প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৩
৮ দিনের বর্ণাঢ্য উৎসবে জেগে উঠলো চাঁদপুরের সংস্কৃতির প্রাণ

চাঁদপুরে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চাকে ঘিরে নতুন উদ্দীপনার সূচনা করলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ৮ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২৫। চাঁদপুর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই বর্ণাঢ্য আয়োজনটি শুরু হয় গত ২০ জুন ২০২৫ শুক্রবার থেকে এবং সফল সমাপ্তি ঘটে ২৭ জুন শুক্রবারে। প্রতিদিন বিকেল ও সন্ধ্যায় জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে জমজমাটভাবে অনুষ্ঠিত হয় এই সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। ৮দিনের এই উৎসবের মধ্য দিয়ে কয়েকমাসের বিরতির পর চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে যেনো নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে।
উৎসবের প্রতিটি দিন ছিলো ভিন্ন স্বাদ, ভিন্ন আয়োজন ও শিল্পের বহুবর্ণ উপস্থাপন। গানে, নৃত্যে, আবৃত্তিতে ও নাটকে মুখর ছিলো শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চ। উৎসবটি আয়োজন ও বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন সাংস্কৃতিক উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন খান আকাশ, প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. নূরুল হক কমল এবং সদস্য সচিব পিএম বিলাল।
উৎসবের প্রথম দিন ছিলো ২০ জুন ২০২৫ শুক্রবার, উৎসবের শুভ সূচনা হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। উদ্বোধনী দিনের আয়োজন ছিলো চাঁদপুর নতুন কুঁড়ি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় ‘ওল্ড ইজ গোল্ড’ শিরোনামে এক চমৎকার সংগীতানুষ্ঠান। সংগঠনের শিল্পীরা একাধিক একক ও দলীয় পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মঞ্চ প্রাণবন্ত করে তোলে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২১ জুন, শনিবার বিকেলে মঞ্চে আসে বহুবচন একাডেমি, তারা উপস্থাপন করে আবৃত্তির অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় স্বদেশ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পরিবেশন করে সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং রাতে চমৎকার নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঙ্গন, চাঁদপুর। উৎসবের তৃতীয় দিন ছিলো ২২ জুন, রোববার। এই দিনের আয়োজন শুরু হয় হাজীগঞ্জের সারদাদেবী সংগীত নিকেতনের পরিবেশনায়। সন্ধ্যার পর আলোচনা শেষে মঞ্চে আসে রংধনু সাংস্কৃতিক সংগঠন, তারা পরিবেশন করে সৃজনশীল নৃত্য। রাতে পরিবেশনায় অংশ নেয় চাঁদপুর শিশু থিয়েটার সাংস্কৃতিক বিভাগ।
৮দিনব্যাপী উৎসবের চতুর্থ দিন ২৩ জুন সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ফিউচার সাংস্কৃতিক সংগঠনের একক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় আলোচনা শেষে রংতুলি ও বাঁধন সাংস্কৃতিক সংগঠন যৌথভাবে পরিবেশন করে নান্দনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাতের শেষে দর্শকরা উপভোগ করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চাঁদপুর-এর গীতি ও আবৃত্তির পরিবেশনা। পঞ্চম দিন ২৪ জুন, মঙ্গলবার বিকেলে মঞ্চে আসে দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং প্রান্তিক সামাজিক সংগঠন। সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় শুভেচ্ছা নৃত্যকথন এবং মেঘালয় সাংস্কৃতিক সংগঠনেরর পরিবেশনা। রাতে রক্সি মিউজিক্যাল গ্রুপ উপস্থাপন করে সঙ্গীতানুষ্ঠান। উৎসবের ষষ্ঠ দিন ২৫ জুন বুধবার বিকেলে অংশ নেয় রিভারসাইড কিন্ডারগার্টেন, পুরাণবাজারের সাংস্কৃতিক বিভাগ। সন্ধ্যায় জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) পরিবেশন করে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রাতে স্বপ্নকুঁড়ি সাংস্কৃতিক সংগঠন উপস্থাপন করে নৃত্য পরিবেশনা।
সপ্তম দিন ২৬ জুন, বৃহস্পতিবার বিকেলে মঞ্চে আসে চাঁদপুর হিলশা সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ। এরপর সন্ধ্যায় পরিবেশনায় অংশ নেয় চাঁদপুর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, এবং রাতে চমৎকার পরিবেশনা করে সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়। উৎসবের সমাপনী দিন ২৭ জুন, শুক্রবার বিকেলের পরিবেশনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, চাঁদপুর। একাধিক শিশুশিল্পীর অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে চাঁদপুর মঞ্চ, তারা পরিবেশন করে নাট্য ও নৃত্য পরিবেশনা। উৎসবের শেষ পরিবেশনায় অংশ নেয় নৃত্যধারা নৃত্য সংগঠন চাঁদপুর, যাদের একক নৃত্য পরিবেশনায় শেষ হয় এই ৮দিনব্যাপী উৎসবের দীর্ঘ সাংস্কৃতিক অধ্যায়।
এই উৎসবকে ঘিরে চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে যেনো প্রাণ ফিরে এসেছে। উৎসবে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো যেমন নিজেদের পরিচয় নতুনভাবে মেলে ধরেছে, তেমনি নতুন প্রজন্মও পেয়েছে আত্মপ্রকাশের মুক্ত মঞ্চ। সংস্কৃতিপ্রেমীরা মনে করছেন, এ ধরনের ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক আয়োজন চাঁদপুরে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির নতুন অধ্যায় রচনা করবে। একাধিক সংগঠনের সম্মিলিত চেষ্টায় এই উৎসব পরিণত হয়েছে একটি ইতিবাচক সাংস্কৃতিক বিপ্লবে, যার অনুপ্রেরণায় ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের প্রত্যাশা জেগে উঠেছে জেলার প্রতিটি শিল্পমনে।