প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩
বৃষ্টি
অসুস্থ শরীর জীর্ণ দেহ। কোন কাজ থেকে কোনটা করবো ভেবে কুল পাচ্ছিনা। তবুও এ রোমহর্ষক বেদনা নিয়ে জীবন পার করছি। শৈশবে দাদি- নানিরা বলতো বিবাহিত জীবন ক'জনকে সুখের হয়। আমি জয়ন্তির মার কপালে কোন সুখ নাই। তেমনি আজ আমিও বলতে বাধ্য। তবে তখন দাদু জয়ন্তী নামটা কেন একসাথে করে বলেছিলেন বুঝে উঠতে পারিনি। মনে মনে নিজের কাছে এই অসুখের সূর রোজ বলে বেড়ায়। হঠাৎ করে আশ্বিন মাসে আমার জ্বর! তখন শাশুড়ি বলে এই মৌসুমে লেগানেসের জ্বর কিছু হয়না। তয় আমি দেখি সময় করে আমাগো অঞ্চলের উত্তর বাড়ির কাছে এক বৈধ্য থাকে তার থেকে কী তাবিজ-কবচের মালা আনলে নাকি সব অসুখ ভালো হয়। তার বিনিময়ে তাকে চার পয়সা দিতে হয়। আমি সুযোগ পেলে যাব বিকেলে। শাশুড়ি হিসেবে খোঁজ খবর রাখা আমার দায়িত্ব। এতটুকু তো করতেই পারি পড়ে তো বেয়াই মশাই আইসা বলবে কিচ্ছু করিনা বালা মাইয়া রোগাক্রান্ত বানাইয়া লাইছি। এমনেতো ভিটার জায়গা নেই কিন্তু পরের বাড়ির বড় অট্টালিকা মাইয়া বিয়া দিয়া আবার রীতিনীতি, সংস্কৃতি খুঁজে।
যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা নিয়ে একেকবার এসে হাজির হয়।
অনেক রকমারি কথা শুনিয়ে শাশুড়ি মা পাশের ঘরে একটা চকিতে গিয়ে বসল। যথেষ্ট বেলা হয়েছে এবার কাজ সম্পন্ন করো আর সূর্য মাঝবড়াবোর এসেগেছে বাড়ির আঙ্গিনা ঝাড়ু দাও।
বিকেল ঘনিয়ে আসলে চারআনা দিয়ে ঔষধ এনে দিব।এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল ঔষধ আর আনা ও হয়নি। আমার এ আত্ম গল্প সে শুনতে আসেনা দেখতে আসেনা। মাসে মাসে ঠিকই চিঠি পাঠান।ডাকপিয়ন এসে শাশুড়ী মায়ের হাতে পৌঁছে দেন।জানিনাহ কী লেখা থাকে চিঠিতে।তবে আমার মন চিঠি যেদিন আসে সেদিন আন্সান করে উঠে।শাশুড়ী মা আমাকে দেখিয়ে চিঠি কখনো পড়েনা।তবে আমার পাশের রুমটা উনার। রাত কিছু টা গভীর হলে পড়েন উনি।আমি কাগজ উল্টানোর শব্দ বুঝতে পারলাম চিঠিটা তিন পৃষ্ঠা পর্যন্ত থাকে।তখন আমার মনে হয় এ তিন পৃষ্ঠায় কী আমার নামে কী এক লাইন ও লেখা হয়না?
এখন খানে অনেক টা সুস্থ। ধৈর্য্য নিয়ে শাশুড়ির হেসে- খেলে কাঁটাযুক্ত কথা শুনে দিনের পর দিন পার করতেছি।এভাবেই বছর ঘুরে চলে এলো পহেলা বৈশাখ মাস।অনেক কালবৈশাখী ঝড় হয়।
গতকালই এমন ঝড় শুরু হয়েছে অনাবরত রিমঝিম বৃষ্টি পড়তেছে।সন্ধ্যায় অনেক ঝড় শুরু হইছে সাথে শিলাবৃষ্টি। এখন আমার শাশুড়ী আমার কাছে এসে বলে কলসী ভর্তি করে বাহির থেকে শিলা কুড়িয়ে আনতে।কী কাজ জানি দরকার আছে বলে আমাকে চোখ বড় বড় করে দ্রুত যাওয়ার আদেশ জারি করলেন।আমিও একজন লক্ষ্মি মায়ের বাধ্য গত মেয়ের মতো আধ রাত ধরে শিলা কুড়িয়ে এনে কলস ভর্তি করেছি।পরের দিন আবারো অভিশাস্য রুপে জ্বর ধরা দিল।সেকালে যখন জ্বর হয়েছিল বলেছিল বিকেলে যাবে বৈদ্যর কাছে।হতে পারে বিকেল আর আসেনি তাইতো আর যাওয়া হয়নি!এখন আবার কোনটা বলে আমি জানিনাহ...
আমার শশুর বাড়ির পাশে কুঠিয়াল গঞ্জ। সেখানে অনেক বড় হাট মিলে।আমার চাচা শুশুর ঐ গঞ্জে সব্জির ব্যবসা করে।আমি লুকিয়ে লুকিয়ে চাচার কাছে গিয়ে বল্লাম যেহেতু বড় হাট মিলে, বাবা যদি দেখেন তাহলে বইলেন মাইয়াডারে কী দেখতে মন
চায়না? মাইয়াডাত অনেক সুখে আছে একবার নিজ চোখে দেখে আসতে বলছে।
পরেরদিনের সন্ধ্যাটা যেন আমাবস্যার মতো আঁধারে নিশ্বব্দ হয়ে এলো! আমি অসুস্থতার উচ্চমাত্রায় কাতরাচ্ছি। মাথাটা ঘুরতেছে।মনে হয় পুরো দুনিয়াটা ঘুরতেছে আমার সাথে! তখন উনার কথা খুব মনে পড়তেছিল।এমন মনে হলো এ অমাবস্যায় সাথে বোধহয় আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে।আমি তন্দ্রায় নিমজ্জিত হবো চিরকালের জন্য। আমার এ মৃত্যুর সংবাদ কী পৌছবে উনার কাছে? আর যদি উনি শুনেও থাকেন তিনি কী আসবেন? নাকি আমার এ শোকের সংবাদ উনার কাছে সুখের সংবাদ হবে?আমি এসব প্রশ্নের ভীড়ে আস্তে আস্তে ডুবে গেলাম আর আমার চারপাশটা অন্ধারে ঘিরে গেল।হতে পারে এ আঁধারে হয়ে যাব আমি পরকালের যাএী! হবেনা আর আমার নতুন সকালের আবহাওয়া দেখা।দেখা মিলবেনা বাবার দেখা হবেনা উনার সাথে।