার ভয়ে অফিস স্টাফরা অফিসে যাচ্ছে না। আমাকে অভয় দিলে আমি সবার টাকা কালেকশনের ভিত্তিতে ফেরত দিতে পারবো।

তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়