প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
একের পর এক কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ঙ্কর দৌরাত্ম্য!

কিশোর গ্যাং এখন দেশের যে কোনো এলাকার জন্যে বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। অনেক বড়ো অপরাধ করেও কিশোররা আইনের ফাঁকে মুচলেকা দিয়ে পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পায় বলে ইদানীং এদের কার্যকর (!) ব্যবহার সচেতন ও পর্যবেক্ষকদের মধ্যে অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের যেসব নদীতে জাটকা রক্ষায় অভয়াশ্রম এখন চলমান, সেসব নদীতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব জেলে মাছ ধরছে, তারা সহযোগী হিসেবে কিশোরদের ব্যবহার করছে। পরিণামে ধরা পড়লে প্রাপ্ত বয়স্ক জেলেরা জেল-জরিমানার মুখোমুখি হলেও কিশোররা ছাড়া পায় নিতান্তই মুচলেকা দিয়ে। বিদ্যমান আইনের ‘সদয় সুযোগ’কে কাজে লাগিয়ে কিশোরদের অনেকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে 'কিশোর গ্যাং'য়ে এবং দেশের সর্বত্র যাচ্ছেতাই দৌরাত্ম্য প্রদর্শন করে চলছে। কোথাও প্রতিহত হচ্ছে কালেভদ্রে এবং আর অন্য সব জায়গায় থেকে যাচ্ছে অপ্রতিহত। কিশোর গ্যাংকে নিয়ে ‘যমের ভয়ে’ আচ্ছন্ন সকলে! ফলে একের পর এক তাদের ভয়ঙ্কর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে অনেক জনপদ।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠে পরপর দুদিন (শনি ও রোববার) প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম হয়েছে-‘পুরাণবাজারে ফজলা চোরাসহ কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী’ এবং ‘ফরিদগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনায় ফিল্মি স্টাইলে কিশোর গ্যাংয়ের তাণ্ডব’। প্রথম সংবাদটিতে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিংবা ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কীরূপ তাণ্ডব চালায় এবং এ ব্যাপারে পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সহিষ্ণুতা(!) ও নীরবতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সচেতন মানুষদের নিশ্চুপ থাকার বিষয়টি পরোক্ষভাবে ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয় সংবাদটিতে একই বাড়ির দুবাসিন্দার বিরোধ ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্য গ্রামের কিশোর গ্যাং কতোটা ভয়ঙ্করভাবে ব্যবহৃত হয়েছে সেটি তুলে ধরা হয়েছে। এ সংবাদে পৌর মেয়রের উদ্বেগ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণে থানা পুলিশের প্রতি অনুরোধ ছাড়াও জনৈক মোজাম্মেল হোসেন কর্তৃক কিশোর গ্যাংকে প্রতিহত করা ও তিনটি মোটরসাইকেল রেখে তাদের পালিয়ে যাওয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেটা নিঃসন্দেহে আশার আলো দেখিয়েছে।
আমাদের সমাজ-বাস্তবতায় কিশোর গ্যাং, ইভটিজার, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ইত্যাদির অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। তাই বলে এরা সর্বত্র সবসময় অপ্রতিহত থাকবে সেটা মেনে নেয়া যায় না। ফরিদগঞ্জের মোজাম্মেল এবং হাইমচরের রাসেল গাজী (যিনি কিশোর গ্যাংকে তার স্কুল ব্যাগে দেশীয় অস্ত্রসহ ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছেন)-এর মতো সাহসিকতা নিয়ে আরো অনেককে আরো অনেক জায়গায় সাহসিকতা নিয়ে ব্যক্তিগত কিংবা সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্রদান এবং কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে নানা উদ্যোগগ্রহণ বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি।