প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২২:২০
শিল্প, বিজ্ঞান তথা শিশুর মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সিলিং

জ্যঁ জ্যাক রুশোর উরংপড়ঁৎংব ড়হ ঃযব অৎঃং ধহফ ঝপরবহপবং একটি বিস্তৃত দার্শনিক প্রবন্ধ, যা ১৭৫০ সালে প্রকাশিত হয়। এটি ডিজঁ একাডেমির প্রশ্নের উত্তরে লেখা : “শিল্প ও বিজ্ঞানের পুনরুজ্জীবন কি নৈতিকতার বিশুদ্ধতায় অবদান রেখেছে?” রুশোর উত্তর ছিল না। তিনি যুক্তি দেন যে শিল্প ও বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষের নৈতিকতাকে উন্নত করেনি, বরং সমাজে দুর্নীতি, অসমতা ও কৃত্রিমতা বাড়িয়েছে। এই প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদÑশিল্প ও বিজ্ঞানের উপর প্রবন্ধ
প্রথম ভাগ
ভূমিকা
এটি একটি গৌরবময় প্রশ্ন, যা একটি গৌরবময় উত্তরের দাবি রাখে। আমি এখানে সত্যের সন্ধানে এসেছি, তোষামোদি করতে নয়। আমি জানি, আমার কথা অনেকের কাছে অপ্রিয় হবে, কিন্তু আমি সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে বাধ্য। শিল্প ও বিজ্ঞান কি আমাদের নৈতিকতাকে বিশুদ্ধ করেছে? আমি বলছি, না। বরং এগুলো আমাদের প্রকৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, আমাদের সরলতা ও সৎভাবকে ধ্বংস করেছে।
আমাদের সামনে একটি বিস্ময়কর দৃশ্য রয়েছে। ইউরোপে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়েছে, শিল্প ও বিজ্ঞান ফুলে উঠেছে। কিন্তু এই উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গুণগুলো কোথায় গেল? আমাদের সাহস, আমাদের সততা, আমাদের স্বাধীনতাÑএগুলো কি এই জ্ঞানের আলোয় আরও উজ্জ্বল হয়েছে, নাকি ম্লান হয়ে গেছে?
প্রকৃতি ও সভ্যতার বিপরীতমুখী চিত্র
যখন মানুষ প্রকৃতির কোলে ছিল, তখন তার জীবন ছিল সরল। সে শুধু বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পেছনে ছুটত। তার হৃদয়ে লোভ ছিল না, অহংকার ছিল না। সে তার প্রতিবেশীর সঙ্গে সমানভাবে বসবাস করত। কিন্তু শিল্প ও বিজ্ঞান এসে এই সরলতাকে ভেঙে দিয়েছে। আমরা এখন বিলাসিতার জন্য ছুটছি, আমাদের মন ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতায় ভরে গেছে। আমরা প্রকৃতির পরিবর্তে কৃত্রিম জিনিসের দাস হয়েছি।
প্রাচীনকালের দিকে তাকান। মিশরের মানুষরা যখন শিল্প ও জ্ঞানে উন্নতি করছিল, তখন তারা বিলাসিতায় ডুবে গিয়েছিল। পারস্যরা শিল্প গ্রহণ করার পর তাদের সাহস হারিয়েছিল। রোম যখন গ্রিসের শিল্প ও জ্ঞান গ্রহণ করল, তখন তার সততা ও শক্তি নষ্ট হয়ে গেল। এদিকে, স্পার্টার মতো জাতি, যারা শিল্প ও বিজ্ঞানকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তারা তাদের গুণ ও শৃঙ্খলার জন্য বিখ্যাত হয়েছিল।
জ্ঞানের বিপজ্জনক প্রভাব
জ্ঞান আমাদের মনে শান্তি আনে না। এটি আমাদের প্রশ্নের পর প্রশ্নে জড়িয়ে ফেলে। আমরা যত বেশি জানতে চাই, ততই আমরা আমাদের স্বাভাবিক অনুভূতি থেকে দূরে সরে যাই। দার্শনিকরা আমাদের বিভ্রান্ত করেন, কবিরা আমাদের কল্পনায় ডুবিয়ে দেন, আর শিল্পীরা আমাদের বিলাসিতার প্রতি আকৃষ্ট করেন। ফলে আমরা আমাদের আসল পরিচয় হারিয়ে ফেলি।