প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
এক সময়ে মাঠে ছিলো তার অবাধ বিচরণ। ওই সময় প্রতিদিন ভোরে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজ এলাকা থেকে দৌড় শুরু করে অন্য এলাকার মূল সড়ক পযন্ত দৌড়াতেন। যখন ফুটবলের সাথে জড়িত ছিলেন তখন নিয়মিত মাঠে অনুশীলনই ছিলো তার প্রধান কাজ। বয়সের শেষ প্রান্তে এসেও নিয়মিত নামাজ, রোজাসহ জাতীয় পত্রিকা ও স্থানীয় পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়ছেন এবং কবিতাসহ পত্রিকাগুলোতে কলাম লিখছেন। সাবেক একজন দক্ষ ফুটবলার হিসেবে খেলাধুলাটা যেমন তার প্রিয় ছিল তেমনি পত্রিকা পড়া ও সংগ্রহ রাখাটা ছিলো তার নেশা। তিনি হলেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকার মোল্লা বাড়ির আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হক মোল্লা।
গতকাল ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদক তার নিজ বাড়িতে যান তার বতমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে। দুপুর পৌনে ৩টার সময় তার বাসায় গিয়ে ডাক দিলে ভেতর থেকে তিনি ইশারা দেন রুমের ভেতরে যাওয়ার জন্য। টিনের বড় ঘরের কয়েকটি রুমের একটিতে তিনি থাকেন। রুমের ভেতরে যখন যাওয়া হয় তখন ওই এলাকায় কোনো বিদ্যুৎ ছিলো না। তখন দেখা যায় ঘরের মধ্যেই জানালার পাশে বসে তিনি পত্রিকা পড়ছেন। ভেতরে গিয়ে তাকে বলি, চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকা থেকে এসেছি। তখন তিনি বলেন, ‘করোনার পর থেকে আমার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। বাসায় বসেই নিয়মিত নামাজ পড়ছি এবং রোজা রাখি। আর সময় পেলে বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে এবং রাস্তার পাশে দোকানে যাই।’
আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লার বয়স এখন ৮০ বছরের মতো। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে ৫ ছেলে, ১ মেয়ে, স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে বসবাস করছেন। পরিবারের সকল সদস্যের সাথেই একসাথে থাকেন। এক সময়ে পড়ালেখা অবস্থায় তিনি ফুটবলের সাথে জড়িয়ে পড়েন। খেলাধুলায় এখন যেমন বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতাসহ বিভিন্ন জনের সহযোগিতা পাওয়া যায়, তাদের সময়ে তেমন সুবিধা ছিলো না। তবে ওই সময় খেলাধুলার আয়োজন হতো বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকুরি জীবনে প্রবেশও হয়েছে ফুটবলের কারণে। তিনি চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মাঠে সাবেক দেশসেরা অনেক ফুটবলারের সাথে খেলেছেন। তিনি ঢাকা ভিক্টোরিয়া ক্লাবের একজন নিয়মিত ফুটবলার ছিলেন। ঢাকা মোহামেডান ক্লাবসহ অনেক নামীদামী ক্লাবগুলোতে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন।
ঢাকার মাঠে তার ক্লাবের হয়ে খেলতে নামেন বাংলাদেশ পুলিশ দলের সাথে। ওই ম্যাচটিতে খেলার সময়ে তার প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের আঘাতে তিনি মারাত্মক ব্যথা পান ডান পায়ে। এই আঘাতের পরেই তিনি ঠিকমতো আর মাঠে খেলতে নামেন নি। খেলাধুলা করাবস্থায় তিনি চাকুরি পান বাংলাদেশ ডাক বিভাগে। একজন ভালো পোস্ট মাস্টার হিসেবে সেই দপ্তরেও সুনামের সাথে কর্মময় জীবন শেষে পরিবারের সদস্যদের সাথে রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা এখন আর আগের মতো নেই। তিনি যেনো আল্লাহর রহমতে সকলের দোয়ায় নিয়মিত নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্যে সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লা চাঁদপুর কলেজে পড়াবস্থায় অলপাকিস্তান ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। পাকিস্তান আমলে ওই খেলাটি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। চাঁদপুর কলেজের হয়ে ইস্ট পাকিস্তান দলে খেলেন ওয়েস্ট পাকিস্তান দলের বিপক্ষে। তিনি ওই সময়ে ইস্ট পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
আলাপচারিতায় খেলাধুলা নিয়ে জানতে চাইলে আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লা এ প্রতিবেদককে বলেন, নিয়মিত মাঠে খেলাধুলা হলেই খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে। আমাদের সময়ে আমরা নিয়মিত মাঠে খেলাধুলা করতাম। যারা ক্রীড়া সংগঠকের দায়িত্বসহ জেলার ক্রীড়ার দায়িত্বে ছিলেন তারা অনেক বেশি খেলাধুলার আয়োজন করতেন। যারা খেলাধুলা করতেন তাদের সাথে ক্রীড়া সংগঠকদের ছিলো খুব ভালো সম্পর্ক। এখন আর সেগুলো চোখে পড়ে না। মাঠে খেলাধুলার আয়োজন থাকলে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার উঠতি বয়সী যুবকরা মাঠে আসবে। মাঠে খেলাধুলা গড়ালে ভালো ভালো খেলোয়াড় খুঁজে পাবে। একজন সুস্থ মানুষের জন্য খেলাধুলার বিকল্প নেই। এখনো চাঁদপুরে নিয়মিত খেলার আয়োজন করলে খেলোয়াড়ও সৃষ্টি হবে এবং ক্রীড়ামোদী দর্শকরা মাঠে গিয়ে খেলা দেখতে পারবে।