প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
নিঃসন্দেহে তিনি করিতকর্মা

গণমাধ্যমে কোনো কিছু প্রকাশ পেলে, বিশেষ করে মুদ্রিত সংস্করণে ছাপা হলে আগের ন্যায় সাড়া পড়ে না বলে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে হতাশা আছে। এই হতাশা যে ঠিক নয় সেটি রোববার চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে প্রমাণিত হলো। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে 'চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের দিন দখলমুক্ত হলো বাকিলার সেই যাত্রী ছাউনি'। সংবাদটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, যাত্রীদের বসার জন্যে তৈরি করা হয়েছে যে যাত্রী ছাউনি, সেটি প্রকাশ্যে সার্টার লাগিয়ে হয়ে গেলো দোকানঘর। সেই দোকানঘরের সার্টার খুলে ফের যাত্রী ছাউনিতে রূপান্তর করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ রোববার ২১ এপ্রিল দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ছবিসহ প্রকাশিত হয়। চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের দিনই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল। রোববার বিকেলে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। খুলে নেয়া সার্টারগুলো ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখা হয়েছে। উচ্ছেদ চলাকালে আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন, ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন গাজীসহ কয়েকশ’ স্থানীয় লোকজন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল জানান, এটা উচ্ছেদ অভিযান। একটা যাত্রী ছাউনি এভাবে দখল হয়ে গেলে তো হবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাজীগঞ্জের বাকিলা পশ্চিম বাজারের বড় যাত্রী ছাউনিতে সার্টার লাগিয়ে দোকানঘর তৈরি করে দখলে নেয় একটি অংশ। ৫ রুমের ৪টিতে চলমান দোকানঘর এবং মাঝের একটি রুমকে যাত্রী ছাউনি করা আছে। এমনকি যাত্রীদের বিশ্রামের জন্যে তিন দিকে পাকা করে তাতে টাইলস বসানো রয়েছে। এ রুমটির ফ্লোর টাইলস্ করাসহ পিছনে একটি বড় গ্রিলের জানালা রয়েছে। রুমটির সামনে সার্টার বক্সের উপরে বড় করে যাত্রী ছাউনি লিখা রয়েছে। এই যাত্রী ছাউনির রুমটির সামনে গত শুক্রবার দুই পার্টের সার্টারসহ সার্টার বক্স লাগিয়ে দোকানঘর তৈরি করে তাতে তালা মেরে রাখা হয়। দুটো যাত্রী ছাউনির জমি সড়ক বিভাগ চাঁদপুরের আর ছাউনিগুলোর নির্মাণকারী ও অর্থায়নকারী জেলা পরিষদ চাঁদপুর। যাত্রী ছাউনির ভাড়াটিয়া স্বর্ণকার দীপক, বিকাশ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন কালু ও সেলুন ব্যবসায়ী কার্তিক শীল বলেন, যে মিস্ত্রী কাজ করেছে তার কাছে অনেকে জানতে চেয়েছি কে বা কারা কাজ করছে। কিন্তু মিস্ত্রী নজরুল কোনো উত্তর দেননি। ‘যাত্রীদের জন্যে নির্মিত যাত্রী ছাউনি দিনের বেলা হয়ে গেলো দোকানঘর। এটা কিভাবে সম্ভব বা কোন্ নিয়মে হয়েছে’ এমন বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় জেলা পরিষদ চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সদস্য আলহাজ্ব বিল্লাল হোসেনের সাথে। এ সময় তিনি বলেন, বাকিলার যাত্রী ছাউনিতে সার্টার লাগানো হয়েছে এমন বিষয়টির সত্যতা জানতে শুক্রবার বিকেলে আমি বাকিলা যাই এবং গিয়ে এর সত্যতা পাই। তবে এটি কে বা কারা করেছে তার খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে সওজ চাঁদপুরের এসএই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এমন কিছু হলে আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবো। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জানান, যাত্রী ছাউনিতে দোকান করার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি আমরা যাত্রী ছাউনিগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছি। কেউ যাত্রী ছাউনি দখলে গেলে তা ভেঙ্গে আমরা মেরামতের কাজ করবো।
বাকিলার যাত্রী ছাউনিটি যদি পরিত্যক্ত ঘোষিত ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকতো, আর সেটিকে কোনো ব্যক্তি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করে দোকান বানাতো, তাহলে সেটি নিয়ে নেতিবাচকতা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়তো না। কিন্তু চলমান ও ব্যবহারযোগ্য যাত্রী ছাউনিকে প্রকাশ্য দিবালোকে দখল করে দোকানঘর বানানোর প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে দুর্বৃত্তায়নের নিকৃষ্ট নমুনা, অনেক দৃষ্টিকটু ও আপত্তিকর। এর সাথে সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাত ব্যক্তি তার দুর্বৃত্তায়ন দ্বারা জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি কার্যত বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। আর এটির সমুচিত জবাব দিতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রধান কর্তাব্যক্তি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মোটেও বসে থাকেননি। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদ দেখেই কালবিলম্ব না করে নিয়েছেন কার্যকর ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে তিনি তাঁর করিতকর্মা রূপটাই জনসমক্ষে তুলে ধরলেন, যাতে প্রশাসনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এজন্যে তাঁকে সাধুবাদ, ধন্যবাদ সহ সন্তোষসূচক অনেক কিছুই জানাতে হয়। তাঁকে তীক্ষè দায়িত্বসচেতন বললে অত্যুক্তি হবে বলে মনে করি না।