প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০০:৩৪
ঘুষেই শিক্ষা!

ঢাকার নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগকে ঘিরে বিস্ফোরক তথ্য সামনে এসেছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার অভিযোগ করেছেন ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক কাজি নয়ামুল হক।
|আরো খবর
অধ্যক্ষ হতে হলে ৫০ লাখ?
অধ্যাপক নয়ামুল হক জানান, ১৩ জুন অনুষ্ঠিত গভর্নিং বডির নিয়োগ বোর্ডে তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৪ জুন গভর্নিং বডি তাঁর নিয়োগ সুপারিশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠায়। এরপর শুরু হয় অজুহাত, বিলম্ব এবং গোপন লেনদেনের চক্রান্ত।
৪ জুলাই, তাঁকে ডেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল আক্তার বলেন:
“আপনাকে অধ্যক্ষ হতে হলে ৫০ লাখ টাকা দিতে হবে। আগের যারা হয়েছেন, তারাও দিয়েছেন।”
অধ্যাপক নয়ামুল হক এই প্রস্তাব সাফ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।
কে চালাচ্ছে এই সিন্ডিকেট?
ঘটনার গভীরে খুঁজলে উঠে আসে “দীপু-টিপু সিন্ডিকেট” নামের একটি দীর্ঘমেয়াদি দুর্নীতির চক্রের উপস্থিতি, যার সূত্রপাত হয়েছিল সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মন্ত্রণালয় পরিচালনার সময়।
এই চক্র —
- উপাচার্য নিয়োগে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দাবি করত,
- সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে ৪০-৫০ লাখ টাকা হারে আদান-প্রদান চালাত,
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরে ‘ম্যানেজিং বডি নিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির কাঠামো’ গড়ে তোলে।
সিটি কলেজের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে—মুখ বদলেছে, পদ্ধতি ঠিক আগের মতোই রয়েছে।
দীপু মনি বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু সাহস কোথা থেকে আসে?
যেখানে একজন উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী প্রকাশ্যে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চায়, সেখানে প্রশ্ন ওঠে—এই সাহস আসে কোথা থেকে?
এটি সম্ভব হয় কারণ:
- “দীপু-টিপু সিন্ডিকেট” আজও ছায়া প্রশাসনের মতো শিক্ষা খাতে সক্রিয়,
- নিয়োগ ও বদলির নামে চলমান লেনদেন আজও উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে,
- এবং এসব চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন আজও নীরব দর্শক।
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
সিটি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে ঘুষ চক্র জনসম্মুখে এসেছে — এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা না ভেবে, “দীপু-টিপু সিন্ডিকেট”–এর নির্দিষ্ট প্রভাব হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা।
“এই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে না পারলে যোগ্যতাবান শিক্ষকরা তিরস্কৃত হবেন, আর ঘুষ দাতারাই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হবেন। শিক্ষার শত্রুদের এখনই থামাতে হবে।”
জাতীয় তদন্ত প্রয়োজন
ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে এখনই প্রয়োজন:
- “দীপু-টিপু সিন্ডিকেট” চিহ্নিত ও তদন্তে আনা,
- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ কার্যক্রমের নিরপেক্ষ তদন্ত,
- পিএ আমিনুল আক্তার ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও শাস্তি,
- ঘুষচক্রের সকল সংযোগ ও মদদদাতাদের বিচারের আওতায় আনা।
“সিন্ডিকেট বদলালেও নিয়োগ বাণিজ্যের ছায়া থেকেই যায়। দীপু-টিপু সিন্ডিকেটের অবসান না ঘটালে শিক্ষা খাত ঘুষের কারখানায় রূপান্তরিত হবে।”
এই ঘটনার পর শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিয়োগের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে দ্রুত প্রশাসনিক ও আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন—না হলে ‘যোগ্যতা নয়, টাকা’ই হয়ে উঠবে শিক্ষার নতুন সংজ্ঞা।
ডিসিকে/এমজেডএইচ