প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাতে জনদুর্ভোগ চরমে
ফরিদগঞ্জে চারদিনব্যাপী টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ১৮ আগস্ট রোববার থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ২১ আগস্ট বুধবার বিকেল পর্যন্ত কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতে ব্যাপক জনদুর্ভোগ তৈরি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু আমন ধানের জমি। টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। গাছপালা ভেঙ্গে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে লাখো মানুষ। পানি বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছে মৎস্য চাষী ও পোল্ট্রি খামারীরা।
রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও গ্রামের কাঠমিস্ত্রী বিল্লাল হোসেন, রুহুল আমিন, এমরানের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বৃষ্টির কারণে গত ৪দিন কাজে যাওয়া হয় নি। দৈনিক হাজিরা হিসেবে তারা ৭০০ টাকা করে আয় করেন। এভাবে বসে থাকা মানেই ক্ষতি। পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের।
বৃষ্টির কারণে কর্মহীন দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন অটোরিকশাচালক সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে লোকজন ঘরের বাইরে আসে না, তাই বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছেন তিনি। পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
পৌর এলাকার চতুরা গ্রামের জাহিদ হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে তার পোল্ট্রি খামারের প্রায় ১৫০০ মুরগির বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে।
পূর্ব বড়ালী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন গাজী বলেন, তিনি ৪০ শতাংশ জমিতে সবজি আবাদ করেছেন। ৪ দিনের বৃষ্টিতে সকল সবজি পানির নিচে চলে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না হলে বড়ো ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে তার।
কেরোয়া গ্রামের মৎস্যচাষী কামাল মিজি, জাকির হোসেন, নাজিম উদ্দিন, গাজীপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামসহ আরো অনেকেই জানান, তারা যৌথভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করে মাছ চাষ করেছেন। টানা বৃষ্টির কারণে খামারের সব মাছ ভেসে গেছে। তাদের প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার মাছ চলে গেছে। এতে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্র্মকতা বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি মৎস্যচাষীদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন। বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ হয়েছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্লোল কিশোর সরকার বলেন, উপজেলার বিল অঞ্চলের কিছু আমন ধানের জমি ও সবজি আবাদ তলিয়ে গেছে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলে এসব পানি নেমে যাবে।
পল্লী বিদ্যুতের ফরিদগঞ্জ জোনাল অফিসে কর্মরত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বেশ ক'টি এলাকায় গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে, তাই কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গাছপালা অপসারণ করে লাইন মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে, আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল বলেন, বৃষ্টির কারণে পানি প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জেনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।