সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ০০:০০

অবহেলিত হাইমচর এখন উন্নয়নের রোল মডেল
মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনি ॥

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের অন্যতম জনপদের নাম হাইমচর। যে স্থানের নাম শোনামাত্রই মানুষ ভাবতো চরাঞ্চল, তা এখন পৌরসভা না হতেই উন্নয়নের ছোঁয়ায় শহরে রূপ নিয়েছে। ভিঙ্গুলিয়া থেকে জালিয়ার চর পর্যন্ত কোনো গ্রাম কিংবা মহল্লা বাকি নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মেঘনার করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে মানুষ যখন হতাশায় নিমজ্জিত, তখনই পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে হাইমচরের অভিভাবক হিসেবে হাল ধরলেন ডাঃ দীপু মনি। শুরু করলেন নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে হাইমচরবাসীর স্বপ্ন পূরণের কাজ।

জানা যায়, হাইমচরের মূল ঐতিহ্য ধারণ করে ছিলো সাবেক হাইমচর বাজার। ব্যাংক, হসপিটাল, থানা, উপজেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলো ছিলো সেখানে। কিন্তু সাজানো সকল ঐতিহ্য ধূলিসাৎ হয়ে মেঘনা গর্ভে বিলীন হয়ে যায় তৎকালীন উপজেলার প্রাণকেন্দ্র। হাজার হাজার পরিবার মেঘনার করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে হয়েছেন সর্বস্বান্ত। তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ জিও ব্যাগ ফেলে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে হাইমচরবাসীকে রক্ষা করতে চাইলেও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি সে বাঁধ। প্রবল স্রোতের কবলে ভেসে গিয়েছে জিও ব্যাগ, আশার থলিতে জোটে পুনরায় হতাশা।

অবশেষে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাঃ দীপু মনিকে হাইমচরের অভিভাবক হিসেবে সংসদে পাঠান সর্বস্তরের জনগণ। তিনি সর্বপ্রথম প্রায় সাড়ে ৩শ' কোটি টাকা ব্যয়ে হাইমচরবাসীর প্রাণের দাবি মেঘনা রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন। সেই থেকে হাইমচর পেয়েছে নতুন প্রাণ আর সর্বত্র ফিরে এসেছে সজীবতা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো অবকাশ আর নেই।

ডাঃ দীপু মনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন হাইমচরকে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ ও দক্ষ শিক্ষক সহ শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। প্রতিটি পরিবারের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে গ্রাম ও মহল্লায় ক্লিনিক স্থাপন করেন। ঝড়-তুফান কিংবা জলোচ্ছ্বাস থেকে হাইমচরবাসীকে নিরাপদ রাখতে সর্বত্র নির্মাণ করেন আশ্রয় কেন্দ্র সহ বিভিন্ন ফ্লাড শেল্টার সেন্টার। যাতায়াতের পথ সহজ করতে প্রতিটি কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, পাকা রাস্তা সংস্কার ও বৃদ্ধি করে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলেন। চাঁদপুর থেকে হাইমচরে যাতায়াতে হাইওয়েরূপাী সড়কসহ নানামুখী উন্নয়নে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন সর্বদাই।

উপজেলার ঢেলের বাজার থেকে চরভৈরবী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ রাস্তায় মানুষ চলাচল করতে ভয় পেতো। সে রাস্তা ছিল চলাচলের অনুপযোগী। সে রাস্তাটি এখন হাইওয়েরূপী সড়ক। যার মাধ্যমে চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর সহ নোয়াখালী জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে। হাইমচরের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের জন্যে পাড়ি দিতো দেশের বিভিন্ন জেলা শহর ও রাজধানী ঢাকায়। হাইমচর মহাবিদ্যালয়কে সরকারি কলেজে রূপান্তর করে, ডিগ্রি মানে উন্নীত করে সে সমস্যার সমাধানও করেন তিনি।

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’-এর আওতায় হাইমচরে শতভাগ বিদ্যুৎ ও প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন করে সমগ্র উপজেলাকে আলোকিত করা হয়েছে।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করে মধ্যচরে বসবাসরত মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যা চরবাসী কখনো কল্পনা করেনি। হাইমচরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল উন্নত স্বাস্থ্যসেবা হাতের নাগালে পাওয়া। বর্তমান সরকারের শাসনামলে প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন ও বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। সেই সাথে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কে ৫০ শয্যায় উন্নিত করতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাইমচরে এসে মেরিন ড্রাইভ ও অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দেন। হাইমচরকে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ। সেই সাথে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ‘গ্রাম হবে শহর’-এর আওতায় উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে।

এক সময়ের অবহেলিত হাইমচর আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আজ থেকে একযুগ পূর্বেও এ উপজেলার মানুষ অস্তিত্বহীনতায় ভুগেছে। স্থায়ী বাসিন্দাদের অনেকের ভিটেমাটি ১০/১৫ বারও বিলীন হয়েছে সর্বনাশা মেঘনা গর্ভে। অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে ছেড়েছেন এই জনপদ। পাড়ি দিয়েছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে। টানা ক্ষমতায় থাকায় নানামুখী উন্নয়নে কালের বিবর্তনে সময়ের পরিক্রমায় এক সময়ের নিস্তেজ অবহেলিত উপজেলায় প্রাণ ফিরে এসেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়