প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের পাশে শাহরাস্তি উপজেলার শিবপুরে অবস্থিত একটি অটোরাইস মিল। মিলটিতে কোনো সাইনবোর্ড না থাকলেও ভেতরে বিভিন্ন কাগজপত্রে দেখা মিললো তিনটি নাম। একই মিলের একাধিক নাম রেখে নেয়া হচ্ছে সরকারি বাড়তি সুবিধা। নামে-বেনামে সরকারের কাছে বিক্রি করছে চাল। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
সরজমিনে গিয়ে দেখা মিললো মিলটির নাম ভিজিটিং কার্ডে মিম-মিনা অটো রাইস মিল। আবার ধান-চাল ক্রয়-বিক্রয় হিসাবের খাতায় কোনোটায় মিম অটো রাইস মিল আবার কোনোটায় মিনা অটো রাইস মিল। অপরদিকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্স দু’টি। একটি হলো মিম অটোরাইস মিল আরেকটি মিনা অটোরাইস মিল। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া প্রতারণার বিষয়টি অবশেষে ফাঁস হয়ে গেলো।
একাধিক নাম দিয়ে কীভাবে সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছে এই রাইস মিল। জানা গেছে, বছর দুয়েক হলো এই রাইস মিল চালু করা হয়। এ পর্যন্ত সরকারের দুই অর্থ বছরে চাল বিক্রির বরাদ্দ পায় মিলটি। মিলটি হলো সিদ্ধ চালের মিল। এখানে আতপ চালের মিল নেই। কিন্তু চলতি বছরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্য নন্দ কুণ্ড ৮শ’ ৬০ মেট্রিক টন আতপ চাল বিক্রির বরাদ্দ দেয় এই মিলটিকে। একই সাথে ৪৫০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চালের বরাদ্দ দেয়া হয় এই মিলটিকে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সিদ্ধ ১৩০টন এবং আতপ ৫৯০ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে মিলটি।
তাহলে কীভাবে আতপ চাল সরকারকে দেয়া হচ্ছে এই সিদ্ধ চালের মিল থেকে এবার সে বিষয়ে কথা হয় মিলের শ্রমিকদের সাথে। একাধিক শ্রমিক ও শ্রমিকদের সর্দার জানান, আতপ চালের মিল এখানে নেই। তবে বাইরে থেকে চাল কিনে এখানে এনে সরকারি বস্তায় ঢুকানো হয়।
এ বিষয়ে মিলের ম্যানেজার খোকন একেকবার একেক তথ্য দেন। তার দেয়া তথ্য মতে এবার ৮৯০ মেট্রিক টন আতপ চাল বরাদ্দ দিলেও তারা ৫৯০ মেট্রিক টন দিয়েছে। তবে আর দিবে না।
এ বিষয়ে কথা হয় শাহরাস্তি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মজিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, তার জানা মতে সেখানে সিদ্ধ ও আতপ চালের মিল রয়েছে। আর তাদের কাছে চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিত্য নন্দ কুণ্ড।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিত্য নন্দ কুণ্ড সেখানে দু’টি মিল আছে বলে জানেন। মিলটি তথ্য গোপন রাখলে আর বরাদ্দ পাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
মিলের মালিক মোঃ মানিক ভূঁইয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে সরকারের দেয়া সময়সীমা ৩১ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে। সম্প্রতি সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রায়হানুল কবীর জানিয়েছেন, ৩১ আগস্টের মধ্যে মিলগুলো চাল দিতে না পারায় কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সারাদেশে এমন তালিকাভুক্ত মিলের সংখ্যা ৩৮৯৩টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কালো তালিকাভুক্ত ১০৫টি। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক অফিসগুলোতে খাদ্য অধিদপ্তরের এই তালিকা পাঠানো হয়েছে।
এছাড়াও খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যেসব মিল তথ্য গোপন করে সরকারের সঙ্গে ধান-চাল দেয়ার চুক্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
চাঁদপুর জেলায় ১৫টি সিদ্ধ রাইস মিল ও একটিমাত্র আতপ চালের রাইস মিল রয়েছে। এই মিলগুলো যাচাই-বাছাই না করে ধান-চাল ক্রয় করার নির্দেশনায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকে।