রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

শোকাবহ রক্তাক্ত আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

বাঙালি জাতির শোকাবহ মাস আগস্ট। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত বেদনার মাস। স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বার বার এই মাসটিকেই বেছে নিয়েছে তাদের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে। এই মাসের ১৫ আগস্ট ঘটে যায় বাঙালি জাতির জীবনে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এদেশেরই ক্ষমতালিপ্সু কতিপয় রাজনীতিবিদ আর বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই সাথে শহীদ হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, দুই পুত্রবধূ, শিশু পুত্র শেখ রাসেল ও নিকটাত্মীয়সহ পরিবারের ১৮জন সদস্য। এমন নৃশংসতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেদিন বিদেশে অবস্থান করায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান শেখ মুজিবের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে পূর্ব বাংলা শ্মশানে পরিণত হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে হাত দেন তিনি। অল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু দেশকে কাঠামোগত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকচক্র পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে দীর্ঘ ৯ বছর সময় লেগেছিলো। অথচ বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের জন্যে দক্ষতার সাথে মাত্র এক বছরে একটি সুদূর প্রসারী গণমুখী সংবিধান প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, শিক্ষা কমিশনসহ নানামুখী স্বপ্নাচারী উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের অভিযাত্রায় দাঁড় করিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৩ ডলার। বঙ্গবন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রম, বলিষ্ঠ ও সাহসী নেতৃত্বে মাত্র ৩ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৭৩ ডলারে। কৃষি ও শিল্প যুগপৎ উন্নতি করছিল, শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিনিয়োগ হচ্ছিল। বৈরী প্রকৃতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিক অপতৎপরতা, হঠাৎ বেড়ে যাওয়া তেলের দামের কারণে বাড়ন্ত মূল্যস্ফীতি ও বিপুল খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলা করেই তিনি যখন এগুচ্ছিলেন ঠিক তখনই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের উদ্দেশ্যই ছিল আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটানো, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। তারা হত্যা করতে চেয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাযজ্ঞের কুশীলবরা আজ জনগণের কাছে ইতিহাসের কাছে ধিকৃত, ঘৃণিত।

যে শেখ মুজিবের নাম ইতিহাস থেকে ষড়যন্ত্রকারীরা মুছে ফেলতে চেয়েছিল সেই নাম আজ বিশ্ব মর্যাদায় আসীন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ভারতের কলকাতার শান্তি নিকেতনে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করা হয়েছে। জেনেছি লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। সেখানে তরুণ প্রজন্মের বাঙালিরা কিংবদন্তিতুল্য এই নেতাকে ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে আসে। শেখ মুজিব ছিলেন বিশে^র সকল নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অগ্রনায়ক। বঙ্গবন্ধুর হৃদয় জুড়ে ছিল দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। গণমানুষের অধিকার আদায়ের জন্য তিনি ছিলেন আপোষহীন। একজন ব্যক্তি কীভাবে নিঃস্বার্থভাবে লড়তে পারেন দেশের মানুষের জন্য, অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য, শেখ মুজিব ছিলেন তাঁরই প্রতিকৃতি। তাঁর বক্তৃতা মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতো; কারণ তাঁর বক্তৃতায় মিথ্যা কোনো অঙ্গীকার থাকতো না। মানুষের মনের দুঃখকে, বঞ্চনাকে, অভাব ও অভিযোগকে তিনি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতেন। শুধু উপলব্ধিই নয়, দুঃখণ্ডদুর্দশার প্রতিকারের পথও তিনি দেখাতেন। তাই তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। শিক্ষা-দীক্ষা, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, মহত্তম জীবনবোধ, সততা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের মহান স্থপতি।

প্রবাসে দীর্ঘ নির্বাসন জীবনে ষড়যন্ত্রকারীদের সব বাধা অতিক্রম করে জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে ফিরে এসে দলকে সুসংগঠিত করেন। পরবর্তীতে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মৃত্যুর নানা ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনার হাল ধরেন ১৯৯৬ সালে। তিনি সোনার বাংলার স্বপ্ন ফের উজ্জীবিত করেন। বাঙালির মনোজগতে ফিরিয়ে আনেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে শেখ হাসিনাকে ১৭বার হত্যা চেষ্টা চালায়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা। সেদিন ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধু কন্যা বেঁচে গেলেও নিহত হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ চব্বিশ জন নেতা-কর্মী। আহত হন প্রায় পাঁচ শতাধিক। ছিন্ন ভিন্ন দেহ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের রাজপথ।

টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাতি জ্বালিয়ে রেখে দিন রাত সংগ্রাম আর কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনার বাংলা গড়তে, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর করা, জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করা ছিলো সময়ের সাহসী সিদ্ধান্ত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। জীবনের গড় আয়ু, জন্মহার, শিশুমৃত্যুহার, সঞ্চয়ের হার, প্রবৃদ্ধির হার, সব সূচকেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে উজ্জ্বল দেশটির নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, গ্রামকে শহরে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা নিপাত যাক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হোক সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি : ফেরদৌসী বেগম, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়