প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
আর মাত্র ৩দিন পরই ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শুরু হতে যাচ্ছে ২০তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল ও প্রথমবারের মতো নারী ফুটবলারদের নিয়ে আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩। টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন ও খেলাগুলোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির সম্পাদক আলহাজ্ব শাহির হোসেন পাটওয়ারী।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে এ দুটি টুর্নামেন্টের জন্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারিখ নির্ধারণ করার কথা ছিলো। সেটি না হওয়ায় পরবর্তীতে ১২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। প্রথমে টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করার কথা ছিলো প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার। অবশেষে শিক্ষামন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই দুটি টুর্নামেন্টের উদ্বোধন নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ তারিখ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জেলা পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। সেই খেলার পুরস্কার বিতরণের পূর্বে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের আলোচনা শেষে খেলার উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। তবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল (পুরুষ) ও আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট একই দিনে উদ্বোধন করা হলেও জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবলের খেলা শুরু হওয়ার পর দিন অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রমীলা ফুটবলের খেলাগুলো শুরু হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির ব্যবস্থাপনায় ২০তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে দুপুর আড়াইটায় খেলবে জেলার শক্তিশালী উপজেলা দল ফরিদগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা। ১৯তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ফরিদগঞ্জ উপজেলা এবং রানার্সআপ হয়েছিলো চাঁদপুর সদর। গত কয়েকবছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এক বছর পর পর কিংবা অনেকদিন পর জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলাগুলো শুরু হলেও জেলা সদরের দল তেমন কোনো শক্তিশালী দল নিয়ে মাঠে নামতে পারছে না। অপরদিকে বর্তমানে ফুটবল ও ক্রিকেট নামের জনপ্রিয় দুটি খেলাতেই ফরিদগঞ্জ উপজেলা শক্তিশালী দল নিয়ে জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নিচ্ছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলারই সন্তান রেজা বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং বর্তমানে জাতীয় ফুটবলার রাফিও ফরিদগঞ্জ উপজেলার সন্তান। এছাড়া মতলব উত্তর উপজেলার দলটি বাছাইকৃত ফুটবলার নিয়েই খেলতে নামে মাঠে।
জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল ও প্রমীলা ফুটবলে অংশ নেবে জেলার ৮ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল দল। এবারের জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপের চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকা ও রানার্সআপ দলকে ২৫ হাজার টাকাসহ ট্রফি দেয়া হবে। পাশাপাশি প্রমীলা দলের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের জন্যে রয়েছে নগদ অর্থসহ পুরস্কার। প্রতিটি উপজেলা দলে ৫ জন বিদেশি খেলোয়াড় ও বাকি ৬ জন স্থানীয় খেলোয়াড় খেলতে পারবেন। বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা সহ বিভিন্ন দেশের যারা বর্তমানে ঢাকায় ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলছেন তারাই জেলা প্রশাসক কাপে বিভিন্ন দলের হয়ে খেলতে পারবেন। আর স্থানীয় ফুটবলাররা কোটা অনুযায়ী টুর্নামেন্টে বিভিন্ন উপজেলা দলের হয়ে খেলতে পারবেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এক উপজেলার খেলোয়াড় অন্য উপজেলায় খেলতে পারলেও প্রমীলা ফুটবলারদের বেলায় নিষেধ রয়েছে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে এই ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে গত মাসে চাঁদপুর সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। বক্তব্য রাখেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বশির আহমেদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মোসা, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল, জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জেলা ক্রীড়া অফিসার তারিকুল ইসলাম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সদস্য সুভাষ চন্দ্র রায়, ফুটবল উপ-কমিটির সম্পাদক শাহির পাটোয়ারী, ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী নোমান প্রমুখ। সভায় সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সুন্দরভাবে