সৌদি আরবের মদিনার পবিত্র মসজিদণ্ডই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজানকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ অক্টোবর সোমবার সকালে এসব মসজিদের উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় চাঁদপুর সদর উপজেলা মডেল মসজিদেরও উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করা হয়।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে ‘৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন এবং জাতীয় ইমাম সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণ-২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধান একটিসহ তিনটি প্যান্ডেল তৈরি করে সারা দেশ থেকে আসা ইমামগণের উপস্থিতিতে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমে পবিত্র মসজিদণ্ডই-নববীর ইমামের সঙ্গে অন্য দুটি প্যান্ডেল পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী এবং মসজিদণ্ডই-নববীর ইমাম উভয়ই সমবেত ইমামদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ইমাম সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য ইমামদের ধন্যবাদ জানান এবং দেশ ও জনগণের মঙ্গল কামনা করার জন্যে তাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যে, সরকারের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন যেন অব্যাহত থাকে। প্রধানমন্ত্রী দুই পবিত্র মসজিদের হেফাজতকারী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকেও ধন্যবাদ জানান। পরে মূল অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

সোমবার নতুন ৫০টি মসজিদ উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৬৪টির মধ্যে ৩০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র চালু হলো। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়, ১৬ মার্চ তৃতীয় পর্যায়, ১৭ এপ্রিল চতুর্থ পর্যায় এবং ৩০ জুলাই পঞ্চম পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।

২০১৪ সালে ব্যক্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির পর সরকার ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিল।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ৪৩ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি মডেল মসজিদ এবং ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ওজুর জন্যে আলাদা জায়গা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় নামাজ আদায়ের সুবিধা রয়েছে।

এছাড়াও হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র এবং ইসলামী গ্রন্থাগার, অটিজম কর্নার, দাফন কার্যক্রমের ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্মেলন কক্ষ এবং ইসলামিক দাওয়া, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র এবং দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্যে বোর্ডিং সুবিধা রাখা হয়েছে।

মসজিদণ্ডই-নববীর ইমাম শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-বুয়াইজান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তরিকত ফাউন্ডেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মাওলানা ড. মুহাম্মদ কফিলুদ্দিন সরকার সালেহী ও মাওলানা এহসানুল হক আল মোজাদ্দেদী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক সচিব মোঃ এ হামিদ জমাদ্দার।

প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত, উপজেলা ভূমি অফিসার মোঃ হেদায়েত উল্লাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী বেপারী, রামপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আল মামুন পাটওয়ারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সদর উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মোঃ জাহিদুল হক, জেলা ইমামণ্ডমুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওঃ মোঃ আবদুর রহমান গাজীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাগণ।

ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলা মডেল মসজিদ এবং কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলা মডেল মসজিদের ইমামণ্ডমুসল্লি ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।