সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

সোনার দেশে সোনার জাদুকর
মঈনুল হাসান

ধূসর মৃত্তিকার ধর্ম কে বোঝে? কে বোঝে তার অবসন্ন ক্লান্ত মনের গান কিংবা ব্যথাভরা জরাগ্রস্ত শরীরের যাপন? কেইবা জানে যে মেঘ-মুলুকের জল ছাড়া তার আজন্ম তৃষ্ণা বুকে জমা থেকে যায় কুহক কাহিনীর মতো। বৃষ্টিহীন সবুজের আদিগন্ত মাঠ তখন নিঃশব্দে পরিণত হতে থাকে রুক্ষ-লাল টাঁড় মাটির বীর্যহীন দলায়; শুষ্ক, উশকো- খুশকো কিশোরীর অবিন্যস্ত কেশের মতন খ--বিখ-, নিস্পন্দ, শ্রীহীন। দ্বিধান্বিত মনে সবাই চেয়ে থাকে সেদিকে। ভাবে একটা নির্বীর্যের পরিণতি বুঝি অলস থম ধরে আছে প্রকৃতির সবখানে মুখ বুঁজে। রাত ও দিনের আমোদে যেখানে একটাই উপলক্ষ-মাটি, মাঠ কিংবা মেঠো সুর সেখানে মাঠের কথিকায় জাদুকণ্ঠি সাহসী মানুষ কোথায়? সোনার কাঠি রূপার কাঠির জাদুমন্ত্র হাতে জাদুকর তখন কোথায় লুকিয়ে থাকে? মাঠ কাব্যের নিপুণ কবির অপেক্ষায় অবিরত দিন কাটে সবার।

আকাশের দীঘল জুড়ে গুরু-গম্ভীর মেঘেদের দল একসময় ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে, তারপর নিজেদের শলা-পরামর্শ শেষে এক কোণ থেকে অন্য কোণে অবিরাম হামাগুড়ি দিয়ে যায়। ডানাপন্থী মেঘের বিলাপ শুনে ধুলোর পৃথিবীতে তখন হুল্লোড় ওঠে। বোশেখের পৃথিবীতে তখন শনশন চাবুক পেটানোর মতো হাওয়া বয়। আর মেঘেদের অবিরাম আশকারা দেখে মেঘে-মাটিতে মায়ার মন্থন ঘটে যায়। মৃত্তিকার ঘুম ভাঙানোর বাঁশি হাতে প্রস্তুত জাদুকর নিমিষেই এ ভাষা রপ্ত করে নেয়। মৃত্তিকার ধর্ম পালনে অধীর মৃৎগন্ধি সুঠাম শরীর আনন্দে নেচে-গেয়ে ওঠে আর ওদিকে খুশিতে চকচক করে ওঠে এক জোড়া অপেক্ষারত চোখ। তবে, এ যে শুধু শিরদাঁড়া ক্ষয়ে ফেলা ক্লান্ত কোনো ধূলিপুত্র নয়, বরং মাটির পৃথিবীতে বেঁচে থাকা এক আশ্চর্যরকম অক্ষয় মানুষ, মাটির সাথে সখ্য পাতানো অবিরাম কথা বলে যাওয়া প্রাণের মানুষ। এদের জাদুহাতে ঊষর ভূমিতেও সম্ভাবনা জাগে, মাঠে মাঠে বিপুল পরিধিজুড়ে আন্দোলিত হয় মুকুলিত সুখ। এরাই তো সোনার দেশের শ্যামল মায়ের সোনাবরণ শস্য জাদুকর।

