শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

ইফতার ও ঈদের আহারে পরিমিতি ও পরিণতি

ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

ইফতার ও ঈদের আহারে পরিমিতি ও পরিণতি
অনলাইন ডেস্ক

প্রকৃতি নিয়মে চলে। প্রতিটি জিনিস নিয়মের অধীন। নিয়মের ব্যত্যয় হলে প্রকৃতিও হুমকিতে পড়ে যায়। তাই বলা হয়, শৃঙ্খলাই জীবন। বহুকোষী জীবদেহ তথা মানবদেহ নিজেও এ নিয়মের বাইরে নয়। মানবদেহের নিজস্ব একটি ঘড়ি আছে। একে বলে বায়োলজিক্যাল ক্লক বা দেহঘড়ি। এ দেহঘড়িই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের দেহের সকল জারকরস ও অনালগ্রন্থির নিঃসরণ। দেহঘড়ির এ নিয়ন্ত্রণ নির্ভর করে অভ্যেসের ওপর। বারো মাসের মধ্যে একমাস রোজা রাখাকালীন দেহঘড়ির অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে নতুন অভ্যাস তৈরি হয়। সে অনুযায়ী দেহের রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটে। কিন্তু একমাস পরে যখন আবার পুরানো নিয়মে চলে যায় মানবদেহ, তখন দেহঘড়িও ধীরে ধীরে আগের ধারায় প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু এ প্রত্যাবর্তনে তার সময় লাগে। এরই মধ্যে যদি কেউ দেহের বিপাক ও পরিপাক প্রক্রিয়ায় জোর-জবরদস্তি খাটায় তবে দেহযন্ত্র বিগড়ে যেতে পারে। এই বিগড়ানো শেষমেষ অগস্ত্যযাত্রায় পরিণতি পেতে পারে।

দীর্ঘদিন দৈনিক বারো ঘণ্টা ধরে বা তার বেশি সময় আহারে বিরতি দিয়ে যখন হুট করে কেউ ক্রমাগত পাকস্থলীর ওপর হজমের বোঝা চাপায় তখন তার দেহতন্ত্রে শুরু হয়ে যায় অরাজকতা। ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্র বিকল হয়ে যেতে পারে। পাকস্থলী একাকী খাদ্য হজম করে না। পাকস্থলীতে থাকে স্টমাক বেড বা রক্তনালীর শয্যা, যেখানে পরিমিত রক্ত সরবরাহ বেশ কিছু সময় ধরে বজায় থাকলে তবেই খাদ্য হজম হয়। পাকস্থলীতে সাধারণত গৃহীত খাদ্যবস্তু দেড় ঘণ্টা অবস্থান করে তারপর তা অন্ত্রে চলে যায়। এ সময়ের মধ্যে কেউ যদি পুনরায় খাবার গ্রহণ করে বা শারীরিক কসরত করে, তবে হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ বেড়ে যায় যাতে সংশ্লিষ্ট অঙ্গগুলোতে অধিক রক্ত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু হৃদপি-ের পক্ষে সর্বদা এরকম চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। ফলে এরকম চাহিদা ও যোগানে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। হৃদপি- তথা আমাদের রক্তযোগানদারী পাম্পের তখন ফেইলিওর হয় বা অসামর্থ্য তৈরি হয়। এতে এক সময় হার্ট নিজের জন্যেও ন্যূনতম প্রয়োজনীয় রক্ত না রেখে সবটাই বিতরণ বা বণ্টন করে দেয়। ফলে পুষ্টি বা নিউট্রিশনের অভাবে হার্ট নিজেই অ্যাটাক্ড হয়ে পড়ে এবং শেষে জীবনের দম থমকে যায়।

যারা ঈদের রসনা-তৃপ্তিকারী আহারে নিজেদের ব্যস্ত রাখবেন, তাদের অবশ্যই মনে রাখা উচিত, যতো মজাদার খাবারই হোক না কেনো, প্রতিটা ঘরে ঊন-খাবার গ্রহণ করা, ভরপেট না খাওয়া। এতে পরবর্তী দাওয়াতে অল্প হলেও খাবার গ্রহণের সুযোগ থাকে এবং তা নিরাপদ রাখে। এ কথা অনেক আগে থেকেই প্রচলিত যে, ঊনা ভাতে দুনা বল, বেশি ভাতে রসাতল। ঈদের আনন্দকে মাথায় রেখে আহার গ্রহণেও সে রকম সতর্ক হওয়া উচিত। এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমে আসবে।

ঈদের আহারে চিনি-মিষ্টি থাকে বেশি। বেশি থাকে তেলণ্ডচর্বির বাহার। ফলে ডায়াবেটিক রোগী যারা, যারা উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মান বেশি তাদের খাবার গ্রহণে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। যারা স্থুলদৈহিক এবং অতি ওজনের অধিকারী, তাদের অবশ্যই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।

এবারের রমজানে দেখা গেছে, ইফতারের পর পর অনেকেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকাক্রান্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই রক্তে চিনির মান কমে গিয়ে বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া থেকে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ হুট করে অধিক পরিমাণে আহার করে পাকস্থলী ও হৃদপি-ের ওপর কাজের চাপ বাড়িয়ে নিজেকে হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন করছেন। কেউ কেউ ভরপেট খেয়েই ইবাদতে বসতে গিয়ে দেহে রক্তের সরবরাহে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রথমেই রক্তে গ্লুকোজ রেডিমেড পাওয়া যায় এমন খাবার গ্রহণ করে ইবাদতে বসা উচিত। এরপর যে খাবারগুলো পেটে গিয়ে পরিপাক হয়ে রক্তে গ্লুকোজ আসে সেগুলো ধীরে ধীরে গ্রহণ করা উচিত। এতে পাকস্থলী ও হার্ট যেমন চাপহীন থাকবে, তেমনি রক্তে গ্লুকোজের কাঙ্ক্ষিত মানও বজায় থাকবে।

সারাদিন অভুক্ত থেকে অনেকেই ঢক ঢক করে প্রায় লিটারখানেক পানীয় গলাধঃকরণ করেন। কিন্তু এতে পাকস্থলীর স্থান যেমন দখল হয়ে গেলো, তেমনি আরও পানীয় গ্রহণের আগ্রহ তৈরি করলো। কেননা, রক্তে গ্লুকোজ মাত্রা সর্বোত্তম না হওয়া অবধি মনের আকাক্সক্ষা কমে না। এই দিকটি মাথায় রেখেই হালকা পানীয় দিয়ে আহার গ্রহণ শুরু করে শেষে মনের আকাক্সক্ষা মিটিয়ে পানীয় পান করা যায়।

দেহ তার নিজের নিয়মে চলে। মানুষকে দেহের নিয়মের সাথে সমন্বয় করেই চলতে হয়। জীবনের প্রয়োজনে আহারে শৃঙ্খলা থাকা জরুরি। পরিমিত আহার জীবনকে খারাপ পরিণতি হতে দূরে রাখে। মনে রাখতে হবে, আহারের জন্যে জীবন নয়, জীবনের জন্যেই আহার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়