বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪০

শনিবার শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি

চাঁদপুরে ব্যাপক আয়োজন বের হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

বিমল চৌধুরী
চাঁদপুরে ব্যাপক আয়োজন বের হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

শনিবার (১৬ আগস্ট ২০২৫) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আরাধ্য পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথি। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলায় বসবাসরত সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ ব্যাপক ধর্মীয় উৎসবের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে চাঁদপুর জেলা শহরসহ হাজীগঞ্জ, কচুয়া, মতলব, শাহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ ও হাইমচরে ব্যাপক আয়োজনে পৌরাণিক সাজে সুসজ্জিত হয়ে বের করা হবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী উদার মনের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের একাংশও অংশ নেবে বলে আয়োজকগণ মনে করেন। তাদের এই বিশাল ধর্মীয় কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ইতোমধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ আয়োজকদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছেন। প্রশাসনের এ ধরনের আয়োজনে আয়োজকদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। তারা ব্যাপক আয়োজনেই জন্মতিথি উদযাপনে বদ্ধপরিকর।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উদযাপনে চাঁদপুর জেলার মধ্যে চাঁদপুর শহর ও হাজীগঞ্জের আয়োজনেই ব্যাপকতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। তুলনামূলকভাবে চাঁদপুর জেলা শহরে অনুষ্ঠিত পুরাণবাজার জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আয়োজনে একটু ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে এ বছর পুরাণবাজার দাসপাড়া সার্বজনীন শিবমন্দির জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের আয়োজনেও ব্যাপকতা রয়েছে বলে জানা যায়। আয়োজনের সৌন্দর্যে ব্যাপকতা দেখা যাবে চাঁদপুর ইসকন মন্দির, নতুনবাজার গোপাল জিউড় আখড়া, পুরাণবাজার দাসপাড়া কালী মন্দির, নতুন বাজার, পুরাণবাজার হরিজন কলোনী, পুরাণবাজার রামঠাকুর বাড়ি, পুরাণবাজার ঘোষপাড়া, পুরাণবাজার পালপাড়া হরি মন্দিরসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন মন্দির থেকে বের হওয়া বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায়। তবে সকল মন্দির থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের না হলেও চাঁদপুর গৌর নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর আখড়া, পুরাণবাজার শ্রী শ্রী রাধা মুরারী মোহন জিউড় মন্দির, পুরাণবাজার সার্বজনীন শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, নতুনবাজার কালীবাড়ি মন্দিরসহ অধিকাংশ মন্দিরেই শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপন হয় ব্যাপকতা নিয়ে। এছাড়া প্রতিটি সনাতন ধর্মাবলম্বী নর-নারীগণ উপবাস থেকে পরম ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে তাদের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উৎসব উদযাপন করে থাকেন তাদের গৃহ মাঝে। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরাণবাজার হরিসভা মন্দির কমপ্লেক্স থেকে বের হবে পুরাণবাজার জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি নতুন বাজার, পুরাণবাজার সেতু পার হওয়ার প্রাক্কালেই শোভাযাত্রার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুরাণবাজারের অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শোভাযাত্রাগুলো তাদের সাথে একত্রিত হয়ে নতুনবাজার গোপাল জিউড় আখড়ার উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাবে। সেখানে জড়ো হবে শহরের অন্যান্য স্থান থেকে আগত শোভাযাত্রায় অংশ নেয়া ভক্তবৃন্দ। গোপাল আখড়া থেকেই সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অংশ নেয়া শোভাযাত্রাটি একত্রিত হয়ে ছায়াবাণী রোড ধরে, চিত্রলেখার মোড় হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম শেষে যার যার স্থানে গিয়ে শেষ হবে। ধারণা করা হচ্ছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার ব্যাপকতা রয়েছে অনেক বেশি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শোভাযাত্রা সম্পন্নে চাঁদপুর জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, দ্বাপর যুগের ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমী তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল অত্যাচারী মথুরাধিরাজ কংসের কারাগারে। যিনি নিজ পিতাকে কারারুদ্ধ করে অন্যায়ভাবে রাজকার্য গ্রহণ করেন। মহাপাপিষ্ঠ দুরাচারী কংস দৈববাণীতে নিজ ভগ্নির গর্ভে ভূমিষ্ঠ সন্তান দ্বারা নিহত হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে ভগ্নি দেবকীকে ও তার স্বামী বাসুদেবকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায়ই তাদের ৭ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং নরাধম কংস জন্ম নেয়া শিশুদেরকে এক এক করে কারাগারেই হত্যা করেন। যা শুধু হৃদয় বিদারকই নয়, প্রচণ্ড অমানবিক কাজ হলেও কংস তাতে বিচলিত ছিলেন না। দেবকীর অষ্টম গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুই ছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। যাঁর জন্ম হওয়ার সাথে সাথে কারাগারে ছুটে গিয়েছিলেন দুরাচারী কংস। কিন্তু কংস কৃষ্ণকে হত্যা করতে পারেননি। তাঁর জন্ম হওয়ার সাথে সাথেই কারাগারে ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা। কারাগারের সকল রক্ষী ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। দেখা দেয় প্রলয়ঙ্করী ঝড় তুফান, শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই জগতের ত্রাণকর্তা বালকরূপী কৃষ্ণকে কারাগার থেকে সন্তর্পণে যমুনা নদী পার হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পালক পিতা নন্দ মহারাজ ও মা যশোদাদেবীর গৃহে। সেখানেই পালক পিতা, মাতার গৃহে বড়ো হতে থাকেন জগৎ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। আর এক এক করে জন্ম দিতে থাকে বহু অলৌকিক ঘটনা। যা দেখে বা শুনে সকলের মনে উদয় হতে থাকে এই বালক কোনো সাধারণ বালক নয়। ধীরে ধীরে সকলেই বুঝতে পারেন এই বালকই পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন সহ জগৎ রক্ষায় আবির্ভূত হয়েছেন কিন্তু অত্যাচারী কংস তা বুঝতে না পেরে তাকে হত্যার জন্যে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। কোনো ষড়যন্ত্রই বালকরূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। অবশেষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুরাচারী কংসকে বধ করে কারাগারে নির্যাতিত পিতা বাসুদেব ও মাতা দেবকীকে উদ্ধারসহ বহু অত্যাচারীকে নিধন করেন ও পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়