প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৭
এমন মৃত্যুই বলে দেয় সঁাতার শেখার প্রয়োজনীয়তা

প্রায়শই শোনা যায় এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর খবর। যে খবর সাধারণ খবর হিসেবে খুব গুরুত্ব পায় না। কিন্তু গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠসহ স্থানীয় সকল দৈনিকে পানিতে ডুবে মা ও ছেলের মৃত্যুর খবর সাধারণ খবর হিসেবে নয়, শীর্ষ খবর হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। এর কারণ, এবার শিশু নয়, শিশুর মা সহ পানিতে ডু্বে মারা গেছে। কেনো মারা গেলো? জবাব একটাই-সঁাতার না জানার কারণে।
চঁাদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে লিখা হয়েছে, চঁাদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নে পুকুরের পানিতে ডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ( ৯ এপ্রিল ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১ টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতাল ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামে হাওলাদার বাড়ি অর্থাৎ বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন খাদিজা আক্তার (৩০) ও তার দুই সন্তান। সকাল ১০টার দিকে দুই ছেলেকে নিয়ে গোসল করতে নামেন বাড়ির পুকুরে। দুই ছেলে ও মা কেউই সঁাতার জানতো না। এর মধ্যে বড়ো ছেলে ও ছোট ছেলে পানিতে তলিয়ে গেলে মা বড়ো ছেলেকে উদ্ধার করে। ছোট ছেলে আবু বকর (৭)-এর জন্যে পানিতে ডুব দেয়ার পরে দুজনেই পানিতে তলিয়ে যায়। পরে বাড়ির লোকজন তাদেরকে উদ্ধার করে চঁাদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত খাদিজা আক্তারের বোনের মেয়ে কুলসুমা জানান, খাদিজা মঙ্গলবার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তাদের মূল বাড়ি ফরিদপুর। স্বামী লোকমান চটপটি ব্যবসা করার সুবাদে ঢাকায় থাকেন। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। বুধবারই তাদের ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিলো। চান্দ্রা চৌরাস্তা সংলগ্ন বাখরপুর গ্রামে এক ছেলেকে বঁাচাতে গিয়ে মা ও ছেলের মৃত্যুর এই ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক হওয়ায় এলাকায় স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম বইছে।
সঁাতার না জানার কারণে বাখরপুরে মা ও তার দুছেলেরই মৃত্যু হতে পারতো। মা বড়ো ছেলেকে ভাগ্যক্রমে বঁাচাতে পারলেও ছোটজনকে বঁাচাতে গিয়ে দুজনেই জীবন দিলেন, যাতে আছে মর্মান্তিকতা ও চরম শোক। কিন্তু এর বিপরীতে কথা থেকেই যায়। মেঘনার তীরবর্তী জনপদে বেড়ে ওঠা এই মাকে তার শৈশবে তার বাবা-মা সঁাতার শিখালে পরিণত বয়সে শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত নিজ বাপের বাড়িতে বেড়াতে এসে তাকে শিশু সন্তান সহ মর্মান্তিক পরিণতি বরণ করতে হতো না। জীবন বঁাচাতে সঁাতার শেখার প্রয়োজনীয়তার ওপর তাগিদটা একসময় জোরদার থাকলেও এখন আর সেটা নেই। এটাকে গৌণ বিষয় হিসেবে ভাবা হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারে জীবনের প্রয়োজনে এটাকে মুখ্য হিসেবে ভাবার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে, যেটা বাখরপুরের খাদিজা তার ছেলেসহ পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়ে জোরালোভাবেই যেন বলে গেলেন। এই বলাটা কানে ঢুকিয়ে তাকে কাজে লাগাতে পরিবার প্রধানদের মাথা ও মনের সমন্বয় দরকার। আমাদের পাঠ্য পুস্তকেও সঁাতার শেখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে স্থান পাওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।