প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
ভোজ্য তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি
আটা ময়দা চিনির দাম কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব পড়ছে না
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাঁদপুর চেম্বার সক্রিয় রয়েছে : আলহাজ্ব¦ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম
রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ভোজ্য তেলের দাম। বাজারে আটা-ময়দা, চিনি, চালসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুটা কমলেও এর প্রভাব পড়ছে না খুচরা বাজারে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে খুচরা ব্যাবসায়ীরা বেড়ে যাওয়া পূর্বের দামেই বিক্রি করছেন তাদের পণ্য। অবস্থাদৃষ্টে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, একবার যে জিনিসের দাম বাড়ে তা আর কমতে চায় না কোনোক্রমে। এ কারণে এখনো বেশি দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণকে নিজেদের প্রয়োজনে। দেশে সকল সময়ই পবিত্র রমজান মাসের আগে কিংবা রমজান চলাকালে নানা অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনী সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়ে থাকার যে প্রবণতা ছিলো, তা কিন্তু গত দুই বছর পরিলক্ষিত না হলেও রমজানের পরবর্তী সময় তা ধীরে ধীরে কারণে-অকারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে ভোক্তা সাধারণ মনে করছেন।
|আরো খবর
বিগত দিনের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল। খোলা বাজারে যে সয়াবিন তেল বিগত এক থেকে দেড় মাস পূর্বে বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গত দুদিন আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েই তেলের দাম বাড়িয়েছে লিটারে ৭ টাকা। এক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের সামর্থ্যরে কথা চিন্তা করা হয়নি বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন।
ক্যাবের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯০ টাকা, ২০১৭ সালে ৯২.৫৮ টাকা, ২০১৮ সালে ৯৯.৫০ টাকা, ২০১৯ সালে ৮৮.৪০ টাকা, ২০২০ সালে ১০১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় বর্তমান সময় অধিক দামে ভোজ্য তেল কিনতে গিয়ে অনেককেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ থেকে দাম কমে বর্তমান সময় পাইকারী বাজারে আটা ৩২ টাকা, ময়দা ৪২ টাকা, চিনি ৭৬ টাকা, পাম তেল ১৪০ টাকা, কোয়ালিটি সয়াবিন তেল ১৪৫ টাকা, সরিষার তেল ১৭০ টাকা, মুগডাল ৮০ থেকে ১১০ টাকা, মসুরি এলসি ৮৫ টাকা, দেশী ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
চালের দামও কমেছে কেজি প্রতি ২/৩ টাকা। পুরাণবাজারের পাইকারী ক’টি চাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তেমনটাই পরিলক্ষিত হয়েছে। তাদের মতে, এখন লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। তদুপরি বাজারে কোনো পাইকারী ক্রেতা নেই। পাইকারী ক্রেতা শূন্য চালের বাজার হলেও পাইকারী বাজারে সর্বনি¤œ লোকাল মিনিকেট মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪/৪৫ টাকায়। যা কিছু দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪৮/৪৯ টাকা। আর এলসি স্বর্ণা (ইন্ডিয়ান) গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা, মোট কথা ৪২ টাকার নিচে কোনো চাল মিলছে না পাইকারী চালের বাজারে। এলসি মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। বর্তমান সময় ভারত থেকে চাল আমদানি করায় চালের বাজার অনেকটাই নি¤œমুখী বলে ব্যবসায়ীগণ জানান। বাজার নি¤œমুখী হওয়ায় চাল আমদানিকারকরাও অনেকটা আমদানি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের মতে, ভোমরা, বেনাপোল, হিলি বোর্ডারে গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪০.৫০ টাকায় আর মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৫০.৫০ টাকায়। চাঁদপুরের মোকামে তা আনতে কেজি প্রতি খরচ হয় দেড় টাকা। বাজার কমে যাওয়ার ফলে তাদের আমদানিকৃত চালও লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বর্তমানে পাইকারী বাজারে দিনাজপুরের জিরা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, দিনাজপুর ২৮ জহুরা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা, জহুরা মিনিকেট ৫৫ টাকা, শেরপুরের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা, নওগাঁর বাসমতি বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময় দিনাজপুরের গুটি স্বর্ণা ধানের আমদানি হলে তখন মোটা চালের দাম অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ক’দিন পেঁয়াজের বাজার বৃদ্ধি থাকার পর বর্তমান সময় পেয়াজের ঝাঁজ কমলেও ঝাল কমেনি কাঁচা মরিচের। খোলাবাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৪০/১৫০ টাকা। আর ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা ও দেশী পেঁয়াজ ৫৫ টাকা। আদা দেশী ৮০ টাকা, এলসি ১২০ টাকা। রসুন এলসি ১০০ টাকা, দেশী ৫০ টাকা। ৩০ টাকা হালির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। ২০০ টাকার সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩১০/৩২০ টাকা, আর ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৭০/১৭৫ টাকায়। যা কিছুদিন পূর্বেও হকার দিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০০/১১০ টাকা কেজি দরে।
শীতকালীন শাক-সবজিতে বাজার পরিপূর্ণ থাকলেও দাম অনেকটাই আকাশচুম্বী বলে মনে হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের কাছে। তবুও মুখ বুঁজে সামর্থ্য অনুযায়ী কিনছে সাধারণ মানুষ। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা কম। খুচরা বাজারে শিম ১০০ টাকা, টমোটো ১৪০ টাকা, করলা ৫০/৬০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ টাকা, পটল ৫০ টাকা ও কচুর ছড়া ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছু কমদামে বিক্রি হচ্ছে আলু ১৫ টাকা, কাঁচা পেপে ২০ টাকা। এই দুই সবজি ব্যতীত শীতকালীন ফুলকপিসহ কাঁচা শাকসবজির দাম অত্যধিক বেশি বলে মনে হচ্ছে ক্রেতাসাধারণের কাছে। নি¤œ আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার স্বার্থে জেলা সদরসহ প্রতিটি উপজেলায় টিসিবির ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে বিদেশী পেঁয়াজ (সাইজে অনেকটা বড়) বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, বোতলজাত ২ লিটার সয়াবিন ২০০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মসুরির ডাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ¦ জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিমের কাছে। তিনি বলেন, চাঁদপুর আমদানি নির্ভর বাণিজ্য বন্দর। এখানে তেমন কোনো বড় শিল্প কারখানা নেই। নেই কোনো আমাদানিকারকও। আমাদের ব্যবসায়ীগণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মালামাল আমদানি করে থাকেন। আর এ সকল আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সামান্য মুনাফার ভিত্তিতে তারা দেশের বিভিন্ন মোকামে বিক্রি করছেন বলে ব্যবসায়ী মহলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদপুর মোকামের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। চেম্বার নেতৃবৃন্দ মনে করেন, অধিক মুনাফা নয়, সামান্য মুনাফার ভিত্তিতে মাল কেনা-বেচা করলে ব্যবসার মান যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনিভাবে সুনাম বৃদ্ধি পায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের। তিনি বলেন, চাঁদপুরে কয়েকটি অটোরাইস মিল রয়েছে। এ সকল মিলের চাকা সচল রাখতে ধান আমদানি করতে হয় চাঁদপুরের বাইরের মোকাম থেকে। ফলে মিল মালিকরা চাইলেই চালের বাজার কমাতে পারেন না। আবার বাড়িয়ে বিক্রি করবেন সে সুযোগও থাকছে না। মোকামের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই মিলমালিকদের কেনা-বেচা করতে হবে।
তিনি মনে করেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সকল ব্যবসায়ীকেই ন্যায়ানেীতির আলোকে ব্যবসা করার মানসিকতা থাকতে হবে। ক্রেতা সাধারণকে জিম্মি করে অধিক দামে মালামাল বিক্রি করা কারোই কাম্য হওয়া উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন।