প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক উল্লাহ খান কাজল। হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার। বাড়ি হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের খান বাড়ি। দুই ছেলে এক মেয়ে। বিপত্নীক হয়েছেন আরো আগে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে পাকিস্তানের লাহোরে ছিলেন নৌবাহিনীতে কর্মরত। পাকিস্তান নৌবাহিনীর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পদে ট্রেনিং শেষে দেড় বছর চাকুরি করেছেন পিএনএস টিপু সুলতানে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে ছুটি কাটিয়ে করাচিতে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে স্বাধীনতার ডাক দিলেই দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেন। ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ ছুটির আবেদন করেন কমান্ডিং অফিসারের কাছে। ছুটি পেয়ে দেশে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের মে মাসে নৌকাযোগে জাফরগঞ্জ থেকে উদয়পুর যান নৌকায়, তারপর আগরতলা পৌঁছান। নৌবাহিনীতে কর্মরত হওয়ার কারণে ভারতের সিঙ্গেচরা ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং করিয়েছেন। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষে সিলেটের চুনারুঘাট এলাকার বাল্লা রেলস্টেশন হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ আসেন। যুদ্ধের পরে চাকুরিতে আর যাওয়া হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের পর সেই সময় চাঁদপুরের শাহতলী জিলানী চিশতি কলেজে ভর্তি হন ও ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করেন। একই কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের ভিপি পদে নির্বাচন করে ভিপি নির্বাচিত হন। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের আয়োজন ‘বিজয়ের মাস ডিসেম্বর : কেমন আছেন মুক্তিযোদ্ধাগণ’ শীর্ষক আজকের পর্বে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রফিক উল্লাহ খান কাজল। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে জিতে অশেষ আনন্দ করেছি। আরো বলেছেন অনেক না বলা কথা, যা চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকদের কাছে নিচে তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : বছর ঘুরে আবার আসলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। আপনার অনুভূতি কেমন?
রফিক উল্লাহ খান : অনুভূতি বলে তো শেষ করা যাবে না। সরকারি চাকুরির মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করার জন্য দেশে আসি। ভারতে মুক্তিবাহিনীকে ট্রেনিং দেয়া, দেশে ফিরে যুদ্ধে অংশ নেয়া এ এক ভিন্ন অনুভূতি। আর ডিসেম্বর আসলেই সেই সব স্মৃতি মনে পড়ে। যাদের সাথে যুদ্ধ করেছি, বিশেষ করে লাখাই থানায় এরশাদ উল্যাহর কথা খুব মনে পড়ে। তার সাথে যুদ্ধের স্মৃতির অনুভূতি প্রায় সময় মনে পড়ে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সার্বিকভাবে আপনি কেমন আছেন?
রফিক উল্লাহ খান : বয়স তো আর কম হয়নি, এ বয়সে কেমন থাকতে পারি সেটা সবাই কম-বেশি বুঝে। বিশেষ করে স্ত্রীকে হারিয়ে একা হয়ে পড়েছি। তারপরও শোকরিয়া, আল্লাহর রহমতে ছেলে সন্তান আর নাতি-নাতনি নিয়ে ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : ৫২ বছর পূর্বের মুক্তিযুদ্ধের কোন্ স্মৃতি আপনার মনে এখনও জ্বলজ্বল করছে?
রফিক উল্লাহ খান : যুদ্ধতো কয়েকটি করেছি। ভারতে থাকতে কমান্ডিং অফিসার মেজর এনাম আহমেদ চৌধুরীর পরামর্শে আমি নৌবাহিনীর লোক হবার পরেও আর্মির সাথে কাজ করেছি। সবচে’ বেশি স্মরণীয় হচ্ছে বাল্লা এলাকার ঘটনা। আমরা ভারত থেকে একটি দল আসি বাল্লায় যুদ্ধ করার জন্য। আমরা পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে ভারত থেকে একটি দল বাল্লায় ঢুকেছি এমন খবরে পাক আর্মি সেখানে তাদের ক্যাম্প রেখে পালিয়ে যায়। এমন খবরে শায়েস্তানগর বাজারে সাধারণ পাবলিক আমাদেরকে নিয়ে যে আনন্দ করেছে, সেই স্মৃতি এখনো আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে জ্বলে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : অনেক রক্তে অর্জিত প্রিয় স্বাধীন দেশের বর্তমান অবস্থায় আপনি কতোটুকু সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট?
রফিক উল্লাহ খান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ঘটিয়ে সত্যিকার অর্থে যে অবস্থানে নিয়ে গেছেন সেই হিসেব কষলে আমি সন্তুষ্ট। আর অসন্তুষ্ট বলতে এটাই বলবো, আমার পরিবার তথা আমার সন্তানরা যোগ্যাতাসম্পন্ন হয়েও স্বাধীন দেশে সরকারি চাকুরি পায়নি। বিশেষ করে ঘুষের কারণে। আমি এই বিষয়টি নিয়ে অসন্তুষ্ট।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই মানুষের জন্ম/মৃত্যু। মাফ করবেন, তবুও জানার ইচ্ছা, আপনি আর কতোদিন বাঁচতে চান?
রফিক উল্লাহ খান : হায়াত মউতের মালিক আল্লাহ। তাঁর দয়াতেই তো এখনো বেশ সুস্থ আছি। তারপরেও বলবো, আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাতে আসে সেটা দেখে মরার ইচ্ছা আছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : বর্তমান বা পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে আপনি কী কথা রেখে যেতে চান?
রফিক উল্লাহ খান : আমরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ মাতৃকাকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছি সেই, উদ্দেশ্যে তথা দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, সার্বভোমত্ব রক্ষা করা করে দেশকে ভালেবেসে যেতে হবে।