বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৬

ব্রিজের নামে লুটপাটের নমুনা

অনলাইন ডেস্ক
ব্রিজের নামে লুটপাটের নমুনা

বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্রিজ করার নামে কীভাবে লুটপাট হয়েছে সেটা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে বারবার প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ। বিশেষ করে মতলব উত্তরের মায়া চৌধুরী এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও হাজীগঞ্জের মো. শাহ কামাল সিনিয়র সচিব থাকাকালীন ব্রিজ নিয়ে দেশের অনেক জায়গায় কাজই হয় নি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ দলীয় লোকজন টাকা ভাগাভাগি করেছে। আর নিয়োজিত ঠিকাদার কাজের নামে কী করেছে, তার একটি নমুনা গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে ফুটে উঠেছে। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে, বালিথুবায় কোটি টাকার ব্রিজের অ্যাপ্রোচ সড়ক না করেই বিল নিয়ে উধাও ঠিকাদার!

সংবাদটিতে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে একটি ব্রিজ। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর বছর পেরিয়ে গেলেও দুই পাড়ের অ্যাপ্রোচ তথা সংযোগ সড়কের বালু ভরাট না করায় এবং সংযোগ সড়ক না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হচ্ছেন অত্র অঞ্চলের হাজারো মানুষ। ২নং বালিথুবা ইউনিয়নের কৃতী সন্তান, চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম এডব্লিউএম তোয়াহা মিয়া সাহেবের বাড়ির সামনে নির্মিত হয়েছে এই ব্রিজটি। যা চাঁদপুর-চান্দ্রা-মুন্সিরহাট-রামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক (ওয়াপদা রাস্তা) হতে বালিথুবা বাজার অভিমুখী ব্রিজ। ব্রিজটির কাজ ২০০২১-২২ অর্থ বছরে হলেও মূল সেতুর কাজ শেষ হয় এক বছর আগে। ঠিকাদারকে কাজের বিলও দিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচ (সংযোগ) সড়কের কাজ শেষ করা হয়নি। এতে করে এলাকার হাজারো মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে মো. মহসিন চৌধুরী, হাফেজ খাজে আহমদ, মাহাবুব আলম চৌধুরী, মোস্তফা, শাহ আলমসহ অনেকে জানান, ছোট্ট এই ব্রিজটি করতে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যা দেখলাম, টাকার সাথে কাজের কোনো মিলই নেই। কারণ, ঠিকাদার একেবারেই নিম্নমানের কাজ করে মূল ব্রিজের কাজ শেষ করেছেন এবং দু পাড়ের কাজ শেষ না করেই চলে গেছেন। তারা আরও বলেন, ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখে যেনো এলাকার মানুষকে জনদুর্ভোগে ফেলেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ পিআইও অফিস চরম উদাসীন। তবে ঠিকাদারের বিল পরিশোধে বিলম্ব করেনি। ব্রিজটির একপাশে সরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অন্যপাশে বালিথুবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বালিথুবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিদিনই এই বিদ্যালয়গুলোর ছোট ছোট শিশুরা এবং পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে উঠানামা করছে। যে কোনো সময় বড়ো ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে তারা বলেন। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এছাড়া বয়স্ক নারী-পুরুষ রোগীসহ শত শত পথচারীকে ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজটি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে কাজের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ে কথা বলতে গেলে পিআইওকে পাওয়া যায় নি। তবে তাঁর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী অজয় ভৌমিককে পাওয়া গেছে। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নতুন এসেছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর এই ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কারণে সাবেক প্রকল্প কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়েই টাকা উত্তোলন হয়ে গেছে। কিন্তু অজয় ভৌমিক ব্রিজের পরিপূর্ণ তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কোন্ ঠিকাদার, কোন্ লাইসেন্সে এ কাজ করেছেন তার মোবাইল নম্বর চাইলে তা দিতেও অপারগতা প্রকাশ করেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার পিআইও অফিস এই ব্রিজ সংক্রান্ত তথ্য চাঁদপুর কণ্ঠ প্রতিনিধিকে তাৎক্ষণিক না দিলেও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী দিতে বাধ্য। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে উপরোল্লিখিত সংবাদের ফলোআপে হয়তো বেরিয়ে আসবে ব্রিজ নিয়ে লুটপাটের ভয়ঙ্কর চিত্র। বিল পরিশোধ হয়ে গেলে পিআইও ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না-এমন বিধান নিশ্চয়ই নেই। আমরা মনে করি, এমন ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং পিআইও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা যায়। শুধু ফরিদগঞ্জের পিআইও নয়, সারাদেশের আরো অনেক উপজেলার পিআইও যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ব্রিজ না বানিয়ে দলীয় লোকজনকে লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন, আবার খাল ও সড়কবিহীন অপ্রয়োজনীয় স্থানে, যেমন উন্মুক্ত কৃষি জমিতে, কারো বাড়ির সামনে, পেছনে, বাগানে ও অব্যবহৃত স্থানে, পাহাড়ে, জঙ্গলে ব্রিজ বানিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাগ্রহণ করা হোক। এতে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এমন দুর্নীতি করার বিষয়ে বিরত থাকবেন কিংবা অনেক ভেবেচিন্তে কাজ করবেন। নতুবা ব্রিজ নিয়ে, কাবিখা, কাবিটা নিয়ে লুটপাটের বিষয়টি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতিতে পরিণত হবে, সেটা যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়