মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ০০:১১

খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

পীযূষ কান্তি বড়–য়া
খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

তেত্রিশতম পর্ব \

আলোর রেণু বাজায় বেণু

অঁাধারকে আলোয় ঝলমলিয়ে তোলাই জীবন। মায়ের গর্ভে যে পবিত্র অঁাধারে জীবনের ভ্রূণ পৃথিবীর আলো দেখার জন্যে তৈরি হচ্ছিলো একটু একটু করে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে সেই কাঙ্ক্ষিত আলোয় ঝলমলিয়ে তোলাই হলো জীবনের ব্রত। জাতকের জীবন এখানে আলোকায়নযোগ্য পাত্র আর জাতকের পরিপার্শ্ব হলো আলোকায়নের উৎস। তারা কেউ অনন্ত নক্ষত্রবীথি, কেউ জ্যোতিষ্কের মহাপুঞ্জ আর কেউ বা হয়তো মোমের আলো বা জোনাকি। তাদের সকলের রেণু-রেণু আলোয় ভরে উঠে জাতকের গর্ভ--অঁাধারের জীবনক্ষেত্র, বেজে উঠে জীবনের আলোর বেণু। ধূলি ধূসরিত ধরণীর ধনবতী ধূলিতলে জীবনের চাকা চলতে চলতে সময় আমাকে উপনীত করে এক গুম্ফিত প্রৌঢ় আলোকাধারের কাছে। তঁার গুম্ফ বয়সের অভিজ্ঞানে শুভ্র, শখে ও পরিচর্যায় অসি আকৃতির দীর্ঘ ও বঙ্কিম। তঁার বিচরণ সন্ধ্যা সমাগমে, তঁার নিদ্রা সকালকে চেপে ধরে আপন শয্যায়। তঁার নাম শরদিন্দু দস্তিদার। তঁার পুত্র কবি ত্রিদিব দস্তিদার। বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কবি। শরদিন্দু দস্তিদার ছিলেন বাবার আংকেল। কিন্তু আমাদের পরিবারেও তিনি ছোট-বুড়ো সকলের আংকেল হিসেবেই পরিচিত। আমার বাবার আংকেল আমার কাছেও আংকেল। আমার মায়েরও আংকেল, আমার দিদিরও আংকেল। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো খর্বকায় কিন্তু তঁার মতোই দ্যুতিমান, কর্মপ্রখর। তঁার আলোর নাচনে তৈরি হয়েছিলো আমার ইংরেজি বচন। তঁার ছেঁায়ায় প্রাণ পেয়েছিলো আমার শৈশব শিক্ষা। রোমজাগা খসখসে ওভারকোট ছিলো তঁার গাত্রবাহন, মুখে পাতার চুরুট, হাভানার। স্বরসৃজনে টের পেতাম তঁার শক্তির বিস্তার। মেঘমন্দ্র নাকি সিংহ-সবল তা নিয়ে ধন্দ লাগতো। তঁার বয়স ও দৈহিক অবয়বে বোঝার উপায় ছিলো না, এ শব্দের ডিনামাইট কোথায় আড়াল করা। আমার শৈশবের সন্ধ্যা তঁার মতো দিনমণি-প্রখর এক জ্যোতির্ময়ের সান্নিধ্যে আলোকিত হতো। আরও একটু বড়ো হলে পরে তখন জেনারেল এম এ জি ওসমানীর মুখের আদলে খুঁজে পেয়েছিলাম আমার শৈশব-সূর্যের সাযুজ্যকে।

