প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ নুরুল ইসলাম (নুরু) বলেছেন, আমি আমার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। দীর্ঘদিন এ দলের রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পৌর আওয়ামী লীগের অধীনস্থ সকল ইউনিটের নেতা-কর্মীদের সাথে দীর্ঘ দেড় যুগ যাবত একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি বা তাদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। সেই হিসেবে আমার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাচ্ছে আসন্ন চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি যেনো সভাপতি প্রার্থী হই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে ভাবনায় তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রশ্নোত্তর আকারে তার পূর্ণাঙ্গ ভাবনাটি নিচে তুলে ধরা হলো :-
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ১১ ডিসেম্বর চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং তার পূর্বে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সম্মেলন। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : প্রায় দেড় যুগ পর চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। এই সম্মেলন বিলম্ব হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মাঝে অনেকটা হতাশার চাপ সৃষ্টি হচ্ছিলো। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার ঘোষণায় শহরজুড়ে এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আমার আশা, দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ অত্যন্ত সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে সকলের সমন্বয়ে একটি সফল সম্মেলন উপহার দিবে। যার মাধ্যমে আগামীর জন্যে একটি নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে, যাতে দল সুসংগঠিত ও গতিশীল হবে। সম্মেলনের সফলতা কামনা করছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি সম্মেলনের মাধ্যমে কেমন নেতৃত্ব প্রত্যাশা করেন?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, নেতৃত্ব আমরা চাই। প্রতিটি সংগঠনের প্রতিটি ইউনিটের সম্মেলনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাহিদা অনুযায়ী এবং গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিলর বা ডেলিগেটদের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্ব আসবে-এমনটা প্রত্যাশা করছি। কারণ সামনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে তৃণমূল হলো আমাদের মূল চালিকাশক্তি। তাই এমন নেতৃত্ব দেয়া হোক যাদের নেতৃত্বে সংগঠন শক্তিশালী সংগঠনে রূপান্তরিত হয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি নিজে কি কোনো পদপ্রার্থী?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : হ্যাঁ, আমি আমার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। দীর্ঘদিন এ দলের রাজনীতি করতে গিয়ে আমি পৌর আওয়ামী লীগের অধীনস্থ সকল ইউনিটের নেতা-কর্মীদের সাথে দীর্ঘ দেড় যুগ যাবত একটি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছি বা তাদের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করেছি। সেই হিসেবে আমার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চাচ্ছে আসন্ন চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমি যেনো সভাপতি প্রার্থী হই। তাই তাদের অনুরোধে আমি সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-গ্যাস সঙ্কট, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ আরো কিছু কারণে বিএনপির যে ধারাবাহিক আন্দোলন, তাতে আপনারা কতোটুকু উদ্বিগ্ন?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : বিএনপির এই আন্দোলন নিয়ে চিন্তা বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ বিএনপির আন্দোলনের যে ইস্যু রয়েছে, সে বিষয়গুলো আমাদের দেশের জনগণের জানা বা তারা এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। কারণ এই সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে দ্রব্যমূল্য স্ব স্ব দেশের পূর্বের মূল্যের দশগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে আমাদের দেশে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য এখনো জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, খুব অচিরেই এই সমস্যা কেটে যাবে। তাছাড়া বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে জনগণের স্বার্থে নয়, নিজেদের স্বার্থের রাজনীতি। এগুলো জনগণ বুঝে। অতএব, এদের আন্দোলন নিয়ে আমরা চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এ আন্দোলন সাংগঠনিকভাবে কিংবা অন্য কী উপায়ে মোকাবেলা করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : আমি পূর্বেই বলেছি, বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মিথ্যার, জনগণকে ধোঁকা দেয়ার ও সন্ত্রাসকে লালন করার রাজনীতি। এরা রাষ্ট্র পরিচালনাকালে আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করে এবং সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। আল্লাহর রহমতে এদেশের জনগণের দোয়ায় বেঁচে যায়। অথচ আমরা টানা তিনবার দেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি, কিন্তু বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করিনি। কারণ আওয়ামী লীগের জন্ম রাজপথে এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেশ ও জনগণের স্বার্থে। অতএব, জনগণকে সাথে নিয়ে খুব শীঘ্রই রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির সকল অপকর্মের জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কি এমন মানসিক আস্থা পোষণ করেন যে, বিদ্যমান সমস্যা বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক সঙ্কট, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা তথা নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ স্বীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারবে?
নুরুল ইসলাম (নুরু) : অবশ্যই। টানা চতুর্থত বারের মতো আওয়ামী লীগ এদেশের জনগণের রায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে। কারণ এই সরকারের মেয়াদকালে এদেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, তা এদেশের জনগণ জানে। আমি সারা দেশের কথা বলবো না, এই চাঁদপুরে একটি সরকারের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ ক’জন মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু চাঁদপুরের কী উন্নয়ন হয়েছে তা চাঁদপুরবাসীর জানা রয়েছে। অথচ চাঁদপুর-৩ আসনের তিনবারের নির্বাচিত সাংসদ, আমাদের অভিভাবক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি চাঁদপুরবাসীর যে দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন তা স্বাধীনতার পর আর কোনো সরকার আমলে হয়নি। অতএব, চাঁদপুরের মতো সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, এ কারণে এদেশের জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে ইনশাআল্লাহ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্নমালার বাইরে আপনার অন্য কোনো বক্তব্য থাকলে উপস্থাপন করতে পারেন।
নুরুল ইসলাম (নুরু) : আসন্ন চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও জেলা শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি আমার আকুল আবেদন, তৃণমূলের চাহিদা অনুযায়ী আপনারা আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন এবং আমার ও আমার পরিবারের এই দলের প্রতি অবদান দেখে আমাকে চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত করবেন-এটাই আমার প্রত্যাশা রইলো।
উল্লেখ্য, আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম (নুরু)-এর জন্ম আওয়ামী পরিবারে। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল মোমেন। যাকে চাঁদপুরবাসী চিনতো ‘মোমেন কোম্পানী’ নামে। তিনি স্বাধীনতার পূর্বে অর্থাৎ ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তৎকালীন মহকুমা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। মোমেন কোম্পানী ছিলেন তৎকালীন মহকুমা জুট এসোসিয়েশনের সভাপতি। আর জুট এসোসিয়েশন চাঁদপুর মহকুমা কার্যালয়টি ছিলো চাঁদপুর শহরের জোড় পুকুর পাড়ে। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগের কার্যালয় না থাকায় সভা বা মিটিং করতে সমস্যায় পড়তে হতো। ওই সময়ে তৎকালীন মহকুমা জুট এসোসিয়েশনের কার্যালয়টি আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহারের জন্য জমিসহ অস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা মোমেন কোম্পানীর বদান্যতায় হয়।
আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম (নুরু) ২০০৪ সাল থেকে অদ্যাবধি চাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি দুবার শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান প্রাইম মুভার ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড প্রাইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি, চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার মোমেনবাগ জামে মসজিদ, মোমেনবাগ বাড়ি মালিক সমিতি, নিউ নেশন একাডেমী স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, কমিউনিটি পুলিশিং অঞ্চল-১০-এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
নুরুল ইসলাম (নুরু)-এর বড় ছেলে হাজী আরিফুল ইসলাম হৃদয় ঢাকা মহানগর শেরে বাংলা নগর থানা ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বর্তমানে একই থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছোট ছেলে সাজিদুল ইসলাম দুর্জয় একই থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।