শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?
  •   শ্রীনগর কাঁপছে

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

শোকে-সংগ্রামে বাঙালির আগস্ট

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

শোকে-সংগ্রামে বাঙালির আগস্ট
অনলাইন ডেস্ক

আগস্ট কেড়েছে মুজিবের প্রাণ কিন্তু তাঁর অবিসংবাদিত বাঙালিয়ানায় এতোটুকু আঁচড় লাগাতে পারেনি। ভাটি বাংলার মানুষ মুজিব। শৈশবে গুরু সদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলনে তাঁর হাতেখড়ি। ষোল আনা খাঁটি মানুষ হতে হলে শাশ্বত বাঙালি হওয়ার যে ব্রতের শিক্ষা তিনি শৈশবে পেয়েছেন তা আমৃত্যু তাঁকে আদর্শবান বাঙালি হিসেবে অটুট রেখেছে। খাবার-দাবার, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, কথন-বলন সব জায়গাতেই তিনি বাঙালিয়ানাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। জেলে থাকাকালীন তিনি বেগম মুজিবের পাঠানো শুঁটকি ভর্তা, আইট্যা কলা ভর্তা আর পান্তা খেতেন সকালে। শুধু নিজেই নয়, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের পোস্টার নূরুল ইসলামকেও খাওয়াতেন। নদীর বুকে নৌকায় বসে তিনি আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে গান শুনতে শুনতে তন্ময় হয়ে যেতে যেতে বলেছিলেন, যে নদীতে নৌকায় আব্বাসউদ্দীনের গান শোনেনি সে জীবনে কিছুই শোনেনি। রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের কবিতা তাঁকে শক্তি দিত, সাহস দিতো। তিনি নিজেই আওড়াতেন উভয় কবির কবিতার চরণ। একাত্তরের সাত মার্চের সেই মহাকাব্যিক ভাষণের পরে তিনি তাঁর ঘরের সবাইকে বলেছিলেন, সেদিন থেকে যতদিন পারে সবাই যেন একসাথে খেতে বসে। কারণ তিনি মনে করেন, যে কোনো সময় তাঁকে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বন্দি করতে পারে এবং এবার বন্দি করলে তাঁকে মেরেও ফেলা হতে পারে। মুজিবের সেই আশঙ্কা অমূলক ছিলো না, যা পরবর্তীতে সত্য হয়। প্রায় মৃত্যুর মুখ হতেই তিনি আট জানুয়ারি বাহাত্তরে বের হয়ে আসেন কারাগার হতে।

মায়ের হাতে পায়েস খেতে অভ্যস্ত মুজিবের বাঙালি খাবারের প্রতি এ টান তাঁর রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার পর যেন আরও বেড়ে যায়। মুজিবের সেই বিখ্যাত টিফিন ক্যারিয়ারের কথা গাফফার চৌধুরীর বর্ণনায় বেশ জীবন্ত হয়ে উঠেছে, যা ভরে গণভবনে খাবার যেতো ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বর হতে। এ খাবার তিনি ভাগ করে খেতেন আরো কাউকে নিয়ে। শাক, টাকি মাছের ভর্তা, কৈ মাছের তরকারিতে মুজিবের দুপুরের খাবার হয়ে উঠত সত্যিকারের রাখাল রাজার রাজভোগ। মুজিবের পরিধেয় হিসেবে বাইরে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবী আর ঘরে লুঙ্গি-স্যান্ডো গেঞ্জিই যেন নিজস্ব ট্রেড মার্ক। মুজিবের কণ্ঠে উঠে আসতো মাটির শব্দ, এ বাংলার জলের ঘ্রাণ। তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি যে শব্দ ব্যবহার করেছেন, তার মধ্যেই ব্যঞ্জনাময় হয়ে বেজেছে এই বদ্বীপের বোল। দাবায়া না রাখতে পারার যে হুঁশিয়ারি তিনি দিয়েছেন তা আজ কালজয়ী হয়ে আছে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে। তিনি বাংলা ভাষার জন্যে আন্দোলন করেই ক্ষান্ত হননি, বরং চীনের জাতীয় বিপ্লবের বার্ষিকীতে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়ে নিজের আপাদমস্তক খাঁটি বাঙালিয়ানাকে ব্র্যান্ডিং করেছেন। শুধু তাই নয়, কারাবন্দি থাকাকালে বাংলায় লিখিত বই না পেয়ে শেখ মুজিব অতৃপ্ত ও অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার বর্ণনা আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’য় পাই। সুফিয়া কামালের বয়ান হতে জানা যায়, একদিন ভোরবেলা মর্নিং ওয়াকে গিয়ে শেখ মুজিব তাঁর বাড়ির দুয়ারে তাঁকে দেখে পিঠে খেতে যেতে বলেছিলেন। বেগম মুজিব সেদিন বাসায় পিঠে বানিয়েছিলেন। সুফিয়া কামালের এই স্মৃতিচারণ মুজিবের বাঙালিয়ানার শতভাগ পরিচয় তুলে ধরে। বাসু মোক্তারের পত্নী নূরজাহানকে শেখ মুজিব শাশুড়ি ডাকতেন। বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এই সম্বোধন বাঙালিয়ানার আবহমান চর্চা বলেই আমরা জানি। বঙ্গবন্ধুর নিজের শাশুড়ি প্রয়াত হয়েছিলেন অনেক আগেই, তাঁর পত্নীর শৈশবে। তাই গ্রামীণ এই সম্বোধনের মধ্য দিয়েই মুজিব হয়তো বা সামাজিক সম্পর্কের আর্দ্র স্নেহে সিক্ত হতেন।

মুজিবের বাঙালিয়ানা বিশ্বজয়ী বাঙালিয়ানা। বাঙালি সুভাষ মুজিবকে সাহস দিয়েছিলেন তাঁর তারুণ্যে। আর মুজিব নিজে বাঙালিকে সাহসী করে দিয়ে গেছেন নিজের নেতৃত্বের যাদু দিয়ে। মুজিবই নজরুলের কবিতা ও প্রবন্ধ হতে বাংলাদেশ এবং জয় বাংলা স্লোগান গ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের কবিতা হতেই বানিয়েছেন জাতীয় সংগীত। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বাঙালিয়ানাই খাঁটি বাঙালিয়ানার আদর্শ মানদণ্ড।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়