প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৩, ০০:০০
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে শাহাদাতবরণকারী ৯জন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরকোটে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে এখানে নির্মিত হয় নাসিরকোট শহীদ সমাধি সৌধ। ১৯৮১ সালে সৌধটি নির্মাণ করা হয়। এটি হাজীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে একটি অজপাড়াগাঁয়ে অবস্থিত। গত ৪ দশকে উন্নয়নের কিছুটা ছোঁয়া পেলেও বর্তমানে সৌধের ছাদটি ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নাসিরকোট উচ্চ বিদ্যালয়টি সাব সেক্টর ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই স্থানটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নানা ঘটনাবহুল স্মৃতি বিজড়িত।
হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আঃ রব খোকন বি.এস.সি. বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জেলার বিভিন্ন স্থানে শহীদ হওয়া এমন ৯জনকে সাব সেক্টর ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব থাকা তৎকালীন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আঃ সামাদ পাটওয়ারী, সেক্রেটারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সামছুল আলম, সংগ্রাম কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছ বেপারীসহ স্থানীয় ও হাজীগঞ্জের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা নাসিরকোটের এই সমাধিস্থলে সমাহিত করেন। তিনি আরো বলেন, এখানে যখন সমাহিত করা হয়, তখন স্থানটি ছিল অনেক নিচু। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মাটি কেটে তা উঁচু করে প্রথমে বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে সামাধি সৌধটি নির্মাণ করা হয় এবং ১৯৯৬ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে পুনরায় সংস্কার ও শহীদদের পরিচিতি সম্বলিত নামফলক বসানো হয়। এরপর যত সরকারি কর্মকর্তা এখানে দায়িত্বে এসেছেন, প্রত্যেকেই স্মৃতিসৌধের জন্যে কাজ করেছেন।
সরজমিনে দেখা যায়, এই সমাধি সৌধে মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারীদের মধ্যে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন : এমএ ইলিয়াছ হোসাইন (অলিপুর), এমএ রশিদ গাজী ( কির্ত্তনখোলা), এমদাদুল হক (সেন্দ্রা), আবু তাহের (সুবিদপুর), জয়নাল আবেদীন (লোধপাড়া), এএম জহিরুল হক (সমেশপুর), জাহাঙ্গীর আলম (রাজারগাঁও), মোঃ জয়নাল আবেদীন (রাধাসার) ও এমএ মতিন (রাজাপুর)।
এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় নাসিরকোট শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ। তার পাশে বিনোদনের জন্যে নাসিরকোট পার্ক ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক পাঠাগার। এ ছাড়াও রয়েছে নাসিরকোট উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরকোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাঠ ও পুকুর।
সমাধি সৌধটি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে পর্যটকদের মাঝে। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস জানতে দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শত শত শিক্ষার্থী ও নানান পেশার মানুষ ভিড় জমায়।