নাগরিক জীবনের যতটুকু প্রাণ ইট-কাঠ-কংক্রিটের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে, এসব শ্রমী মানুষ তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। শত শতাব্দীর শ্রম-ক্লেদ-আশা বুকে সাজিয়ে নতমুখে নিরহংকার বেঁচে থাকে তারা। তাদের জীবনবোধের গভীরতা পরিমাপের মাপকাঠি সহজে পাবার নয়। নাগরিক হুল্লোড়ে এরা সহজে মাথা ঘামায় না। এরা সদা ব্যস্ত থাকে শ্যামল মায়ের বিশাল প্রান্তরজুড়ে-ফুল ও ফসলের মৌসুম শুরু হলে তাদের মুখে নতুন ভাষা ধ্বনিত হয়। হাতে জাদুর মন্ত্র নিয়ে তখনই তারা মাটির গভীরে বুনে দেয় শস্যের বীজমন্ত্র, সাথে আরও বুনে দেয় ভবিতব্য কোনো স্বপ্নের নিবিড় এক শস্যকুসুম। মৃত্তিকার রসায়ন তার জানা, প্রকৃতির জল-হাওয়ার পাঠ তার বোঝা হয়ে গেছে ততদিনে-আর তাই তো অপত্য ¯েœহ নিয়ে হলুদ গোধুলি পর্যন্ত বিভোর মগ্নতায় যতœ-আত্তি করে যায় মাঠের। মাঠের জাদুকর জানে শস্যের সোনালি বীজ একসময় তার নিবিড় পরিচর্যা আর আলো-হাওয়া-শ্রমজলের দামে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে বিস্তীর্ণ মাঠের ফসলে। আর তারপর? গোলাভরা শস্যের বিপুল ভা-ারে। এ ভা-ারের সাথেই শেষে একাত্ম হয়ে থাকে কৃষাণের আকাক্সিক্ষত স্বপ্ন ও শ্রমলব্ধ কাজের দাম।

আসলে দুর্নিবার এক স্বপ্ন বাস্তবায়নে সারাটা বছর জুড়েই এসব শ্রমশীল মানুষের তেপান্তরের মাঠে মাঠে ভিড় লেগে থাকে। সত্যিই তারা ঢিপঢিপ বুক নিয়ে উন্মুক্ত প্রান্তরে অপেক্ষা করে যায় ধ্যানমগ্ন মেঘের; দুরন্ত মেঘ বালকেরÑ ছুটন্ত মেঘ বালিকার। বোশেখ কিংবা জ্যৈষ্ঠশেষে পৃথিবী তার আবর্তনে আবার ফিরিয়ে আনে বর্ষা। চারদিকে জলের থৈ থৈ বিস্তারে শস্যবীজের সাথে মৃত্তিকাকণার সখ্য গড়ে ওঠে নিশিদিন। আর তখনই মাঠে মাঠে দেখা যায় সবুজের হালকা আভাস-সদ্য কৈশোর পেরোনো বালকের মুখের হালকা গোঁফরেখার মতো। শস্যের প্রথম পাঠের সাথে আরও দেখা যায় ঘামেভেজা চাষীর আনন্দকথন। সোনারোদ যেমন ঝকমক করে মাঠের ফুল-ফসলের অন্তÍরে; তেমনি কৃষাণ-কৃষাণীর ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরও রোদের দাহে চকমক করে ওঠে। এ যে এক নতুন প্রাণ সঞ্চারের মহড়া, নিবিড় উদ্দীপনা, জীবনের নতুন জয়গান গাওয়ার প্রস্তুতি।