আশীষ সেন। ক্ষীণকায়া দীঘল দেহ। একমাথা কেঁাকড়ানো লহরপ্রতিম চুল। যেন অশাখ তালতরুর অগ্রশীর্ষ হতে ঝুলে আছে নির্মাণ শিল্পী বাবুইয়ের অগণন বাসা। খেলাঘরে নিবেদিত। সাহিত্য বাসরে তঁার দেখা পেয়ে আমার কলমে জুড়ে যায় আলোর রেখা। অনুপ্রেরণার উপহারে বালক আমি হুট করে পেকে যাই ছন্দ-মাত্রার মনটানা তালে। কলমে ফোটে না আখর কেবল, ফুটে উঠে প্রাণের কথাকারু। দুরন্ত কৈশোর যখন আমাকে টেনে নেয় মাঠে মাঠে, তখন এক আলোর ঝলকানি অবিদিত বেণুর সুরে ডেকে নিয়ে যায় চানমারি রোডে, লালখান বাজারের পাহাড়ের কোলে জেগে থাকা দাবা সমিতিতে। সিংহ বা বাঘ নয়, আমাকে মুগ্ধ করে রাখে হাতি-ঘোড়া-নৌকার চৌষট্টি কক্ষ। যে ঋষি তঁার ঋদ্ধ চলনে, সিদ্ধ স্বপনে কলিকে কুসুমে পরিণত করে চলেছেন খুদে খুদে দাবাড়ুর কানন-কান্তারে তঁার নাম সৈয়দ জাহেদ মনসুর। সংক্ষেপে এস জেড মনসুর। সবার কাছে তিনি আংকেল। আমার কাছেও তাই। অথচ তখন আমার যে বয়েস, তাতে নিশ্চিত, তিনি আমার দাদুর সমান। কিন্তু তিনিও গণ-আংকেল। একাকী কাজ করতে করতে বিরামের শিসে তিনি তাড়াতেন ক্লান্তির বিষ। বোর্ডে বোর্ডে অলক্ষ্যে দিয়ে যেতেন ঘাটতি থাকা ঘুঁটি কিংবা ঘড়ির চালান। খুদে দাবাড়ুদের উৎসাহ দিতে বোর্ডে ঘুঁটি নিয়ে বসে যেতেন বিনা আয়াসে। সেই প্রবীণ সূর্যের স্নিগ্ধ রশ্মি আমার কৈশোরকে করেছিলো অনিন্দ্য আলোকনে আলিম্পিত।

স্কুলের শিক্ষক এফ রহমান। শুনেছি, তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য। পুরো নাম ফজলুর রহমান। আমাদের পিটি শিক্ষক। তঁার হাতে ন্যস্ত ছিলো আমাদের কাবস্ আর স্কাউটিংয়ের গুরুভার। তঁার হাতে পড়ে চুম্বকের মতো বিন্যস্ত হয়ে উঠে জীবনের শৃঙ্খলা। সময়ানুবর্তিতা, স্বনির্ভরতা আর শৃঙ্খলার সমন্বয়ে জীবন-কুসুমের উদ্গম্যতা তঁার হাতেই সূচিত হয়। তঁাবুতে তঁাবুতে জীবনকে বিনির্মাণের যে নান্দনিকতা, তিনিই তার সুরভি আমাদের বিলিয়েছেন। উড্ ব্যাজধারী এ শিক্ষকের স্বপ্ন ছিলো আমাকে প্রেসিডেন্ট স্কাউট হিসেবে স্বীকৃতি পেতে দেখা। তঁার মনের আলোয় আমার জীবনের অঁাধার খানিকটা দূর হয়েছিলো ফটিকের বয়স অতিক্রমকালে।

সমরেশ চক্রবর্তী ছিলেন আমার গৃহশিক্ষক। শিক্ষকের চেয়েও দাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অধিক। তিনিই স্বপ্নের এক বীজ রুয়ে দিয়েছিলেন আমার মনের গভীরে। গণিত, বিজ্ঞান, ভূগোলের আগাছা নিড়ানি দিয়ে তিনি আমার শিক্ষার ক্ষেত্রকে এমনভাবে চাষ করেছিলেন, যেন বীজ ফেললেই ফলে উঠে জ্ঞানের শস্য, সাফল্যের সম্ভার। গণিত যে উপভোগের বিনোদন, তা বুঝতে পারি জহিরুল হক স্যারের কাছে। জ্যামিতির ভীতি তঁার জাদুতে পরিণত হয় পান্তাভাতের মধুতে। উচ্চতর গণিত আর গণিত থাকে না, হয়ে যায় জিলিপি-পান্তুয়া। গাণিতিক যুক্তি আর বিজ্ঞান-চেতনার বিনির্মাণে স্যার হয়ে উঠেন সত্যযুগের ঋষির উপমা।

