সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

টানা ২৩ বছর চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে

টানা ২৩ বছর চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে
কামরুজ্জামান টুটুল

খুব সম্ভবত ২০০০ সাল কিংবা ১৯৯৯ সাল। তখন আমি চাঁদপুর শহরের ১০ নাম্বার চৌধুরী ঘাটের একজন ছোটখাট ব্যবসায়ী। সেই ব্যবসার সুবাদে নিজ এলাকায় বাকিলায় জামান স্টীল নামে একটি শো-রুম দিলাম। তার আগের থেকে বাকিলা বাজারে জামান ফার্মেসী তথা ঔষধের ব্যবসায়ী ছিলাম। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডিতে থাকতেই আমি পত্রিকা পড়ায় অভ্যস্ত ছিলাম। মাঝে মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিক একত্রে কিনতাম। পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক হওয়ার কারণে পত্রিকায় কাজ করার ইচ্ছে হয়। এরই মধ্যে ২০০০ সালের দিকে ছোট্ট একটি বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে আবেদন করি। চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যে বাকিলা বাজার প্রতিনিধি নেবে। একটি আবেদন চাঁদপুর কণ্ঠের সেই সময়ের গুয়াখোলা কার্যালয়ে পাঠাই চাঁদপুর সরকারি কলেজে পড়ুয়া ছোট এক ভাইকে ২০ টাকা দিয়ে। নির্দিষ্ট সময় ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখি, আমার এলাকার ৫ জন গিয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার জন্যে। যথাসময়ে ইন্টারভিউর জন্যে রুমে ডাক পড়লো। সেই সময় অবশ্য কণ্ঠ পরিবারের কাউকে মোটেই চিনতাম না। সেই বোর্ডে ছিলেন প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত আর সেই সময়ের বার্তা সম্পাদক শহীদ পাটোয়ারী। আমি রুমে ঢোকার পরেই আমাকে বসার জন্যে বলেই প্রশ্ন করলেন শহীদ পাটোয়ারী ভাই। প্রশ্নটি ছিলো : জনগুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বলতে কী বুঝি? আমি যথাযথ উত্তর দিলাম। আরো কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেবার পরেই শহীদ পাটোয়ারী ভাই আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নেবো। যথাসময়ে আপনি ডাক মাধ্যমে চিঠি পেয়ে যাবেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে সংবাদ পাঠানোর আনুষ্ঠানিক চিঠি পেয়ে সংবাদ লিখে পাঠাতে শুরু করলাম। সেই সময় সংবাদ লিখা আর পাঠানোর কথা ভাবলে বর্তমানে বিষয়গুলো অসম্ভবই মনে হয়। অফিসের কাউকে চিনতাম না। চাঁদপুর কণ্ঠে কারা হাজীগঞ্জে কাজ করতো, তাদের কাউকেও চিনতাম না। অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী মিডিয়াম টাইপের কাগজের প্যাডে হাতে নিউজ লিখে পাতার নাম্বার দিয়ে পিনআপ করে সন্ধ্যার পর চাঁদপুরগামী ম্যাক্সি বা বাসে করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডে পাঠাতাম। এখনকার সময়ের ছবির কথা আর সেই সময়ের ছবির কথা ভাবলে গা শিউরে উঠে। ইয়াসিকা ক্যামেরায় ফুজি ফিল্ম কিনে কাজ করতে হতো। একটি ফিল্মে ৩২টি ছবি পেতাম আর এর মাঝে যদি ফিল্ম কেটে করা লাগতো, তাহলে প্রতি কাটায় ৩টি ফিল্ম নষ্ট করতে হতো। আবার একটি ছবি প্রিন্ট করতে গেলে ল্যাবে গিয়ে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। এর পরেই ছবির সাথে একটি নিউজ পাঠাতে হতো। ছবিসহ হাতের লিখার সংবাদটি সম্ভবত অফিসের কেউ একজন চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে নিতেন। এভাবে সংবাদপত্রে প্রথম নিজের নাম প্রকাশ হতে লাগলো। প্রথম প্রথম নিজস্ব সংবাদদাতা দিয়ে আমার সংবাদগুলো প্রকাশ পেতো। বেশ কিছু দিন পর নিজের নামে একটি সংবাদ ছাপা হওয়ায় নিজের মনে অনেক আনন্দ এসে গেলো। সেই আনন্দ ধরে রাখতেই আজও জোঁকের মতো আঁকড়ে আছি চাঁদপুর কণ্ঠসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের সাথে। চাঁদপুর কণ্ঠ নিয়ে আমার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি হলেও এখন আমি কাজ করি দেশসেরা নিউজ টিভি চ্যানেল ৭১ টিভি আর দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। ৭১ টিভিতে কাজ করার জন্যে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ যমুনা টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি কাদের পলাশ ভাই আর কালের কণ্ঠে কাজ করার জন্যে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ জেলা প্রতিনিধি ফারুক ভাইয়ের কাছে। এই দুজনের সুদৃষ্টি না থাকলে প্রথম শ্রেণির টিভি চ্যানেল আর পত্রিকায় কাজ করার সুযোগ হতো না। এর আগে আরেকটি টিভি চ্যানেল বাংলা টিভিতে চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছি প্রায় দুই বছর, আর জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবে কাজ করেছি প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে।