মাটির মানুষগুলো আজ কীসের বিচারে সোনার মানুষ হলো? অযুত-নিযুত-শত-শত মাঠ-প্রান্তরের ফাঁকে ফাঁকে যে নিভৃত পল্লীগুলো জেগে আছে সেখানেই যে বসত করে এসব নির্লোভ সরল প্রাণের মানুষ। আঁধার যাপন শেষে আধোলাল ঊষার আলোয় যখন চারপাশ আলোকিত হতে শুরু করে তখনই মাটির মহিমা জাগাতে শুরু হয় কৃষাণের ক্লান্তিহীন দিনলিপি। এ দিনলিপি তারা জানে, মেনে চলেও। আর তাই তো কখনও কাঁধে জোয়াল নিয়ে হালের বলদের সাথে অনুগামী হয় মাঠের পানে। কোমরে গামছা আর হাতে থাকে কাস্তে-কৃপাণ। তারা আজ শিখে গেছে ফসল ফলানোর বীজমন্ত্র। তাদের করতলে লেগে থাকা নবীন শস্যবীজের ঘ্রাণ বুকে নিয়ে দিনভর মাঠ চষে যায় আদিম ফলার ঘাতে। মাটির জড়তা ভেঙে ভেঙে মিহি বীজ ছড়িয়ে দেয় হরেক শস্যকুসুমের। ধূসর মাঠের পরতে পরতে রচিত হতে শুরু করে আগাম ফুল-ফসলের মূর্ছনা, নবীন সবুজের রাগিনী।

সোনার বাংলা যদিও এখন অনেক বদলেছে। এখন আর কাঁধে জোয়াল তুলে নিতে হয় না। জোড়া বলদও নতমুখে ছোটে না মাঠের উদ্দেশে। লাঙলের প্রাচীন ফলাও রূপান্তরিত হয়েছে অতিকায় দানবীয় যন্ত্রের আগমনে, আগ্রাসনে। এই দানব সোনার জাদুকরের ‘হিং টিং ছট’ মন্ত্রবলে পাল্লা দিয়ে ছোটে দারুণ মমতায়। কী প্রচ- তার জেদ, আশ্চর্য তার হুংকার! এ যেন মাঠে মাঠে আনন্দ সুখে বিহারের পালা চলে, গেঁয়ো সুরে ধামালির গান বাজে। ঝুমঝুম শিষের বাজনার সাথে নতুন উৎসবের আগমনী গান বাজে।

নিরন্ন মাটির সন্তানেরা যে একেবারে নির্লোভ, সরল, মাটিবর্তী এ কথা সকলেরই জানা-তা হলেও তাদের গুণের কদর সেভাবে হয় না। কিন্তু, সময়ের পালা শেষে সকল দ্বন্দ্বের প্রমাদ ঘটিয়ে তারা সত্যি হাজির হয়ে যায় ডালাভরা ফসলের নৈবেদ্য নিয়ে। এ কি দিগন্তজোড়া ফসলের নান্দীপাঠ নাকি রাশি রাশি সোনার সুবর্ণকীর্তন? বেলাশেষে তাই মাঠের খেলা সাঙ্গ হলে ভাটি ও ভাঙনের দেশে তাদের গুণের গরিমা একটু হয় বৈকি! আমাদের এ সোনার বাংলায় সকলের মুখে অন্ন জোটানোর এ মানুষগুলোকে নিয়ে গরিমা না করলে আর কাকে নিয়েইবা অহংকার চলে? তারাই তো যুগ পরম্পরার অনার্য কুলীন সন্তান। স্বেদের দামেই দিনশেষে মহামূল্যবান মণি-মানিক্যের মতো তাদের গুণের বিচার করতে হয়। সোনার বাংলার তারাই তো সবচেয়ে বড় সাধক।

