বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৮

তরুণদের মেধার শক্তিকে কাজে লাগালে দেশ এগিয়ে যাবে ---- সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাছান আলী

আন্তর্জাতিক যুব দিবসে সনাক-টিআইবির র‌্যালি, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি ॥
আন্তর্জাতিক যুব দিবসে সনাক-টিআইবির র‌্যালি, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ
সনাক-টিআইবি’র আয়োজনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে র‌্যালি। পাশে অতিথিদের সাথে কুইজ প্রতিযোগিতায় পুরস্কার প্রাপ্তরা।

'টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে চাই যুববান্ধব রাষ্ট্রব্যবস্থা' এ প্রতিপাদ্যের ওপর ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে সনাক-টিআইবি, চাঁদপুর-এর আয়োজনে র‌্যালি, কুইজ প্রতিযোগিতা, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাবুরহাট হাইস্কুল এন্ড কলেজে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক যুব দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে এবং তরুণদের দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন বিষয়ে ধারণা প্রদানের মাধ্যমে এই আন্দোলনের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির জন্যে ছিলো সনাক-টিআইবি’র এ আয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন তথা জনমানুষের মুক্তি ও অধিকার আদায়ের প্রতিটি পরতে তরুণরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ তারুণ্যের নেতৃত্বে পরিচালিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কর্তৃত্ববাদের পতন। যা শুধু জাতীয় নয়, বৈশ্বিক পর্যায়েও এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিমূলক ও সুশাসিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যুবসমাজের সম্পৃক্ততা নিশ্চিতই হোক আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২৫-এর অঙ্গীকার।

সনাক সভাপতি মো. আলমগীর পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, চাঁদপুরের উপ-পরিচালক সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ হাছান আলী বলেন, তরুণরাই হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। এ তরুণরাই প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। আর আমাদের যুবশক্তি প্রযুক্তি নির্ভর, এদেরকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের হাতের মুঠোয় পুরো পৃথিবী। এই পৃথিবী তোমাদেরকে জয় করতেই হবে। আমাদের দেশে প্রতিটি আন্দোলনে তরুণদের ইতিহাস অনেক লম্বা। তিনি বলেন, আমরা কখনো চিন্তাই করতে পারি নি আমাদের দেশের নারীরা আজ ফুটবল ও ক্রিকেটে অভাবণীয় সাফল্য অর্জন করবে। এছাড়া আমাদের জীবনমানের অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের তরুণদের মেধার অভাবনীয় শক্তি রয়েছে। সেই শক্তি তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণরা এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে দেশ। তিনি প্রযুক্তিকে ভালো কাজে ব্যবহার করার আহ্বান জানান। তিনি সনাক-টিআইবি’র এমন সুন্দর আয়োজনে ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে সনাক সভাপতি মো. আলমগীর পাটওয়ারী বলেন, যুবকদের দৃঢ়তায় এগিয়ে যাবে আমাদের এই দেশ। দেশের প্রতিটা আন্দোলনে যুবকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের আগে নিজেদের তৈরি করতে হবে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় অনেক প্রশিক্ষণ রয়েছে। সে প্রশিক্ষণগুলো তোমাদেরকে নিতে হবে। তিনি তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি তারুণ্যের শক্তিকে জাতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের আহ্বান জানান। তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

ইয়েস সাবেক দলনেতা খায়রুল আলম জনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সনাকের সাবেক সভাপতি ও সদস্য অধ্যক্ষ মো. মোশারেফ হোসেন। দিবসের ওপর ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সনাক সদস্য ও পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হাবীবুর রহমান পাটওয়ারী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. ফখরুল ইসলাম, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মো. সফিকুল ইসলাম ও টিআইবি’র এরিয়া কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদ রানা। এছাড়া অনুষ্ঠানে বাবুরহাট হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং সনাক-চাঁদপুরের ইয়েস গ্রুপের সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

যুব জনগোষ্ঠীকে জাতীয় অর্জনের মূল চালিকাশক্তি বিবেচনা করে দিবসটি উপলক্ষে টিআইবি ও এর তরুণ অংশীজনরা নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ উত্থাপন করছে :

বৈশ্বিক অগ্রগতি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট যুব কৌশল প্রণয়ন করতে হবে এবং স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে;

তরুণদের স্থানীয় উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে (যেমন- ওয়ার্ড কমিটি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিনিধি হিসেবে তরুণদের অন্তর্ভুক্তি); ইয়ূথ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠন করে স্থানীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;

রাজনৈতিক দলের ছাত্র ও যুব শাখার দৃষ্টিভঙ্গি ও কাঠামোগত মানসিকতা পরিবর্তন করে তরুণদের বাস্তব প্রত্যাশা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নেতৃত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ের কমিটিগুলোতে তরুণদের যথাযথ সংখ্যায় ও অর্থবহ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে;

রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও নীতিগত এজেন্ডায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি, লৈঙ্গিক সমতা, মাদক প্রতিরোধ ইত্যাদি যুবকেন্দ্রিক অগ্রাধিকারপূর্ণ ইস্যু অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রান্তিক, গ্রামীণ, সংখ্যালঘু ও বৈচিত্র্যময় পরিচয় বহনকারীদের যুবসমাজের অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিনিধিত্বকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে;

স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও তরুণদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে। তরুণদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তুলতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দলগুলোর উপস্থিতি ও জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী তরুণ জনগোষ্ঠীকে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তুলতে হবে; আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে;

জাতিসংঘের সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে; স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যে-সব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে;

তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা বিকাশের জন্যে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন-সবুজ দক্ষতানির্ভর আউটসোর্সিং ফ্রিল্যান্সিং) জন্যে কর্মহীন তরুণ ও নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়