প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ০০:০০
প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর একটি সাধারণ লক্ষ্য থাকে পুঁজি নিরাপদ রেখে নিশ্চিত লাভ করা। ভালো শেয়ার বাছাই করার আগে বিনিয়োগকারীদের জানতে হবে কোম্পানির অতীত, বর্তমান ইতিহাস, এর সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের ব্যবসায়িক সততা, দক্ষতা, কোম্পানির বাজার পরিধি।
আমরা আমাদের আজকের ভালো মৌল ভিত্তির শেয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিম্নের ১০টি লক্ষণ বিবেচনা করবো।
১। ভালো প্রবৃদ্ধি : আমাদেরকে প্রথমেই ভালো প্রবৃদ্ধির কোম্পানিগুলো শনাক্ত করতে হবে। তারপর কোম্পানির গত ৫ বছরের আয় ধারাবাহিক ভাবে বেড়েছে কিনা দেখবো। আমাদেরকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখতে হবে, তা হলো কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ। কারণ দক্ষ পর্ষদ একটি কোম্পানিকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। কোম্পানি যেসব পণ্যের উৎপাদন বা ব্যবসা করে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী এবং কেমন হতে পারে তা অনুমান করতে হবে। এছাড়াও কোম্পানির PE রেশিও, High Return এবং EPS দেখলেই আমরা নিজেরাই ভালো কোম্পানিগুলো শনাক্ত করতে পারবো।
২। কম দায় : আমাদেরকে কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে কোম্পানির দায়। এই দায় কোম্পানির লাভ খেয়ে ফেলে। ফলে প্রতিষ্ঠান ভালো ব্যবসা করলেও ঋণ দায়ের কারণে ভালো লভ্যাংশ দিতে পারে না। অবশ্যই কোনো কোম্পানির দায় ০.৫০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। যদি হয় তাহলে বিনিয়োগ তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
৩। বড় বাজার : প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের টার্গেট কতটা বড় খেয়াল রাখতে হবে। কোম্পানিটি মোট মার্কেটের কতো শতাংশ হোল্ড করে তা দেখতে হবে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য বাজার কতো বড় হতে পারে তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ব্যবসায় আগ্রগতি তার ওপর নির্ভর করে।
৪। উচ্চ রিটার্ন : আমাদেরকে সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে উচ্চ রিটার্ন দেওয়া কোম্পানিগুলোর দিকে। যে সকল কোম্পানি গত ৫ বছর যাবৎ ভালো ডিভিডেন্ট দিয়ে যাচ্ছে, সে সকল কোম্পানি নির্বাচন করতে হবে। নিচের পদ্ধতি গুলো দেখে বুঝতে হবে কোন্টি High Return দেওয়া কোম্পানি।
ক। Return on Equity (ROE) : এর ক্ষেত্রে অনুপাত ১০ বা তার বেশি হওয়া উচিত।
খ। Return on Asset (ROA) : এই পদ্ধতিতে কোম্পানির বর্তমান সম্পদ ভিত্তিক রিটার্ন কী সেটা জানা যায়। মোট আয়কে মোট সম্পদ দ্বারা ভাগ করে বের করতে হয়। একটি কোম্পানি মোট সম্পত্তির তুলনায় কতটা লাভজনক এটি তার সূচক। এ সূচক যত বেশি হবে কোম্পানির অবস্থা ততো ভালো হবে।
৫। যোগ্য নেতৃত্ব্ : আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কারা কোম্পানি পরিচালনা করছে। কারণ যোগ্য নেতৃত্বের ওপর কোম্পানিটির সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। নেতৃত্বের সঙ্কটে থাকা কোম্পানিগুলো কখনো ভালো ফলাফল দিতে পারে না।
৬। প্রতিযোগিতা : বিনিয়োগের পূর্বে আমাদেরকে জানতে হবে, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোম্পানিটির প্রতিযোগী কারা কারা আছে। পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্যে ভাল গুণগতমান সম্পন্ন পণ্যের ও পণ্যের ডাইমেনশন নিয়ে ভাবতে হবে। নির্বাচিত পণ্যের Advantage গুলো কী কী আছে তা বের করে দেখতে হবে তার বাজার সম্ভাব্যতা ।
৭। পরিচালকদের মালিকানার অনুপাত : কোম্পানির ডিরেক্টরদের অবশ্যই ৪৫% থেকে ৬০% শেয়ার ধারণ করতে হবে। তাহলেই কোম্পানির গ্রোথ ভালো হওয়ার সম্ভবনা আছে।
৮। সেক্টর নির্বাচন : ভবিষ্যতে কোন্ খাতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে।
৯। নগদ প্রবাহ ও দায় : আমাদেরকে অবশ্যই কম দায় সম্পন্ন অর্থাৎ ০.৫০% শতাংশের কম খড়ধহ বা দায় গ্রহণকারী কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে। অন্যদিকে যে সকল কোম্পানির দায় বেশি তাদের লাভ থেকে ঋণের সুদ বেশি খরচ হয়ে যায়। যে সকল কোম্পানির নগদ প্রবাহ বেশি তারা অন্যান্য কোম্পানি থেকে অনেক বেশি স্থিতিশীল হয়।
১০। অবমূল্যায়িত : আমাদেরকে অবশ্যই অবমূল্যায়িত কোম্পানি গুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। নিম্নোক্তভাবে অবমূল্যায়িত কোম্পানির শেয়ার নির্বাচন করতে হবে :
ক। Price Earning Ratio (PE Ratio) : পিই রেশিও ১৫ বা তার আশেপাশে থাকা স্টকগুলো নির্বাচন করতে হবে।
খ। Price to Book Value ( PB Ratio) : শেয়ারের ক্রয় মূল্য যেন NAV এর তিনগুণের বেশি না হয়।
গ। Price earning to Growth (PEG) : কোম্পানির শেয়ার নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১৫-এর ঊর্ধ্বে কোম্পানির স্টক ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। পিই রেশিও ১০-এর মধ্যে থাকলে ভালো।
ওয়ারেন বাফেট বলেন “১৫ পিই রেশিও-এর ঊর্ধ্বে শেয়ারে বিনিয়োগ কখনও ভালো বিনিয়োগ হতে পারে না”। বিনিয়োগকারী হিসেবে সফলতা পেতে হলে সকল পুঁজি একটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ না করে একাধিক ভাল কোম্পানি নির্বাচন পূর্বক বিনিয়োগই আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে।
ইমেইল : লেখক ও কলামিস্ট : মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার। ইমেইল : [email protected]