প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫
প্রশিক্ষকের পারদর্শিতা
যেকোন দেশের নাগরিকদের জাতির বোঝা না বানিয়ে জাতির সম্পদে রুপান্তর করতে হলে সকল শিক্ষার্থীকে এডভান্সড লার্নার হিসাবে গড়ে তুলতে হয়। এ স্পর্শকাতর কাজে একজন দক্ষ শিক্ষকের ভূমিকা অনিস্বীকার্য।
আবার একজন দক্ষ শিক্ষক বিনির্মানের নেপথ্য যে চরিত্র টি নীরবে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে যান তিনি হচ্ছেন প্রশিক্ষক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ বিভাগ নিকট সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষক তালিকা প্রণয়নের জন্য যেমন ৮ টি প্রশিক্ষক মান নির্ধারণ করেছে; একজন প্রশিক্ষকের মান যাচাইয়ের জন্য সেগুলোর প্রত্যকটি মানের বিপরীতে তেমনি নির্ধারণ করেছে কিছু পারদর্শিতার সূচক বা নির্দেশক।
আসুন প্রথমেই দেখে নেই ৮টি প্রশিক্ষক মান। যথা :
১. প্রশিক্ষণার্থীর শিখন ধরণ সম্পর্কিত জ্ঞান।
২. বিষয়জ্ঞান এবং শিখনবিজ্ঞানের উপর সুস্পষ্ট জ্ঞান।
৩. শিখন-শেখানো পদ্ধতি-কৌশল, মূল্যায়ন ও কার্যকর ফলাবর্তন বিষয়ক জ্ঞান এবং এর যথাযথ প্রয়োগ।
৪. প্রশিক্ষণ সামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি/প্রণয়ন, পরিমার্জন, ব্যবহার এবং সংরক্ষণ।
৫. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান এবং এর সঠিক প্রয়োগ।
৬. পেশাগত উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি এবং জবাবদিহিতা।
৭. নেতৃত্ব, সহায়তা ও পরামর্শ, নির্দেশনা প্রদান এবং পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা প্রদর্শন।
৮. আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ ও পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন।
প্রশিক্ষক যোগ্যতা পরিমাপের জন্য প্রত্যেকটি মানের বিপরীতে কিছু পারদর্শিতার সূচক/নির্দেশক রয়েছে।
সেগুলো নিম্নরুপ :
১.১ প্রশিক্ষণার্থীর শিখনের ধরন ও স্বাতন্ত্র বিবেচনায় নিয়ে অধিবেশন কার্যক্রম পরিকল্পনা করেন;
১.২ প্রশিক্ষণার্থীর আগ্রহ, প্রবণতা, সক্ষমতা, শিখন ঘাটতি ও চাহিদার ধরন বিবেচনায় নিয়ে অধিবেশন কার্যক্রম পরিকল্পনা করেন;
১.৩ অধিবেশন কার্যক্রম পরিকল্পনায় বয়স্ক শিক্ষাবজ্ঞান (এন্ড্রাগোজি) বিবেচনায় নিয়ে থাকেন;
১.৪ প্রশিক্ষণার্থীগণের সংস্কৃতি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আচরণে পেশাদারিত্ব, নৈতিকতা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
২.১ অধিবেশন পরিচালনায় বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক জ্ঞানের প্রতিফলন পাওয়া যায়:
২.২ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার আলোকে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন;
২.৩ বয়ষ্কশিখন পদ্ধতি অনুসরণ করে শিশুশিখন কার্যক্রমে শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন সম্পর্কিত অধিবেশন পরিচালনা করেন;
২.৪ অধিবেশনের চাহিদা অনুযায়ী শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল এবং উপকরণ নির্বাচন করেন।
৩.১ অধিবেশনে বর্ণিত সময় বন্টন অনুসরণপূর্বক উপযুক্ত বাচনভঙ্গি এবং শারীরিক ভাষা ব্যবহার করে নির্ধারিত শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্য পরিচালনা করেন;
৩.২ শিখনফলের আলোকে মূল্যায়ন কৌশল নির্ধারণ, মূল্যায়নের জন্য উপকরণ/টুলস নির্বাচন, প্রণয়ন, আর্দশায়ন এবং প্রয়োগ করেন;
৩.৩ প্রশিক্ষণে নির্ধারিত শিখনফলের আলোকে শিখন-শেখানো কার্যক্রম মূল্যায়নে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ ও কার্যকর ফলাবর্তন প্রদানে দক্ষতা প্রদর্শন করেন;
৩.৪ প্রশিক্ষণার্থীকেন্দ্রিক ও সক্রিয় অংশগ্রহণমূলক অধিবেশন পরিচালনা করেন
৩.৫ প্রশিক্ষণার্থীদের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া/মূল্যায়ন নির্দেশক কার্যকরী প্রয়োগে পারদর্শী করে গড়ে তোলায় সচেষ্ট থাকেন;
৩.৬ প্রশিক্ষণার্থীগণের শিক্ষকমান অর্জনে সহায়তা প্রদান ও মূল্যায়ন করেন।
৪.১ শিখনফলের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ সামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি/প্রণয়ন এবং পরিমার্জন করেন;
৪.২ অধিবেশনের শিখনফলের আলোকে যথাযথ প্রশিক্ষণ সামগ্রীর কার্যকর ব্যবহার করেন;
৪.৩ একীভূত শিখন শেখানো কার্যক্রম পরিচালনায় উপযুক্ত/উপযোগী উপকরণ ব্যবহার করেন;
৪.৪ প্রশিক্ষণার্থীকে শিখন সহায়ক উপকরণ তৈরি/প্রণয়নে দক্ষ করতে সচেষ্ট থাকেন;
৪.৫ প্রশিক্ষণ সামগ্রী সংরক্ষণে টেকসই ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা প্রদর্শন করেন;
৪.৬ বৈশ্বিক অনুশীলন ও নবতর ধারণাসমূহের আলোকে প্রশিক্ষণ সামগ্রী উন্নয়ন এবং পরিমার্জনে দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
৫.১ চাহিদার বিবেচনায় প্রশিক্ষণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ও কার্যকর প্রয়োগে দক্ষতা প্রদর্শন;
৫.২ শিখন-শেখানো কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল উপকরণের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে যথাযথ সমন্বয় সাধন করেন;
৫.৩ প্রশিক্ষণার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কিত কার্যক্রমে পারদর্শী করে গড়ে তোলায় সচেষ্ট থাকেন।
৬.১ সময়ের চাহিদা অনুযায়ী শিখন শেখানো কার্যক্রম, শিক্ষার্থী উন্নয়ন, মূল্যায়ন ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা সম্পর্কিত নবতর ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন ঘটান;
৬.২ পরিবর্তিত বা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রশিক্ষণার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা প্রদর্শন করেন;
৬.৩ পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রমে (যেমন- গবেষণা, লেসন স্টাডি, কর্মসহায়ক গবেষণা, কেস স্টাডি, রিফ্লেক্টিভ জার্নাল, প্রতিবেদন/প্রবন্ধ লিখন) সহযোগিতা প্রদান এবং পরিচালনা করেন;
৬.৪ পেশাগত জীবনে সকল কার্যক্রমে সরকারি বিধিবিধান প্রতিপালনসহ স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখেন।
৭.১ কার্যকর নেতৃত্বের মাধ্যমে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেন;
৭.২ প্রশিক্ষণার্থীকে সুক্ষ্ম ও বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করেন;
৭.৩ শিখন-শেখানো কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ইতিবাচক দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা/পরামর্শ প্রদান করেন।
৮.১ সকল অংশীজন এবং সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক পেশাগত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক বজায় রাখেন;
৮.২ সহকর্মী এবং প্রশিক্ষণার্থীগণের কাজে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা এবং উৎসাহ প্রদান করেন;
৮.৩ সহকর্মী এবং প্রশিক্ষণার্থীগণের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যসম্পাদন করে।
ছবি : ২০
ডিজিটাল ভূত
মিজানুর রহমান রানা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বাড়ির কাছাকাছি রাস্তার পাশে অনিক, স্বপ্নীল, তাসনীম, তানজীম বসে আছে। অনিক ও স্বপ্নীলের হাতে মোবাইল। দু’জন গেম খেলছে। তাসনীম ও তানজীম পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
মোবাইলে গেম খেলতে খেলতে অনিক বললো: ওয়াও দারুণ। দারুণ। আমি ১০০ পয়েন্ট পাইছি। স্বপ্লীলের দিকে তাকিয়ে বললো, তুই কত পাইছিস রে?