ক্ষেত-মজুরের বিচ্ছিন্ন স্বপ্নগুলো আমাদের সম্মিলিত স্বপ্ন হয়ে আজও বেঁচে আছে। তবে সত্যিই কি বেঁচে আছে? হয়তো ক্ষত বিক্ষত হয়ে দুমড়ে মুচড়ে বেঁচে থাকে। কৃষাণের স্বপ্ন মাঝে মাঝে হোঁচট খায় অঙ্কুুরে-একেবারে স্বপ্নের আদি পর্বে, যখন প্রকৃতি বিরুদ্ধ আচরণ করে। সে স্বপ্নের মাঝে হঠাৎই হানা দেয় প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল, ছোবল হানে অনিবার্য দুর্যোগের ঘনঘটা। প্রকৃতির সেই অদ্ভুত খেয়ালে হঠাৎই অন্যরকম হয়ে যায় আকাশের মন। আকাশের সেই আজব খেয়ালে কখনও শুরু হয়ে যায় মেঘে আর হাওয়ায় পাল্লা। কালো মেঘের শামিয়ানা টানিয়ে উদ্দাম হাওয়া তখন দাপিয়ে বেড়ায় মুঠি মুঠি সোনাফসলের প্রান্তরে। মেঘের নিনাদ আর উত্তুঙ্গ হাওয়ার সে কী অবিরাম খুনসুটি! নাকি হাওয়ার কথার পিঠে শনশন চাবুকের মতো কথার কাটাকাটি? ক্ষেতের কাছে কান পাতলে অহর্নিশ ঝুমঝুম বাজনা শোনা যায় সোনালি শিষের। আর তখনই সে বাজনা ছাপিয়ে বাজখাঁই গলায় ডেকে ওঠে বাজ। উন্মাদ হাওয়ার সাথে আলোর উজ্জ্বল ঝলকানি চলতে থাকে কৃষাণের অসহায় মুখকে উপেক্ষা করে। কিন্তু, সবকিছু সামলে শ্রমোপজীবী মানুষ সন্তানের মতোই আগলে রাখে তার লালিত স্বপ্নের মাঠ।

মাটির কৃষাণ অবশেষে মাটির সাথেই সখ্য পাতায়-ফসলের মতো ভেঙে নুয়ে মুষড়ে পড়ে না। খেয়ালি এ খেলা শেষেও সাহস নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। এ সাহস তো প্রকৃতিই দিয়েছে তাকে। ভেঙে পড়া এমন মাঠের চিত্র মাঝে মাঝেই আসে বাংলার কৃষাণের ঘরে। তারপরও মাটির গোপন জঠরে লুকিয়ে থাকা সমস্ত ঐশ^র্য নিংড়ে সোনার ফসল ঢেলে দেয় প্রকৃতি। তখন মনে হয় বিপুল ঐশ^র্যের ভা-ারে যেন কোনোই কৃপণতা নেই তার। রুক্ষ মাটির কণায় কণায় শুধুই সতেজ প্রাণের আভাস, সরস কথার বান। বোশেখ-জ্যৈষ্ঠের খর রোদে তাতা অবশ ক্লান্ত শরীরটা একটু ভিজিয়ে নিতে, একটু স্বস্তির নিশ্বাাস নিতেই যেন তার এ দিগন্তপ্লাবী আয়োজন কিংবা বর্ষারাণীকে আগাম আমন্ত্রণ। আর এভাবেই বাংলার মাটি, মাটির অংশীজন আর উদার-অনুদার প্রকৃতির সাথে একটা পারস্পরিক অলিখিত সমঝোতা হয়ে যায়।

কৃষাণ-কৃষাণীর দল তাদের আশাভঙ্গ মনের পাঁজরভাঙা কষ্ট বা হাহাকার বুকে নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেও শেষে কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না তাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন বুননের পথে। নিটোল প্রকৃতি আবার আলগোছে নিজেকে গুছিয়ে নিলে শুরু হয় চটক রোদের দিনভর আনাগোনা। শ্রমসাধ্য এ কাজে কৃষাণের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় ঠিকই, কিন্তু প্রাণে স্বপ্নের সঞ্চার ঘটে ষোল আনা। মনকে আশ^াস দিয়ে ভাবে, কপট প্রকৃতি বঞ্চনা করলেও আবার উঠে দাঁড়াবে তারা। প্রকৃতি ছলনা করলেও তার কাছেই ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো গতি নেই তাদের। কৃষাণের এই ভাবনা কোনো সংক্ষুব্ধের নয়, বরং প্রকৃতির কাছে এক সহজ সমর্পণের। আর এভাবে প্রান্তিক কৃষাণের স্বপ্ন বেঁচে ওঠে হয়তো তার সাথে আমাদেরও।