খুব সম্ভবত ২০০৪ সালে দেশে বন্যা হলো। প্রায় ১ মাস ধরে এলাকায় জলাবদ্ধতা। চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়ক, হাজীগঞ্জ বাজার, বাকিলা বাজার, বলাখাল বাজার সবই পানির নিচে। চারদিকে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, মহাসড়কে বড় বড় গর্ত। বন্যা পরবর্তী এলাকার ক্ষতির ব্যাপকতা নিয়ে হাতে লিখা একটি সংবাদ করে বাসে চাঁদপুর যাওয়ার পথে ঘোষের হাট এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেই সংবাদটি হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায় আর সামান্য আহত হয়ে এলাকায় ফিরে আসি। সেই সংবাদটি আর করা হয়নি, সেই বন্যা পরবর্তী সংবাদটি ছাপা হয়নি। সেটি ছিলো মনে রাখার মতো আমার জীবনের একটি ঘটনা।

২০০৪ সালের দিকে বাকিলা বাজার প্রতিনিধি থাকাবস্থায় নিজের সীমানা পেরিয়ে ধীরে ধীরে উপজেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হালকা লেখালেখি শুরু করি। এই লেখালেখির ফলস্বরূপ প্রধান সম্পাদকের সহযোগিতায় বাকিলা বাজারের প্রতিনিধি থেকে হাজীগঞ্জ পশ্চিম উপজেলা সংবাদদাতা, উপজেলা সংবাদদাতা সর্বশেষ ব্যুরো ইনচার্জের দায়িত্ব পাই।

ব্যুরো ইনচার্জ পদে দায়িত্ব পালনের পর থেকে মনে হচ্ছে, নিজের দায়িত্বটুকু এখনো ঠিকমতো পালন করতে পারছি না। তবে আমার আজকের এই অবস্থানের জন্যে আমি এককভাবে কৃতজ্ঞ চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাতের কাছে। সংবাদ সংক্রান্ত আমার যা কিছু শিক্ষা তার সবটুকু কাজী শাহাদাতের বদৌলতে। তিনি না থাকলে হয়তো এতোদিনে চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে থাকতে পারতাম না। একাধিক জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার জন্যে প্রস্তাব এসেছে, পরামর্শ চাইলাম তাঁর কাছে। একবাক্যে তিনি আমাকে বললেন, যেখানে গেলে কিছু শিখবে, সেখানে যাও ।

চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করতে গিয়ে অনেক সম্মান পেয়েছি। সংবাদের জন্যে বাহবা পেয়েছি, বহু গুণীজনের সাথে, রাজনৈতিক উঁচু ব্যক্তির সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সমাজে অবস্থান তৈরি করেছি। বহু সংবাদের ক্ষেত্রে পাঠকরা ব্যক্তি টুটুলকে খোঁজেন না, চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিনিধি খোঁজেন। হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে করেছি। দুটো নির্বাচন করতে গিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জের অন্যান্য প্রতিনিধিসহ শাহাদাত ভাইয়ের যে সহযোগিতা পেয়েছি, তা কখনো ভোলার নয়। কাজ করতে গিয়ে এটা আমার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া। চাঁদপুর কণ্ঠে সংবাদের জন্যে হাজীগঞ্জের বেশ ক'জন ভিআইপি ফোনে ও প্রকাশ্যে, এমনকি লোক মাধ্যমে বহু গালমন্দসহ হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, মামলার ভয় দেখিয়েছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে সবই প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের কল্যাণে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। এজন্যে আমার অনেক সহকর্মী আমাকে বলেন, এমন সম্পাদকের অধীনে কাজ করা ভাগ্যের বিষয়। অনেকেই হয়তো জানেন না, চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক রোটারিয়ান আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার, প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, এমনকি বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহর বাড়ি হাজীগঞ্জে হওয়া সত্ত্বেও কখনো কোনো সংবাদ বন্ধে এই তিনজন মাথা ঘামাতে দেখিনি বা আমার পাঠানো কোনো সংবাদ অফিস থেকে বন্ধ রেখেছেন এমনটি কখনোই দেখিনি। এটাই কাজের আলাদা মজা। ঠিক এভাবেই যতদিন এই জগতে আছি, থাকবো, ততদিন চাঁদপুর কণ্ঠের ভালোবাসা নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে কাজ করতে চাই--এটাই আমার মনের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়