প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
কেউ জানে না বাজারটির সৃষ্টি সাল কত? যার সাথে কথা বলা হয়েছে সে-ই বলেছে, এই বাজারটি ব্রিটিশ আমলের। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারাও না জানার মতোই বলে দিলেন, বাজারটি ব্রিটিশ আমলের। বাজারটিতে বর্তমানে বহু বন্ধ ও পরিত্যক্ত স্থাপনা থাকলেও মাঝেমধ্যে খোলা হয় শুধু সেই ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত জরাজীর্ণ পোস্ট অফিসটি। উপরোক্ত বর্ণনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ঘুঘু বাজারের।
বিলুপ্ত ও পরিত্যক্ত এ বাজারে এক সময় কী না ছিলো। বর্তমান আমলের জমজমাট বাজারগুলোতে গত ১৬-১৭ বছর আগে যেসব পণ্য পাওয়া যেতো এবং যে ধরনের দোকানপাট ছিলো, এ বাজারটিতেও সেসব পণ্য এবং দোকানপাট ছিলো। তবে স্থানীয়দের মতামত, এই বাজারটি আরো অনেক বেশি প্রসিদ্ধ এবং জমজমাট ছিলো।
এ প্রতিনিধি কথা বলেছেন ঘুঘু বাজারের নামের বাড়ির (ঘুঘু বাড়ির) ফয়েজ আহমেদ পাটোয়ারীর সাথে। তিনি বলেন, একসময় এখানে জমজমাট বাজার ছিলো। কালের আবর্তে আজ এই বাজার বিলুপ্ত। এখানে তোলা বাজারের জন্য সরকারি খাস সম্পত্তিও রয়েছে অনেক। বাজারটি বিলুপ্ত এবং বাজারের সমস্ত দোকানপাট পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও ব্রিটিশ আমল হতে স্থাপিত পোস্ট অফিসটি এখনো সচল আছে। সালাম উল্লাহ নামের একজন বলেন, ১২ থেকে ১৫ বছর আগে এই বাজারটি বিলুপ্ত এবং পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বাজারের অন্য পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ে যাওয়ায় বাজারটির এই অবস্থা হয়েছে। পুরানো দিনের দোকানগুলো থাকলেও সব পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে।
দিলীপ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, ক্রেতারা বাকি নিয়ে টাকা দিতে চায় না। এছাড়া তিনি বলেন, বাজারটির সপ্তাহে শুক্র ও সোমবারে হাট বার ছিল। প্রতি হাটের দিন ৩০ থেকে ৪০ খারি মাছ বেচা-বিক্রি হতো। হাটবার ছাড়াও এখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ খারি মাছ বেচা-বিক্রি হতো এবং অন্যান্য বাজারের মতো এ বাজারেও সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো। কিন্তু কেন যে গত ১৬-১৭ বছর আগে হঠাৎ বাজারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইব্রাহিম নামের একজন বলেন, বাজারটি খুব জমজমাট ছিলো। অনেক দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো, হাজার হাজার লোক সমাগম ছিলো। বাজারে তোলা বাজারের জন্য খাস সম্পত্তিও আছে। কিন্তু হঠাৎ কেন বাজারটি বিলুপ্ত হয়ে গেলো জানি না। শুধু সেই ব্রিটিশ আমলের পোস্ট অফিসটি এখনো কোনো রকমে টিকে আছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জানান, বাজারের কাছের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎকালীন সময় বাজারে আগত ক্রেতাণ্ডবিক্রেতা এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করতেন, যার কারণেই বাজারের এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। ঘুঘু বাড়ির তসলিম পাটোয়ারী নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে এ বাজারের বিষয়ে কিছু বলতে চান নি। পরে তাকে বারবার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, বাজারটি যে বিলুপ্ত হয়েছে এ বিষয়ে লেখালেখির কী প্রয়োজন। অন্যদিকে এলাকাবাসীর বিশ্বাস, বাজারে যে খাস সম্পত্তি আছে সেসব সম্পত্তি সরকার একোয়ারে নিয়ে কাজে লাগালে এখানে ভালো রাজস্ব আদায় সম্ভব।