প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ! এ কথা সবাই মানলেও প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন ভিন্নরকম। প্রবাসে অনেকেই আছেন যাদের জন্যে ঈদের দিনটাও কষ্টকর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা।
ঈদের দিনে ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহে যাওয়া প্রবাসীদের জন্যে যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না-- সেমাই খেয়ে যাও।
শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি। আবার অনেকে নামাজ শেষে কাজে চলে যায়। আমার দেখা ৬০ শতাংশ প্রবাসী ঈদের দিনে নামাজও পড়তে পারে না কাজের জন্যে।
ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় যেয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেন অনেকে। আর এরপর দুপুর গড়িয়ে পুবের সূর্যটা পশ্চিমে হেলতে শুরু করে। বিছানা ছেড়ে দু-একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সামান্য আনন্দের প্রত্যাশায় অজানার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। এভাবেই কেটে যায় প্রবাসীদের ঈদ নামের নিঃসঙ্গ বেদনার দিনটি।
সেদিন ছিল ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহার অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। এই উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ত্যাগ করা। প্রবাসীরা কত কষ্ট করে দেশে পরিবারের জন্যে কোরবানির টাকা পাঠায় আর সেই টাকা দিয়ে দেশে পরিবারের সদস্যরা আনন্দ করে। আর সেই প্রবাসী ত্যাগ উৎসব করে পান্তা ভাত বা চা বিস্কুট খেয়ে। পৃথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলো।
ড. আব্দুস সাত্তার : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডিসি, আমেরিকা।