সংস্কৃতির কনক-আলোয় যিনি আমার মনের গহনে রবিরশ্মির ঝলক লাগিয়ে গেছেন তিনি নাট্যগুরু সঞ্জীব বড়ুয়া। তঁার কণ্ঠের সৌম্যতায় আমাদের মতো অর্বাচীনেরও লুকোনো দক্ষতা প্রস্ফুটিত হয়ে যায় মঞ্চের আলোক প্রক্ষেপণে। নাটককে জেনে উঠি তঁার সৌহাদের্য। নাটক যে গণমানুষের হাতিয়ার, সে শিক্ষা তঁার কাছে পাওয়া। অলক ঘোষ পিন্টু আরেক দ্যুতিমান নাট্যজন। ঋত্বিকের ‘জ্বালা’য় তিনি যেভাবে আমায় জ্বালিয়ে তুললেন তাতে অনেক জাজ্জ্বল্যমান তারকার মনে ভাবনারা উঁকি মেরেছিলো, এই বুঝি জায়গা ছাড়ার উপলক্ষ তৈরি হোলো। অলকের হাতে পুলকে-পরশে নির্মিত হতে হতে এক সময় মঞ্চের আলো কিছু কেড়ে নিয়েছিলাম আমিও, আপন অঁাধার বিনাশী হওয়ার অভিপ্রায়ে।

খেলার মাঠে শ্মশ্রুমণ্ডিত সফেদ সুলতান ভাই নিজের শ্রম ও সময় বিনিয়োগ করে চেয়েছিলেন কাউকে তারকা বানানো যায় কি না। ‘ইয়াং স্টার’ নামে বালকদের ক্লাব তৈরি করে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াতেন তিনি প্রতি অপরাহ্ণে। তিনিই শিখিয়েছেন, স্লিপে ফিল্ডিং দেওয়া, ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ঝুঁকি ও ঝক্কি সামাল দেওয়ার কঠিন দায়িত্বগুলো কতো সহজ। টেবিল টেনিসের ছোট টেবিলে একজন নোমান ভাইকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। র‍্যালি করা, কিল করা, লুপ খেলা, টপ স্পিনের জাদু দেখানো সবই তঁার প্রশিক্ষণের আলোর রেণুতে পাওয়া।

সাইদ আহমেদ বাবু ভাই আমার জীবনে আলোর রেণু এনে দেওয়া আরেক জ্যোতির্ময়। মেডিকেল ভর্তি কেচিংয়ের সময় তঁার সাথে পরিচয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ কিন্তু ঢাকার কলাবাগানে থিতু হয়েছেন। তিনি আমার ভেতরের শিক্ষকতার দক্ষতাকে শাণিত করে জ্বলজ্বলে করে তুলেছেন। ক্লাসভর্তি শিক্ষার্থীদের কাছে নয়নমণি হয়ে ওঠার দীক্ষা তিনি আমায় দিয়ে আলোয় জাগিয়ে তুলেছেন। জ্ঞানের জগতে তিনি আমাকে বিলিয়ে দেওয়ার মন্ত্র দিয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার পথ দেখিয়েছেন। অবেদনবিদ নাজিম ভাই আমার চেয়ে ঢের বড়ো কিন্তু আমাকে সমীহ করতেন স্নেহ ঢেলে। তঁার শক্তি আমার জন্যে পথ পেরুনোর দ্বিচক্রযানের মতো।