স্বপ্নসৌধ রচনার চূড়ান্ত পর্বে সারা মাঠ জুড়ে যখন ‘হলদিকোঠার গান’ বেজে ওঠে তখনও অনেক অনিশ্চয়তা ভাবনায় আসে কৃষাণের। সত্যি, তারা কি পারবে সব নিজের মতো করে ঘরে তুলতে? কিংবা সাধ্যানুযায়ী সব বিকিয়ে দিয়ে পাবে কি তার শ্রমজলের কিঞ্চিৎ ন্যায্য দাম? অথবা তাদের উৎপাদিত পণ্য-পসরার বিনিময়ে পাস্তুরিত শ্রম কি ফিরে পাবে অনুকূল অর্থের সম্ভারে? সোনার বাংলায় মোট শ্রমশক্তির অর্ধেকেরও বেশি এসব শ্রমী মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে। ভবিষ্যতের আরও টেকসই সোনার বরণ দেশ সাজাতে প্রত্যক্ষ উন্নয়নের চাবিকাঠি তো এদেরই হাতে। তাই এসব শ্রমশীল মানুষ সাধারণের ¯েœহচ্যুত, দৃষ্টিচ্যুত হতে পারে না।

কৃষি, কৃষাণ, মাটি সবই তো একে অপরের সম্পূরক সত্তা-তাদেরকে সংকট বা আস্থাহীনতায় রেখে সোনার ফসল ফলবে কী করে? তাই ক্ষেতমজুরের লালিত স্বপ্নকে সার্থক করতে সরাসরি তাদের হাতে ফসলের দাম তুলে দেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টাই হবে সঙ্গত। উৎপাদক হিসেবে সত্যিকার মানুষের কাতারে শ্রেণিবদ্ধ করে যথার্থ সম্মান, অধিকার ও মূল্যায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে দ্বিধাহীনভাবে। একেবারে প্রান্তজনের দ্বারে পৌঁছে সহজ কোনো রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলে সমতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে শ্রমী মানুষকে নিয়ে আসতে হবে আস্থা ও ভালোবাসার এক বিন্দুতে। আর সকল ক্ষেত্রে যথার্থভাবে অবলোপন করতে হবে স্বার্থলোভী বেনিয়া শ্রেণি। তবেই হয়তো কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।

বিরুদ্ধ প্রকৃতি কিংবা স্বার্থান্বেষি শ্রেণি সবকিছুকে পায়ে দলে মাঠের সূর্য সন্তানেরা এভাবে অনাদিকাল ধরে এঁকে যায় তাদের বিলীন হওয়া সব স্বপ্ন-সাধের চিহ্ন। প্রকৃতির নিদারুণ বৈরীতা উপেক্ষা করে তারা তখন আকাশ ছোঁয়ার বাসনায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। দৃঢ়চেতা মন আর মুষ্টিবদ্ধ হাতে স্বপ্নের মশাল জ্বালিয়ে ভাবে, সোনার বাংলার প্রতি ইঞ্চি ভূমিতে ফিরিয়ে আনতে হবে প্রাণ। এ স্বপ্ন আর মহৎ ভাবনার মিশ্র অনুভূতি ঠিকরে আসা আলোর মতো উজ্জ্বল হয়ে একসময় আরও উজ্জ্বলতর হয় অগুনতি মুখে মুখে। আর তখনই তাদের চোখের তারায় নিভে যাওয়া আশার আলোর চকমকি পাথরটা দপ করে জ্বলে ওঠে আবারও। শাশ^ত বাংলায় এমন অগণ্য শ্রমী মানুষ সারা বছর শ্রমের সাথে যুক্ত থেকে কোটি মানুষের মুখে নিশ্চিত অন্নের সংস্থান করে হয়ে ওঠে দিগি¦জয়ী বীর, কোটি মানুষের আশার বাতিঘর। সোনার দেশের এ অনন্য মানুষগুলোই তো আমাদের একমাত্র আশার পিদিম, সোনার দেশে সোনার জাদুকর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়