প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ০০:০০
ভুলটা আমারই ছিলো
একজন সত্যিকার মানুষ কখনই তার পিতা-মাতাকে ভুলে না। যে সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভুলে যায়, তাদের মঙ্গল চায় না, তাদের জন্যে দোয়া করে না তারা মূলত কুসন্তান। তেমনি যে মানুষ তার শিকড়কে ভুলে যায় তারও কখনও মঙ্গল হতে পারে না।
কথাগুলো বলছিলাম, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে। আমি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের লেখক-সন্তান। এই পত্রিকাটিতেই আমার যৌবনের ক’টি বছর অতিবাহিত করেছি সুখ ও সান্নিধ্যে।
সুখের সাথে সান্নিধ্যের কি সম্পর্ক? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। সোনার সাথে যদি রূপাও মেশানো হয়, তাহলে সেই রূপাটাও সোনায় পরিণত হয়ে যায়। আর সেইরূপ সোনারূপী গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেলে কিছু মানুষের জীবন আল্লাহতায়ালার রহমতে অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়, যদি সে পরিবর্তন চায়।
আমিও ঠিক পরিবর্তন চেয়েছিলাম। অনেক বড় হতে চেয়েছিলাম। বছরের পর বছর নিজকে বড় হবার মানসে এগিয়ে গিয়েছি। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, মেঘনাবার্তার বার্তা সম্পাদক, চাঁদপুর সংবাদের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, চাঁদপুর নিউজের চীফ রিপোর্টার, চাঁদপুর টাইমস (অনলাইন নিউজ পোর্টাল)-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে যা-ই কিছু করেছি আমার মূলধন ছিলো দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের শিক্ষা। এই মূলধন নিয়েই এগিয়ে গিয়েছি, এই পত্রিকার সান্নিধ্যে থেকেই বড় হতে পেরেছি, নিজকে মেলে ধরেছি সুন্দর থেকে সুন্দরতমের মাঝে। লেখালেখিতে আমার মধ্যকার যে আগাছা ছিলো তা পরিষ্কার করে দিয়েছে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। এই পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত থেকে আমি আমার ভবিষ্যৎ পথচলার পাথেয় পেয়েছি, যা কখনই আমি টাকার অঙ্কে শোধ করতে পারবো না।
আজকে আমি যে পেশায়ই আছি, তার মূল অবদান দিবো এই পত্রিকাটিকে। আমি আজ দুটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক। যখনই আমি আমার কাজে মনোনিবেশ করি তখনই এই পত্রিকাটিকে মনে পড়ে। মনে মনে, প্রার্থনায় দোয়া করি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যে।
এই পত্রিকার জন্যে আমার অনেক ঋণ। তাই যখন কোনো কারণে এই পত্রিকাটি ঈর্ষাপরায়ণদের রোষানলে পড়ে, তখনই আমি সেই ঋণ লাঘবের জন্যে এগিয়ে আসি। এর জন্যে কেউ কেউ আমাকে তিরস্কারও করে, মনে করিয়ে দেয় সেই প্রাচীন কথা। কিন্তু আমি জানি, ভুল যে কারোরই হতে পারে। শিক্ষকেরও হতে পারে ভুল।
এ পত্রিকায় দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পরিচিত হই মরহুম প্রকৌঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে, চাঁদপুরের গুণী নজরুল গবেষক এএফএম ফতেউল বারী রাজা ভাইয়ের সাথে। প্রকৌঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেনের সাথে আমাকে সরাসরি পরিচিয় করিয়ে দেন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত সাহেব। পরবর্তীতে প্রকৌঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন হয়ে যান আমার একজন শুভাকাক্সক্ষী অভিভাবক। করোনার সময় যাঁর মৃত্যুতে আমি অনেক কেঁদেছি। আজও কাঁদি, দোয়া করি। এই মানুষটা আমাকে এতোটাই স্নেহ-মায়া-মমতা দিয়েছিলেন, যাঁর আদর্শ আমাকে আজও আমার বাবার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
ফতেউল বারী রাজা ভাইয়ের একটা কথা মনে পড়ে। তিনি বলতেন, ওস্তাদের ভুল ধরাটাও ভুল। আমি আজ সেই কথাটাই বলবো। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ আমাকে যে সম্বলটুকু দিয়েছে সেই তুলনায় তাদের ‘ভুল’ ধরাটাও আমার ভুল হবে। ওস্তাদের ভুল ধরতে নেই। ওস্তাদ তার শিষ্যকে শিখাতে গিয়ে যদি বেত্রাঘাতও করে সেটা তার শিষ্যর মঙ্গলের জন্যে। সেই সময়টায় আমি সেটা বুঝতে পারিনি জ্ঞানস্বল্পতার জন্যে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ছেড়ে আমি যেখানেই গিয়েছি, সেই পরিবেশ ও শিক্ষার বিষয় পাইনি, যা এখানে পেয়েছি। বলা যায়, ভুলের রাজ্যে বসবাস করে নিজেও ভুলটাকেই শুদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়েছি।
যে কথাটি না বললেই নয়, আমি এ পত্রিকার বিভাগীয় সম্পাদক থাকাকালে অনেক লেখককে খুঁজে বের করেছি, মূল্যায়ন করেছি। পুরস্কৃত করেছি। আজ তারা অনেক বড় হয়েছেন, কেউ কেউ মাঝে মাঝে খোঁজ-খবর নেন। আবার কেউ কেউ আমাকে ভুলে গিয়েছে। আবার কেউ কেউ দেখি এ পত্রিকাকে হেয় করে নিজকে অনেক বড় মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন পেতে চায়। আসলে প্রতিটি মানুষকেই একসময় তার মূলের দিকে ধাবিত হতে হয়। মূল ছাড়া শেকড়ের কোনো মূল্য নেই- এই কথাটি মানুষের বুঝতে অনেক সময় লাগে। বড় হতে হলে অন্যকে শ্রদ্ধা করতে হয়, যার যা প্রাপ্য তা তাকে দিতে হয়, তাহলেই নিজের সঠিক প্রাপ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়টি আমরা অনেক সময় জেনেও পালন করতে ভুলে যাই।
তাই দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি এই পত্রিকার এবং পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট নিরলস কারিগরদের প্রতি শুভ কামনা জানাই। যুগের পর যুগ বেঁচে থাকুক আদর্শ ও নৈতিকতার মানদ- নিয়ে- এই কামনা।
মিজানুর রহমান রানা : সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রিয় সময় ও চাঁদপুর রিপোর্ট।
মুঠোফোন : ০১৭৪২০৫৭৮৫৪