শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে বাগানে মিলল যুবকের লাশ

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৪

এক গ্রামে একাধিক সপ্রাবি, অথচ দুগ্রামে একটিও নেই-

অনলাইন ডেস্ক
এক গ্রামে একাধিক সপ্রাবি, অথচ দুগ্রামে একটিও নেই-

‘স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষার জন্যে জয়নগর-কদমতলীতে নেই প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এমন শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে যুগান্তরের বরাত দিয়ে একটি শীর্ষ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, আধুনিক যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া নেই কচুয়া উপজেলার জয়নগর ও কদমতলী গ্রামে। সুশিক্ষা গ্রহণে নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বছরের পুরো সময় হেঁটে চলাই জয়নগর উত্তরাংশ ও কদমতলী গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। এ দু গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সপ্রাবি) নেই। ২০০৪ সালে চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলনের প্রচেষ্টায় তানজিলা নাহার হক প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় চালু করা হয়।

জানা গেছে, তৎকালীন সময়ে ওই বিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্যে জয়নগর গ্রামের অধিবাসী আব্দুর রহিম পাটওয়ারী ১৫ শতাংশসহ ৩৫ শতাংশ ভূমি দেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পরবর্তীতে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ওই সময়ে তিনকক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন করা হয়। আসবাবপত্রসহ ভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ওই ভবনে চার শিক্ষকের মাধ্যমে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়। যা প্রায় দু বছর পরিচালনা করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে শিক্ষকদের মাসিক বেতন, সরকারি বিভিন্ন বিধি বিধান না পূরণ হওয়ায় দু বছরের মাথায় ২০০৬ সালের শেষ দিকে তা বন্ধ হয়ে যায়।

দীর্ঘ দিন এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা কাঁচা রাস্তা ও বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে অনেক কষ্টে প্রায় ২-৩ কিলোমিটার দূরে রাগদৈল ও বায়েক গ্রামে গিয়ে শিক্ষা অর্জন করতে হয়। ফলে অনেক শিক্ষার্থী সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা আব্দুর রহিম পাটওয়ারী জানান, আমাদের গ্রামে স্বাধীনতার পর থেকেই শিশু শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে কোনো ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই গ্রামের মানুষের পরামর্শে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেই। মাঝ পথে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় নতুন করে বিদ্যালয়টি স্থাপনের জোর দাবি জানাই। স্থানীয় অধিবাসী বিএনপি নেতা আব্দুল ওয়াদুদ বেপারী, জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, বাবুল মিয়া ও সমাজ সেবক শহীদ উল্লাহ জানান, বিদ্যালয়টি পুনরায় চালু সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা এ গ্রামের শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় এগিয়ে নিতে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সকলের সুদৃষ্টি কামনা করছি। কচুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহীনা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়টি পুনরায় চালুকরণের বিষয়ে এলাকাবাসীর আবেদন পেয়েছি। বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়টির কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এটা খোলসা করে বলার প্রয়োজন পড়ে না যে, কী কারণে কচুয়ার জয়নগর ও কদমতলী গ্রামের শিশুদের জন্যে ২০০৪ সালে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের উদ্যোগে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দু বছরের ব্যবধানে ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ওয়ান ইলেভেন ও দু বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠন-পরবর্তী ১৫ বছর মিলিয়ে দীর্ঘ সময় শিশুদের এ বিদ্যালয়টি চালু হয় নি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে। সম্ভবত এহসানুল হক মিলনের আত্মজার নামে বিদ্যালয়টি করা হয়েছিলো বলে এটি চালু রাখা যায় নি কিংবা সরকারি করা হয় নি। অথচ এমন অনেক গ্রাম খুঁজে পাওয়া যাবে, যেখানে একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও বিদ্যমান রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করা হয়েছে। শহরে তো একই এলাকায় গা-লাগোয়া অবস্থানে কিংবা স্বল্প দূরত্বে দুটি/তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এমন নিরেট বাস্তবতায় কচুয়ার দুটি গ্রামে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত না হওয়াটা দুঃখজনক ও প্রশ্নবোধক। এটা উপজেলা প্রশাসন, প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ, সর্বোপরি জনপ্রতিনিধিদের ব্যর্থতা বলে আমরা মনে করি। এই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার এখনই উপযুক্ত সময়। আশা করি কচুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহীনা আক্তার উপরোল্লিখিত সংবাদে উদ্ধৃত তাঁর বক্তব্যের আলোকে সক্রিয় হলে জয়নগর গ্রামে স্থাপিত প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু হবে এবং এটিকে সরকারিকরণের সর্বাত্মক প্রয়াস লক্ষ্য করা যাবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়