স্বপ্নীলও মোবাইলে খেলতে খেলতে উত্তর দেয় : আরে রাখ। খেইল্যা লই। পরে কমু।
এবার তাসনীম স্বপ্নীলকে বলে : ভাইয়া আমারে খেলতে দে-না।
স্বপ্নীল : আমি খেইল্যা লই। পরে দিমু তোরে।
এ সময় তাসনীম স্বপ্নীলের মোবাইল টান দিয়ে বলে : আমারে দে। আমি খেলমু।
স্বপ্নীল ও তাসনীম দু’জন মোবাইলটা টানাটানি করতে করতে হাত থেকে পড়ে গ্লাস ভেঙ্গে যায়।
অনিক ভেঙ্গে যাওয়া মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো : নে সেরেছে, গ্লাসটা ভেঙ্গে গেছে।
এ কথায় তাসনীম, তানজীম ও স্বপ্নীল তিনজনই চমকে যায়।
তারপর তিনজনই বলে উঠে : ভেঙ্গে গেছে?
অনিক : হ, ভাইঙ্গা গেছে। এবার তোদের মায় তোদের বাপরে বিদেশে ভিডিও কলে কথা বলবে কি করে?
এবার তাসনীম, তানজীম ও স্বপ্নীল তিনজনই কান্না শুরু করে দেয়।
এমন সময় তাদের কথাবার্তা শুনে তাসনীম, তানজীম ও স্বপ্নীলের মা রুমা বেগম দৌড়ে আসেন।
রুমা : কিরে, তোরা কান্না করছিস কেন?
স্বপ্নীল : দেখো মা, তাসনীম মোবাইলটা ভাইঙ্গা ফেলছে।
রুমা বেগম বিস্ফোরিত নেত্রে অনিকের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে বললো, ‘দেহি দেহি। হায় হায়রে তোর বাপ বিদেশ থাইক্যা কথা কওয়ার জন্য এই মোবাইলটা দিছে, তোরা ভাইঙ্গা ফেললি?’
এরপর তিনি রাস্তা থেকে একটা ডাল নিয়ে তাসনীম ও স্বপ্লীলকে পেটাতে থাকে। পিটা খেয়ে দু’জনই দু’দিকে পালিয়ে যায়।
তানজিমকে কোলে নিয়ে ওর মা রুমা বেগম মনের রাগে দুঃখে ঘরের ভেতরে চলে যায়।
রুমা বেগম চলে গেছে। অনিক হতভম্বের মতো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় সুজন মামা আসে। তারপর অনিকের হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করে-
সুজন : কিরে কী হয়েছে তোর?
অনিক : দেখো মামা স্বপ্নীল ও তাসনীম তার মায়ের মোবাইলটা ভাইঙ্গা ফেলছে।
মামা হাসতে হাসতে বলে : সমস্যা নাই। চিন্তা করিস না। তার বাবা বোরহান সাহেব বিদেশ থাইক্যা আরো দামী মোবাইল পাঠাইবো। কিন্তু তুই এখানে কি করছিস মামা?
অনিক : মামা আমিও মোবাইল দেখতেছিলাম।
সুজন : মামা, তুমি মোবাইল ছাড়া আর কিছু বুঝ না? আজ স্কুলে গিয়েছ?
অনিক না সূচক মাথা নেড়ে বলে : না মামা।
সুজন : ক্যান যাস নাই ভাইগ্না?
অনিক : স্কুলে যাইতে মন চায় না? খালি মোবাইল টিপতে মন চায়।
সুজন : ভাইগ্নারে মোবাইল টিপলে তো আর অইবো না। তোরে মানুষ অইতে অইবো।
অনিক হাসতে হাসতে বলে : আরে মামা আমি তো এখনও শিশু, মানুষ অইবো ক্যামনে?
মামাও হাসতে হাসতে অনিকের কান ধরে বলে : আয় তোরে দেহামু ক্যামনে মানুষ অয়।
মামার কথায় অনিকও হেসে উঠে। কিন্তু পাশে দাঁড়ানো গাছটার পাতাগুলো নড়ে উঠে। সবুজ কি একটা যেনো হঠাৎ করেই এক ডাল থেকে অন্য ডালে বাতাসের মতো ছুটে যায়। অনিক হঠাৎ করেই সেদিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভয় পেতে শুরু করে।
কিছুক্ষণ পর দেখলো তার সেই সবুজ টিয়াটাই গাছের ডালে বসে আছে আর তার দিকে চোখ বড় বড় করে দেখছে।
অনিক বললো : মামা দেখো, ওই যে আমার টিয়াটা গাছের ডালে বসে আছে।
সুজন : কই কোথায়? আমি তো দেখছি না। আরে মামা, এটা তো খেলনা টিয়া। গাছের ডালে যাবে কীভাবে? তোর মতিভ্রম হয়েছে রে। চল এখন থেকে। (চলবে)