প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ০০:০০
জামাল মোল্লার সন্তানদের খুঁজে শায়েস্তা করা হোক

মতলব উত্তরের মোহনপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ জামাল মোল্লার সন্তানরা কয়েক মাস আগে চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্ট স্টেশনে খোলা আকাশের নিচে তাকে রেখে চলে যায়। এরপর সেখানেই অর্ধাহারে অনাহারে বিনা চিকিৎসায় ও তীব্র গরমে কষ্টের মধ্য দিয়ে গত ৪ মে শনিবার রাত ১টায় মারা যান তিনি। ৮ মে বুধবার দুপুরে রেলওয়ে থানার ওসি মোঃ মাসুদ আলম তার দাফনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। স্থানীয়রা জানান, কয়েক মাস ধরে কোর্ট স্টেশনে অবস্থানকালে জামাল মোল্লা নিজের নাম ও পরিবারের বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছিলেন। তার আনুমানিক বয়স হবে ৮০ বছর। তিনি জানান, তার পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন তিনি। এক সময় তিনি মোহনপুরে ভালো ব্যবসায়ী ছিলেন এবং ছেলেদের নিয়ে সে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার ছেলে-মেয়েরাই তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে বাড়ি, ঘরসহ সকল সম্পত্তি লিখে নিয়ে তাকে পথে ফেলে রেখে যায়। তার স্ত্রী আছে কি না তা জানতে চাইলে কোনো কিছু না বলে তিনি সবসময় শুধু চুপ করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। চাঁদপুর রেলওয়ে থানার ওসি মোঃ মাসুদ আলম বলেন, মরার পরেও তিনদিন এই বৃদ্ধের স্বজনদের খোঁজ পাইনি। পরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে তাকে দাফন করলো আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসান। তার মৃত্যুর বিষয়ে রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এদিকে জামাল মোল্লার ন্যায় আরেকজন বৃদ্ধ চাঁদপুর রেলওয়ে কোর্ট স্টেশন প্লাটফর্মের এদিক ওদিক গড়াগড়ি করছেন। স্বজনদের কেউই খোঁজ নিচ্ছে না তার। ওই বৃদ্ধের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে পানি ছিটিয়ে তাড়ানো হচ্ছে। আর পথচারীরা তা চেয়ে চেয়ে দেখছে। কেউ উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।
অনেক মানুষের জীবন এভাবেই বিভিন্ন স্থানে গড়াগড়ি দিয়ে কাটছে। প্রায় সকল মানুষ এতোটাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে যে, এমন মানুষদের দেখে ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত করণীয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে জামাল মোল্লাদের মতো লোকজনরা জীবন সায়াহ্নে ন্যূনতম মানবিক সেবাটুকু প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাঁদপুরে যদি মানবিক পুলিশ শওকতের মতো কেউ থাকতেন, তাহলে জামাল মোল্লাকে কোর্ট স্টেশন থেকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন এবং মতলব উত্তরের মোহনপুরে তল্লাশি চালিয়ে তার সন্তানদের খুঁজে বের করে জবাবদিহিতা ও শাস্তির মুখোমুখি করতেন। এমতাবস্থায় অজস্র মানবাধিকার সংগঠনের একটিও যদি জানতে পারতো, তাহলে সেই ভূমিকা রাখতে পারতো। তারপরও এমন সংগঠনের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা দয়া করে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে মোহনপুর এলাকায় এমন তল্লাশি চালানোর উদ্যোগ নিন, যাতে মানুষ নামের কলঙ্ক জামাল মোল্লার সন্তানদের খুঁজে বের করা যায় এবং সামাজিকভাবে চরমভাবে ঘৃণা করা যায় কিংবা কোনো না কোনো শাস্তির মুখোমুখি করা যায়।