প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
পুঁজিবাজারের নতুন কমিশন বিনিয়োগকারীসহ অন্যান্য স্টোকহোল্ডারের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। দেশের পুঁজিবাজারে গত দশ বছরের আস্থার সঙ্কট দূর হয়েছে মাত্র এক বছরে। বাজারের স্বার্থে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে চমক দেখিয়েছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। যা বিগতদিনে দেশের শেয়ারবাজারে কেউ কল্পনাও করেনি। ১৭ মে, ২০২০ বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম যোগদানের পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় ৩১মে। আমরা যদি আমাদের বিনিয়োগকারীদেরকে বিনিয়োগ শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পারি এবং বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি তাহলে আমাদের স্টক মার্কেট হবে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট বাজার।
আপনি আপনার অর্থকে কোন্ খাতে বিনিয়োগ করবেন-সেটা আপনার ব্যাপার। তবে যেখানে রিটার্ন বেশি সেখানে বেশিরভাগ মানুষ বিনিয়োগ করতে চায়। একজন নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য সবসময়ই সতর্ক থাকতে হয়; কারণ বিনিয়োগ সব সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে হয়। প্রথম বিনিয়োগে আপনার কিছু অর্থ লোকসান হতেই পারে। কিন্তু তাতে হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। এজন্য বাজার সম্পর্কে বেশি বেশি গবেষণা করতে হবে, বিনিয়োগ শিক্ষা নিতে হবে এবং জানতে হবে বিনিয়োগের ফর্মুলা।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইলে একজন নতুন বিনিয়োগকারীকে নিচের ৯টি বিষয় মেনে বিনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই হয়ত সে একজন প্রকৃত বিনিয়োগকারী হয়ে উঠতে পারবে।
১। অন্ধভাবে বিনিয়োগ নয় : বিনিয়োগের সময় অন্ধ হলে চলবে না। অন্ধভাবে কোনো শেয়ার কেনা মানেই আপনি কোনো বিনিয়োগ করছেন না। বিনিয়োগ তা-ই, যা বুঝে শুনে নেয়া হয়, যা আপনাকে স্বস্তিতে রাখে।
২। গবেষণাকে গুরুত্ব দেয়া : অনেকেই আছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গবেষণাকে গুরুত্ব দেন না। তারা বিনিয়োগ করার কথা তাই বিনিয়োগ করেন বা বাজারে অন্যদের কথামত বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগকারীকে তাই সব সময় গবেষণার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ কোম্পানির গবেষণাই বলে দেয়, ওই কোম্পানি, তার পণ্য, ব্যবসা, আয় ও ভবিষ্যৎ রুণ, আপনি কোনও কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে চান; তাহলে ওই কোম্পানি সম্পর্কে এবং তার ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সম্পর্কে জানুন। এরপর সিদ্ধান্ত নিন কী করবেন।
৩। সময়জ্ঞান থাকতে হবে : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে সময় জ্ঞান জরুরি। ধরুন, আপনি একটি বাড়ি কেনার জন্য অর্থ সঞ্চয় করছেন, তাহলে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারেন। আবার যদি আগেভাগে বিনিয়োগ করতে চান, তবে সেটা হতে পারে দীর্ঘমেয়াদী। এখন আপনাকে নিতে হবে বিনিয়োগের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।
৪। মুনাফা প্রত্যাশা ও ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য : বিনিয়োগে যেমন মুনাফা প্রত্যাশা থাকবে, তেমনি ঝুঁকিও থাকবে। অবশ্যই এ দুইটার মধ্যে ভারসাম্য বিবেচনায় নিতে হবে; যাতে কোনো ক্রমে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও আপনার ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা থাকে।
৫। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা : আপনার সহ্য ক্ষমতা যতটুকু ততটুকু ঝুঁকি নিতে পারেন। এর বেশি নয়। মার্কেটের শেয়ার দর উঠা-নামাকে সহ্য করতে না পারলে সেক্ষেত্রে আপনাকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। কারণ এ ধরণের কোম্পানিতে শেয়ার দরের ওঠানামা তুলনামূলক কম থাকে।
৬। নিয়মানুবর্তিতা : সব সফল ব্যবসায়ী নিজস্ব কিছু নিয়ম, নীতি এবং কৌশল তৈরি করে নিয়েছেন এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। কোন্ পরিস্থিতিতে কোন্ সিদ্ধান্ত নিবেন সফল ব্যবসায়ীদের তার একটা নিজস্ব প্যাটার্ন আছে। মার্কেটের গুজব, হৈহুল্লোড় তাদের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না।
৭। ধৈর্য : “এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, না হলে দেরি হয়ে যাবে”- এই কথাটা শেয়ার মার্কেটে খুব বেশি শোনা যায়। এর মানে, অন্য কেউ তার নেয়া সিদ্ধান্ত আপনার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু একজন অভিজ্ঞ শেয়ার ব্যবসায়ী কখনোই তাড়াহুড়ায় সিদ্ধান্ত নেন না এবং তার মধ্যে লাভ তুলে নেয়ারও কোনো তাড়া নেই। তিনি দীর্ঘমেয়াদে বুঝে শুনে বিনিয়োগ করেন।
৮। সব ডিম এক ঝুড়িতে নয় : কখনও সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখা ঠিক নয়। কারণ ঝুড়িটা ছিদ্র হলে সব ডিম পড়ে ভেঙ্গে যেতে পারে বা সব অর্থ লোকসান হতে পারে। বিনিয়োগে বহুমুখীকরণ হলে এ ধরণের ক্ষতি থেকে পোর্টফোলিওকে মুক্ত রাখা সম্ভব। আপনি যদি কয়েকটা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেন, তবে কোনো কোম্পানিতে লোকসান হলে অন্যটাতে লাভ হবে। তাতে আপনার পোর্টফোলিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর একটি কোম্পানীতে বিনিয়োগ করলে যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন তবে আপনার সব অর্থই চলে যেতে পারে।
৯। লেনেদেনের ফি মাথায় রাখা : আপনাকে অবশ্যই ব্রোকারেজ হাউজের ফি-এর কথা মাথায় রাখতে হবে। এটাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। আবার যেসব হাউজ বেশি ফি নিচ্ছে সেটাও মাথায় থাকতে হবে। কারণ তুলনামূলক কম ফি আপনার বিনিয়োগের রিটার্নকে এগিয়ে দিতে পারে।
ওয়ারেন বাফেটের উক্তি :
“কখনই সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখো না। অর্থাৎ একটি মাত্র ক্ষেত্রে বিনিযয়োগ না করে ভিন্ন ভিন্ন অনেক খাতে ইনভেস্ট কর, যাতে মূলধন হারানোর ঝুঁকি কম থাকে।”
লেখকের ইমেইল : [email protected]