শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

স্বাধীনতা বিরোধীদের কখনও আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া যাবে না
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মতিন খানের বাড়ি হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের সন্না খান বাড়ি। ১৯৭১ সালে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ছুটি না নিয়ে পাকিস্তান পুলিশের চাকুরি রেখে যুদ্ধে চলে আসেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্যে অনুপ্রেরণা পান। ১৯৭১ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে ছুটি না নিয়ে যুদ্ধ করার জন্যে ভারতে যান। ভারতের অম্পিনগরে ট্রেনিং সেন্টারে যোগ দেন। পুলিশ বাহিনীর ট্রেনিং থাকার কারণে বেশি ট্রেনিং নিতে হয়নি আবদুল মতিন খানের। তিনি ভারত সেনাবাহিনীর ডেল্টা কোম্পানীর অধীনে ৩ ব্যাচে প্রায় সাড়ে ৪ মাসে দেড়শ’ বাঙালিকে ট্রেনিং করান। একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া দিয়ে দেশে ঢুকেন যুদ্ধে অংশ নিতে। সেখানে বেশ ক’টি যুদ্ধ অংশ নেন। দেশ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে একই বছরের ২২ ডিসেম্বর আখাউড়া থানায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকেই ফের বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ফের যোগ দেন। অবসরে এসে ১ ছেলে ৪ মেয়ে আর স্ত্রীসহ এখন অনেকটাই বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আবদুল মতিন খান। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে বীর বাঙালিদেরকে যেভাবে ভারতে ট্রেনিং করিয়েছি তা নিয়ে আমি গর্বিত। আরো বলেছেন অনেক না বলা কথা, যা চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো :

চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?

আবদুল মতিন খান : বছরটা যাই কাটুক না কেন ডিসেম্বর এলে একটা স্বস্তিভাব লাগে। সরকারিভাবে ১৬ ডিসেম্বর একটা দাওয়াত পাই, সেখানে গেলে আলোচনা সভায় পুরানো কথাগুলে বেশ মনে পড়ে। আবার যুদ্ধ মাঠের কিংবা ট্রেনিং করিয়েছি এমন ক’জনের সাক্ষাৎ পাই। তাতে বেশ ভালো লাগে। দিনটি সত্যিকার অর্থে ঈদের দিনের মতো আনন্দে কাটে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?

আবদুল মতিন খান : সার্বিকভাবে বলতে গেলে ভালো নেই। বয়স তো কম হয়নি। বেশিরভাগ সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকি। সবকিছুতে কি আর ভালো থাকা যায়? বৃদ্ধ বয়সে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও নিজের চাকুরির পেনশন নিয়ে আছি ভালো, শোকরিয়া।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে ?

আবদুল মতিন খান : ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া এলাকায় আমরা একটি দল পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ঢুকি। আমরা ভারত থেকে একদল মুক্তিবাহিনী ঢুকেছি এমন খবরে সেই এলাকার একটি বাড়িতে আমাদেরকে এমনভাবে আপ্যায়ন করা হয়েছে, যা আজো মনে পড়ে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?

আবদুল মতিন খান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছি । লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের দেশ আমরা স্বাধীন করবো। যুদ্ধের মাঠে মরে গেলেই বা কে মনে রাখতো। আল্লাহ বাঁচিয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমরা পতাকা পেয়েছি, আমার সন্তানরা স্বাধীন দেশের নাগরিক, মুক্ত আকাশে নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি, জতির পিতার সুযোগ্য কন্যা যেভাবে দেশের উন্নয়ন করছেন, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মানিত করে যাচ্ছেন- এতেই আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট। অপরদিকে কিছু পাবো বা পাওয়ার আশা নিয়ে সেদিন যুদ্ধে যাইনি। আমাদেরকে সরকারের দেয়া সুবিধা নিয়ে অনেকে বাঁকা কথা বলতে চায়-এতে আমি অসন্তুষ্ট।

চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?

আবদুল মতিন খান : যুদ্ধের মাঠে ছিলাম, বাঁচার আশা নিয়ে যুদ্ধে যাইনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পরেও আল্লাহ এতোটা বছর বাঁচিয়ে রাখবেন তা কল্পনায় ছিলো না। আল্লাহ ডাক দিলে চলে যাবো, যে ক’দিন তাঁর দয়া হয় সেই ক’দিন বাঁচার ইচ্ছা আছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান ?

আবদুল মতিন খান : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মকে একটা কথাই বলবো, আর তা হলো, বিশ্বের বহু দেশ স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। তারা বুঝে স্বাধীনতা কী? তোমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে জন্মেছো। জাতির পিতার কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাননীয় শেখ হাসিনার হাত ধরে তোমরা স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছো। সেই হিসেবে স্বাধীনতার বিরোধীদেরকে কখনও আশ্রয় প্রশ্রয় দিবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়