চরণদ্বীপের কর্ণফুলি পেরিয়ে, মস্কোর মস্কোভার সওগাত নিয়ে আমি উপনীত হই মেঘনার কাছে। মেঘনা আমায় এনে দিলো একজন নৃপেন্দ্র লাল আচার্যীর মতো পিতৃব্যের কাছে। তঁার আপ্রাণ প্রয়াস ছিলো রোগী মহলে আমাকে পরিচিত করে তোলার। তঁার রোগীদের তিনি আমার রোগী বানিয়ে দিতেন। যে রোগী তঁার কাছে যেত স্যালাইনের আশায় তিনি তাদের আমার কাছে পাঠিয়ে আমার ভক্ত করে তুলতেন। আমার প্রচার-প্রসারে তিনি এক হ্যাজাক বাতির মতো। রিয়াজ ভাই ‘সূর্যের হাসি’র হাসি মেখে আমার সাথে পথ চলেছেন বেশ কিছু সময়। যেখানে তার বলার কথা, সেখানে ভালোবেসে, শ্রদ্ধায় মাইকের সামনে দঁাড় করিয়েছেন আমাকে। চট্টগ্রামে অনেক আগে থেকেই মাইকজয়ী হলেও চঁাদপুরে তখনও মাইক আমাকে বুঝে নেওয়ার সুযোগ পায়নি। আমাকে কলম হাতে জানার আগে মাইকের সামনে জানা হয়ে উঠলো অনেকের এই রিয়াজ ভাইয়ের বদৌলতে। অনুজ সাগরের নামও নিতে হয় তার আগে। আমি যে সঞ্চালক, মেঘনা পাড়ে সাগরই তা জানান দিয়েছে সবার আগে, বিএমএ-তে। মাইকের সামনে দঁাড়াতে দঁাড়াতে মাইকজয়ী আরেক বাগ্মী কাজীর নজরে আসি আমি। বুদ্ধদেবের হাতে পড়ে জীবনানন্দ যেমন বিখ্যাত ‘কবিতা’য় কবি হয়ে উঠলেন ‘বনলতা সেন’ এর বদৌলতে, তেমনি কাজীর হাতে পড়ে আমারও সব্যসাচী হয়ে ওঠা হলো কলমের জোরে। এ কাজী বলাখালের কাজী বাড়ির খুদে কাজী। কিন্তু তার কাজের ভারে তিনি এখন ভীমের মতো ব্যক্তিসত্তার অধিকারী। তার যারা নিন্দুক তারাই তার গুণমুগ্ধ। তার পেছনে যারা তাকে ব্যবচ্ছেদ করে রং মিশিয়ে, তারাই আবার অন্যের কাছে তাকে তুলে ধরে নিজের গৌরবকে সমুন্নত রাখতে। অর্থাৎ এই কাজী যার মাথার মুকুট তারই আবার মনের কন্টক। ঈর্ষা আর সমীহের এ এক আশ্চর্য মিশেল। অনন্য যোগ্যতা না থাকলে এই অভূতপূর্ব অবস্থান অসম্ভব। চঁাদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক এই কাজী শাহাদাত ভাইয়ের হাতে পড়ে আমার জীবনের আলোয় যুক্ত হলো বর্ণিলতা। সাদা আলোয় যেন প্রস্ফুটিত হয়ে উঠলো বিবিধ বর্ণালী। যিনি আমার লেখার একনিষ্ঠ পাঠক, যঁার স্নেহের চোখে আমার লেখার প্রতিটি শব্দ মূর্ত হয়ে উঠে তিনি আমার মুনির ভাই। তঁার পুরো পরিবারই আমার চিকিৎসা গ্রহণে অগ্রণী। আমার চিকিৎসক হিসেবে নামের প্রসারে মুনির ভাই হলেন জেনু ভাইয়ের মাইকের মতো সরব। তঁার প্রজ্ঞার আলো তিনি আমার অঁাধারপ্রবণ জীবনের ওপর আপতিত করে আমায় বিমুক্তির পথে এগিয়ে দিয়েছেন ভালেবেসে।

আমাকে সামনে এগুনোর সিঁড়ি বাড়িয়ে দিয়ে সূর্যের আরও একটু কাছে যিনি উঠিয়ে দিলেন, তিনি চঁাদপুরের স্বনামধন্য জেলা প্রশাসক, চঁাদপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের রূপকার গাইবান্ধার কৃতী সন্তান জনাব আবদুস সবুর মন্ডল। তিনি নিজে আলোর উৎস হয়ে আমার জীবনের ওপর আলোক সম্পাত করলেন পরম স্নেহে। ইলিশের ছড়াকার হয়ে ওঠা তঁার বদৌলতেই সম্ভব হলো। চঁাদপুরকেন্দ্রিক সকল বিষয়ে ইলিশকে অন্তর্ভুক্ত করার অভূতপূর্ব পরামর্শ তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। জনপ্রশাসন পদক অর্জনের পর তঁার পরিবারের একজন হিসেবেই আমি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করি। জনপ্রশাসন পদক অর্জনের পথে লেখালেখির অনেক বিষয়ে তিনি আমার ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন পরম আস্থায়। মেঘনাপাড়ের ভুবনজয়ী মেয়ে দীপু আপা মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধনকালে আমার ইলিশের ছড়া নিজকণ্ঠে ধারণ করে আমাকে আজীবন কৃতজ্ঞ করে তুলেছেন। তঁার মতো একজন ভাষাবীরের কন্যার কণ্ঠে আমি অকৃতি অধমের ছড়া সম্মানিত হওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে। তঁার এই স্নেহ অপার্থিব। বিধাতার বরে পাওয়া।

দুহাজার ঊনিশ সালে আটাত্তর বছরে প্রয়াত হয়েছিলেন পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন গীতিকার, সুরকার ও সংগঠক। তঁার নামের সাথে আমার নামের মিলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তঁাকে ও আমাকে সমানভাবে। তিনি মনে করতেন আমার কারণে অনুষ্ঠানাদিতে তঁার ডাক পড়ে কম। ভুল করে তঁার চিঠি আমার কাছে চলে আসে। আসলে তা ছিলো না। চঁাদপুরের অনেক বিজ্ঞজন বক্তব্যের সময় আমাকে রায় চৌধুরী আর তঁাকে বড়ুয়া বলে সম্বোধন করে ফেলতেন। তঁার প্রয়াণের খবর শুনে একজন বিদুষী ভদ্র মহিলা গোপনে তঁার ছোট ভাইকে পাঠিয়েছিলেন খবর নিতে, আমি বেঁচে আছি কি না। যখন সগীর সাহেবের মুখে জানতে পারলেন, আমি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি, তখন তঁার আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ে। তিনি আর কেউ নন, আমাদের পরম শ্রদ্ধার প্রফেসর বিলকিস আজিজ আপা, সাবেক অধ্যক্ষ, সরকারি মহিলা কলেজ, পাবনা। তিনি দৈনিক চঁাদপুর কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক ইকবাল ভাইয়ের উত্তমার্ধ। আমার প্রতি তঁার মাতৃসুলভ স্নেহের কারণে তিনি লোক মারফত ত্রিপিটক চেয়েছিলেন আমার কাছে, পড়ে দেখতে। এ যেন ‘গোরা’ উপন্যাসের আনন্দময়ী আর গৌর মোহনের পুনরাবর্তন। তিনি আমার প্রণম্য মহীয়সী। তঁার অন্তরের আলোয় আমিও আলোকিত হই পুণ্যপ্রভায়।

‘সওগাত’ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের মেয়ে নূরজাহান কিংবা ছেষট্টির আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমেনা বেগমের পরে চঁাদপুরকে যিনি সবচেয়ে বেশি আলোকিত করেছেন, তিনি হলেন স্বাধীনতা পদকে ভূষিত বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী। তঁার স্নেহের আলোকধারাও আমায় আলোকিত করেছিলো অনুক্ষণ। যে কোনো উপলক্ষে আমার বাসায় তঁার স্নেহ ও ভালোবাসা পেঁৗছে যেতো মিষ্টি কিংবা দইয়ের রূপ নিয়ে। এইসব জ্যোতির্ময়-জ্যোতির্ময়ীদের আলোকরেণু আমার জীবন-বেণুকে বাজিয়ে তুলেছে সুরের ধারায়। তঁাদের কাছে আমার ঋণ অপরিমেয়। এ যে স্নেহের অন্তহীন ফল্গুধারা!

(চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়