প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪, ০০:০০
জানাজার পূর্বে বক্তব্য বাড়ছে, শোকসভা কমছে

ইদানীং একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিখ্যাত ব্যক্তিদের মৃত্যুর পর যে জানাজা হয়, তাতে নামাজের পূর্বে বক্তার সংখ্যা থাকে অনেক। চোখে স্নানগ্লাস লাগিয়ে কিছু নেতার জানাজায় অংশগ্রহণ ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মুসলমান মৃত ব্যক্তির জানাজায় যতো মুসলমান অংশ নিবে, তারা প্রত্যেকে ওহুদ পরিমাণ পাহাড়ের সওয়াব পাবে। এমন সওয়াবের আশায় প্রত্যেক মুসলমান জানাজায় অংশ নেন--এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। কেননা অংশগ্রহণকারীদের অনেকে আল্লাহকে খুশি করে সওয়াব কামানোর চেয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনকে খুশি করার কথা বেশি ভাবেন। অনেকে ছবি তোলেন, সেলফি তোলেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। জানাজার নামাজে শোকাচ্ছন্ন থাকার চেয়ে অনেকে বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিচিতজনের সাক্ষাৎ পেয়ে হাসি-তামাশায়ও লিপ্ত হন।
জানাজার নামাজের পূর্বে বক্তৃতা পর্বে যিনি সঞ্চালক থাকেন, তাকে বক্তাদের সামাজিক মর্যাদা, রাজনৈতিক অবস্থান, পেশাগত সরকারি-বেসরকারি পদবী, ব্যবসায়িক অবস্থাসহ নানাদিক বিবেচনা করে অর্থাৎ প্রোটোকল ম্যানটেন করে আগে/পরে নাম ঘোষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় হলে সংক্ষুব্ধ বক্তা সঞ্চালকের ওপর চড়াও হন। বিশেষ করে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা বা অন্য কোনো ব্যক্তি এ দৃষ্টিকটু কাজে থাকেন এগিয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সঞ্চালককে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়, ক্ষমা চাইতে হয়।
ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তিকে যথাযথভাবে গোসল করিয়ে কাফন পরিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব জানাজার নামাজের পর কবরে দাফন করা উত্তম। কিন্তু এই উত্তম কাজটি সম্পাদনে নানা কারণে বিলম্ব ঘটে। এর মধ্যে জানাজার নামাজের পূর্বে লাশ দেখা, দীর্ঘ বক্তৃতা পর্ব এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জ্ঞাপন উল্লেখযোগ্য কারণ বটে।
জানাজার নামাজের পূর্বে বক্তৃতা পর্ব দীর্ঘায়িত না করে কুলখানি/ চেহলাম উপলক্ষে কিংবা পৃথকভাবে শোকসভা আয়োজন করাটা যথার্থ বলে সুধীজন মনে করেন। কিন্তু শোকসভায় বক্তার চেয়ে শ্রোতার সংখ্যা খুব বেশি হয় না কিংবা সমাবেশ বড়ো করা অনেক কষ্টকর বলে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হন না। সেজন্যে জানাজার পূর্বে বক্তৃতা পর্ব দীর্ঘায়িত করে অনেক স্থানে পরোক্ষভাবে সেই পর্বটাকে শোকসভায় রূপান্তরিত করা হয়। এতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হওয়া শ্রোতাদের উচ্চবাচ্য, এমনকি গালমন্দও করতে দেখা যায়। এতে জানাজার পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হয়। মসজিদগুলোতে শুক্রবার আরবিতে খুতবা দেয়ার আগে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক বা মাতৃভাষায় ইমাম/খতিব বক্তব্য রাখেন। ওয়াজ মাহফিলগুলোতে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এক আলোচক তার অপছন্দের বা বিপরীত তরিকার আলোচকের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করেন। কিন্তু কোনো মুসলমান মৃত্যুবরণ করলে তার কাফন, জানাজা ও দাফনের সঠিকতা কেমন হতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা মসজিদ ও ওয়াজ মাহফিলে যেমন খুব একটা হয় না, তেমনি জানাজার পূর্বেও বিব্রত হবার ভয়ে কোনো ইমাম করতে চান না বললেই চলে। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।