বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:০২

চাঁদপুর শহরে অসুস্থ-আহত কুকুরের করুণ চিত্র।। দু বছরেও দেয়া হয়নি ভ্যাকসিন

দেখার যেনো কেউ নেই : অবহেলায় বাড়ছে সংক্রমণ!

কবির হোসেন মিজি
দেখার যেনো কেউ নেই : অবহেলায় বাড়ছে সংক্রমণ!
চাঁদপুর শহরে অসুস্থ-আহত কুকুর।ছবি : চাঁদপুর কন্ঠ

চাঁদপুর শহরের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় প্রতিদিন চোখে পড়ে অসুস্থ, ক্ষতবিক্ষত ও চর্মরোগে আক্রান্ত পথকুকুর। দীর্ঘদিন ধরে এদের শরীরে দেওয়া হয়নি কোনো ধরনের ভ্যাকসিন, নেই নিয়মিত চিকিৎসা, নেই কোনো নিবন্ধন বা পুনর্বাসনের উদ্যোগ। অথচ শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়ক, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্র পর্যন্ত কুকুরদের বিচরণ প্রতিনিয়ত।

এসব অসহায় প্রাণী শুধু নিজেরাই কষ্ট পাচ্ছে না, বরং জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে শিশুসহ পথচারীদের জন্যে তৈরি করছে বড়ো ধরনের ঝুঁকি।

গত ৫/৬ মাস ধরে চাঁদপুর শহরের ছায়াবাণী, মিশন রোড, বাসস্ট্যান্ড, চেয়ারম্যান ঘাটা, পালবাজার, বিপণীবাগ, নতুনবাজার ও পুরাণবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে শত শত কুকুর, যাদের গলায় দগদগে ক্ষত, শরীরজুড়ে পুঁজ ও রক্তের দাগ।

আশেপাশের দোকানদার, পথচারীরা ও পশুপ্রেমীরা কেউ কেউ তাদের পানি বা খাবার দিলেও তার যন্ত্রণার উপশমে নেই কোনো কার্যকর সহায়তা।

কিছু কুকুর ইনফেকশনে অন্ধ হয়ে গেছে, অনেক কুকুর চিকিৎসাসেবা না পেয়ে কাতরাতে কাতরাতে সড়কেই মৃত্যুবরণ করছে। আবার কোনো কোনো কুকুর অসুস্থ শরীর নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলাফেরা করছে।

কিন্তু এসব পথকুকুরদের সেবার জন্যে কেউই এগিয়ে আসছে না। চাঁদপুর প্রাণিসম্পদ কার্যালয় এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যেনো চোখ থেকেও অন্ধ।

জানা গেছে, সর্বশেষ শহরের এসব বেওয়ারিশ পথকুকুরদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছিলো প্রায় দুই বছর আগে। এরপর থেকে কোনো ধরনের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়নি।

র‌্যাবিস, ক্যানাইন ডিস্টেম্পার, পারভোভাইরাসসহ একাধিক ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কুকুরগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি। না হলে সংক্রমণ শুধু কুকুরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।

বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের জন্যে এসব সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে।

প্রাণিকল্যাণ আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে পথকুকুরদের নিবন্ধন, ভ্যাকসিনেশন, চিকিৎসা এবং প্রয়োজনে পুনর্বাসন করা। কিন্তু চাঁদপুর পৌরসভা কিংবা জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।

পথকুকুর নিয়ন্ত্রণে ধরপাকড় বা নির্মম হত্যার মতো নিষ্ঠুর ব্যবস্থা না থাকলেও, বিকল্প কোনো পরিকল্পিত ব্যবস্থার ছোঁয়াও নেই।

সমাধানের জন্য দরকার : শহরব্যাপী কুকুর টিকাদান কর্মসূচি চালু, ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসা ইউনিট, পুনর্বাসন ও সুরক্ষা কেন্দ্র, সচেতনতা ক্যাম্পেইন এবং পৌরসভা ও প্রাণীপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবীদের যৌথ টাস্কফোর্স গঠন।

চাঁদপুর শহরের কিছু যুবক ও প্রাণীপ্রেমী প্রতিদিন কিছু কুকুরকে খাবার দেন, ওষুধ লাগান, চিকিৎসাও করেন। তাদের দাবি, পৌরসভা যদি অন্তত একটি অস্থায়ী পশু চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করে, তাহলে তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিতে রাজি।

বাসস্ট্যান্ড, মিশন রোড, ছায়াবাণী, নাজিরপাড়া, পালপাড়া, চিত্রলেখা মোড়, কলেজ রোড, বটতলা ও হাসান আলী স্কুল মোড়ে প্রতিদিন অসুস্থ কুকুরের উপস্থিতি দেখা যায়।

কিছু কুকুরের মুখে ফেনা দেখা গেছে, যা র‌্যাবিসের লক্ষণ হতে পারে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতে কুকুরদের চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে যায়, কিছু কুকুর ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে থাকে, আবার কিছু শিক্ষার্থীদের পিছু নেয় ও কামড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে।

জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থেই এখন সময় এসেছে একটি সমন্বিত এবং টেকসই উদ্যোগ গ্রহণের। না হলে নিরীহ প্রাণীদের মৃত্যু এবং মানুষের ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, এসব বেওয়ারিশ কুকুরকে সেবা দেয়া আমাদের কাজ নয়, এটা পৌরসভার দায়িত্ব। তবে কেউ যদি পোষা প্রাণী নিয়ে আসে, তাহলে আমরা সেবা দিয়ে থাকি।

চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে সম্প্রতি আমরা সরকারি হাসপাতালে ৩ লাখ টাকার জলাতঙ্ক টিকা দিয়েছি। এখন শুনেছি বলেই জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সাথে আলোচনা করবো।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়