জেলা পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে জেলা ফুটবল দলকে অংশগ্রহণ করানোর লক্ষ্য নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির সভাপতি এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি পুলিশ সুপারের সাথে ২১ সেপ্টেম্বর মতবিনিময়ে অংশ নেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির নেতৃবৃন্দ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবুর সাথে দুটি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন উপলক্ষে এই প্রতিবেদককের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, টুর্নামেন্টের উদ্বোধনের জন্যে যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে, আশা করি ওই তারিখেই খেলার উদ্বোধন হবে। আমাদের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু আপা উদ্বোধনের তারিখে তিনি নিজে এসে উদ্বোধন করবেন বলে আমাদেরকে সম্মতি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল ও প্রমীলা ফুটবল দলে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে ফিক্শ্চারও চূড়ান্ত করা হয়েছে। টুর্নামেন্ট উদ্বোধনের পরই ফিক্শ্চারের তারিখ অনুযায়ী খেলাগুলো আমরা পরিচালনা করবো। আর প্রথমবারের মতো জেলাতে প্রমীলা ফুটবলের আয়োজন করা হয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে। আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবলে প্রত্যেক উপজেলা থেকে নারী ফুটবলারদের নিয়ে দল গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। এবারের জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল ও আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবলের খেলাগুলো ক্রীড়ামোদী দর্শকরা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করছি। টুর্নামেন্টের খেলাগুলো আমরা যেনো সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারি, সেজন্যে সকলের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করছি।
জেলা ক্রীড়া অফিসার তারিকুল ইসলামের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান সরকার ক্রীড়া বান্ধব সরকার, এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মাদক থেকে দূরে রাখা, জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখা, কিশোর গ্যাংয়ের মতো খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখা। সেই কাজকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা ক্রীড়া অফিস ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সবসময় বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা ও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যাচ্ছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুরু করা হচ্ছে ২০তম জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ। এ বছরের জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ বিগত সকল বছরের আয়োজনকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ ইতিমধ্যে প্রতিটি উপজেলা তাদের দল গঠন করে প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রতিটি উপজেলায় পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড় থাকায় খেলাটি আরও প্রাণবন্ত হবে। স্থানীয় খেলোয়াড়দের ও বিদেশী খেলোয়াড়ের সমন্বয়ে একটি জাঁকজমকপূর্ণ আসরের আয়োজন হতে যাচ্ছে। সকল উপজেলার লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তোলা। জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা ক্রীড়া অফিস এ টুনার্মেন্ট সফল করার লক্ষ্যে সব উপ-কমিটির সাথে আলোচনা করে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এই বছর প্রথম বারের মতো আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবলের আয়োজন করা হয়েছে। কারণ চাঁদপুর জেলার প্রমীলা ফুটবল অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বর্তমানে জেলার একজন বালিকা মহিলা ফুটবল দলে রয়েছে, দুজন বালিকা বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্যাম্পে রয়েছে। বাংলাদেশ প্রমীলা ফুটবল অনেক অগ্রসরমান। কারণ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। চাঁদপুর জেলার ভালো প্রমীলা ফুটবল খেলোয়াড় রয়েছে, স্থানীয় ভালো খেলায়াড় ও বিদেশি খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে প্রতিটি দলের কম্বিনেশন ভালো হবে। যার ফলস্বরূপ প্রতিটি উপজেলার দলগুলো অনেক শক্তিশালী হবে। এ ধরনের বড় আসরে খেলার মাধ্যমে জেলায় প্রমীলা ফুটবলাররা ভবিষ্যতে বড় বড় টুনার্মেন্টে ভালো করবে। আমরা আশা করছি, এই জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ও আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবলের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে আবারো ফুটবলের জাগরণ সৃষ্টি হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির সম্পাদক ও ক্রীড়া সংগঠক আলহাজ্ব শাহির হোসেন পাটওয়ারীর সাথে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা প্রমীলা ফুটবল ও ২০তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আশা করছি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যতীত কোনো অবস্থাতেই টুর্নামেন্টের খেলা বন্ধ থাকবে না । খেলার জন্যে মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। একদিকে মাঠের সকল কিছু ঠিক করা হলেও পরর্বতীতে আবার ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাঠে পানি জমে যাচ্ছে। তবে আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে, এই টুর্নামেন্টের খেলাগুলো চলাকালীন ক্রীড়ামোদী দর্শকরা যেনো মাঠে এসে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখেন এবং খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহ প্রদান করেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সদস্য ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, ক্রীড়া সংগঠক ও সাংবাদিক নুরুন্নবী নোমানের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি জানান, টুর্নামেন্টে খেলার জন্যে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ইতিমধ্যে দলের খেলোয়াড়দের সাথে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় ও বহিরাগত ভালো খেলোয়াড় নিয়ে এবার আমরা মাঠে নামবো দলকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্যে। দলের সকল খেলোয়াড়ের মধ্যে অনেক আন্তরিকতা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ভালো প্রমীলা দল গঠন করার জন্যে। আশা করি, যেভাবে দলগঠনের প্রস্তুতি নিয়েছি এবং উপজেলার সকল পর্যায়ের সকলের সহযোগিতা পাচ্ছি, এবারো আমাদের উপজেলা জেলা পর্যায়ের শিরোপা জয়লাভ করবে এবং দর্শকরা ফরিদগঞ্জের খেলা দেখে আনন্দ পাবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে নিয়মিত খেলা দেখতে আসা বেশ ক'জন ক্রীড়ামোদী দর্শকের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তারা জানান, অনেক ঢাক ঢোল পিটিয়ে জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। কিন্তু খেলা দেখতে যখন আমরা মাঠে আসি, তখন দেখতে পাই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলের খেলোয়াড়দের কারো ড্রেস ঠিকমতো থাকলেও মোজা ও শর্টপেন্ট এক কালারের থাকে না। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ ও মতলব দক্ষিণের খেলার সময় দেখা যায় যে, বেশ ক'টি ফুটবল টুর্নামেন্টে তারা ঠিকমতো দলগঠন করে মাঠেও নামেনি এবং তাদের জার্সি ও খেলার অন্যান্য জিনিস ঠিকমতো না নিয়েই মাঠে আসে। এবার যেনো এ উপজেলাগুলো এমন ধরনের কোনো কিছুর পুনরাবৃত্তি না ঘটায় আমরা ক্রীড়ামোদী দর্শকরা সেটাই আশা করছি।
টুর্নামেন্ট উদ্বোধন ও খেলা নিয়ে ক্রীড়া সংগঠক ক'জনের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তারা জানান, মাঝে মাঝে যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থা খেলাধুলার আয়োজন করে থাকে, সে আয়োজনে দলগুলো অংশগ্রহণ না করার অনেক কারণ। এগুলোর মধ্যে প্রথমত আমরা যা শুনছি, তা হলো, স্থানীয় খেলোয়াড়রা ম্যাচ প্রতি ১৫ হাজার টাকা করে চেয়েছেন। আবার অনেক ক্লাবের কর্মকর্তারা বাধ্য হয়ে স্থানীয় কোটায় অনেক ফুটবলারদের ১৫ হাজার টাকা করেও দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর মধ্যে স্টেডিয়াম লাগোয়া অনেক ফুটবলারই তারা যে উপজেলাতে খেলবেন তাদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে গেছেন। আমাদের কথা হলো, মাঠে আগে নিয়মিতভাবে খেলাধুলার আয়োজন করা হোক। তাহলে ক্রীড়ামোদী দর্শক আসবে খেলা দেখার জন্যে। টুর্নামেন্ট ও লীগে জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে যে পরিমাণ ম্যাচ ফি দেয়া হয়, তাতে করে অংশ নেয়া দলগুলোর খেলোয়াড়দের খরচ ও অন্যান্য বিষয় চালাতে তাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়।
টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া ক'টি উপজেলার খেলা হলেই ছুটে আসেন মাঠে এমন অনেক ক্রীড়ামোদী দর্শক অনেকটা আক্ষেপের সাথেই এ প্রতিবেদককে বলেন, খেলা কিন্তু সকলের জন্যেই। আর জেলার প্রত্যেক উপজেলাই চায় খেলার মাঠ একটু সুশৃঙ্খলভাবে চলুক। দেখা যায়, কোনো কোনো উপজেলার খেলার দিন মাঠে খেলোয়াড় ও আউট কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থাকে বেশি। আবার কোনো কোনো উপজেলার খেলার সময় কাউকেই ঢুকতেই দেয় না। খেলার সময় দেখা যায়, কখনো কোনো দলের সাথে ছিলো না, কিংবা কোনো দিন কোনো মাঠেও খেলেননি, শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের শ্রমিক রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন, তারা স্টেডিয়ামের কর্মকর্তা হিসেবে মাঠে প্রবেশ করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন ক'জন কর্মকর্তাকে নাকি মাসকাবারি টাকা হাওলাত দেয়ার বিনিময়ে। এমন এক ভদ্রলোককে প্রতিদিনই মাঠে দেখা যায়। কিন্তু বেশ ক'টি উপজেলার সাবেক খেলোয়াড় ও দলের কর্মকর্তাদেরকে আয়োজকরা খেলা চলাকালীন সময়ে প্রবেশ করতে দেন না। এ রকম বৈষম্যমূলক আচরণ থেকে জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে বেরিয়ে আসতে হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায় যে, ২০তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে খেলা পরিচালনার উপ-বিধিসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের মধ্যে এই টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আইন অনুযায়ী চলবে। খেলার নির্ধারিত সময়ে খেলা অমীমাংসিত হলে সেই ম্যাচে টাইব্রেকারের মাধ্যমে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হবে। খেলার মাঠে গোলপোস্ট, বলের আকৃতি ও কর্নার পতাকার ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ চলবে না। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার ৫ দিন পূর্বেই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া স্ব স্ব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব পতাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় জমা দিতে হবে এবং টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পতাকা উত্তোলনের সময় স্ব-স্ব উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত থাকতে হবে মাঠে। প্রত্যেক দলকে পিছনে স্পষ্টভাবে লেখা ক্রমিক নম্বরসহ নিদিষ্ট রংয়ের জার্সি পরে মাঠে উপস্থিত হতে হবে। একই দিনে দুই দলের খেলোয়াড়দের জার্সি একই কালারের হলে লটারির মাধ্যমে সেই জার্সি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে। এই টুর্নামেন্টেটি স্থানীয় ও বহিরাগত ফুটবল খেলোয়াড়দের নিয়েই পরিচালিত হবে। স্থানীয় কোটায় প্রতি দল প্রতি খেলায় তাদের জেলা/উপজেলা, নিজস্ব এলাকার সর্বাধিক ৫ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে খেলতে পারবে। উপজেলা দলগুলোর খেলায় স্থানীয় কোটায় ১৫ জন ফুটবলারকে প্রত্যেক দলে অন্তর্ভুক্ত করাতে পারবে এবং ওই সমস্ত খেলোয়াড়কে খেলা শুরু হওয়ার ১০ দিন পূর্বেই ছবি, আইডি কার্ড, পিএসসি, জেএসসির সাটিফিকেট সহ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার প্যাডে স্ব স্ব উপজেলার নির্বাহী অফিসার স্বাক্ষরিত রেজিস্ট্রেশন পূরণ করে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় জমা দিতে হবে। খেলা চলাকালীন গোলরক্ষক সহ ৩ জন খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে। বহিরাগত খেলোয়াড়দের কোটায় কোনো খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে হলে তা বহিরাগত খেলোয়াড় নামিয়েই করতে হবে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন কোনো দল যদি খেলতে অস্বীকৃতি জানায় বা খেলা পরিত্যাগ করে, তাহলে ওই দলকে টুর্নামেন্ট হতে বহিষ্কার সহ ২ বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত কোনো টুর্নামেন্টে খেলতে না পারার শাস্তি দেয়া হবে। খেলা চলাকালীন রেফারির যে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবোচিত হবে এবং খেলা চলাকালীন কোনো খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা রেফারীর সাথে অসদাচরণ করলে বা খেলা পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটালে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফুটবল উপ-কমিটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে।
২০তম জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলাগুলো ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী ৯০ মিনিট অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে চাঁদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো আয়োজন করা আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলাগুলোর জন্যে খেলা পরিচালনা উপ-বিধি করা হয়েছে। এই টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আইন অনুযায়ী ও চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার উপ-বিধি অনুযায়ী চলবে। এই টুর্নামেন্টের খেলাগুলো ৭০ মিনিট করে হবে। প্রথম রাউন্ড থেকে জয়ী ৪টি দল ২য় রাউন্ডে রবিন লীগ পদ্ধতির খেলায় সুযোগ পাবে। রবিন লীগের খেলায় পয়েন্ট বেশি হওয়া দুটি দলই ফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে।
জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রতিটি খেলা শুরু হওয়ার আগেই প্রতিদিন প্রমীলা ফুটবলের খেলাগুলো শুরু হবে। প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া এ টুর্নামেন্টটি স্থানীয় ও বহিরাগত খেলোয়াড় নিয়ে পরিচালিত হবে। প্রতিটি দলে স্থানীয় কোটায় ৬ জন এবং বহিরাগত কোটায় ৫ জন প্রমীলা ফুটবলার খেলতে পারবেন। স্থানীয় কোটায় একদলে ১৩ জন খেলোয়াড়ের বেশি রেজিস্ট্রেশন করা যাবে না। এক উপজেলার খেলোয়াড় অন্য উপজেলায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না । আন্তঃউপজেলা প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ১ জন বহিরাগত ও স্থানীয় ৩ জন রেফারী দ্বারা খেলা পরিচালিত হবে। এছাড়া খেলার নিয়ম অনুযায়ী সকল কিছুই জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল উপ-কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে।