প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২২, ০০:০০
ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় ফুটবলার ইসমাইল হোসেন সুমন
যোগ্য ও সার্টিফিকেট প্রাপ্তদেরকেই জেলা দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হোক
চাঁদপুর জেলা ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে। জেলা ক্রীড়া সংস্থা কর্তৃপক্ষ যখন যাকে নিজেদের মনে করে এবং পছন্দের লোক মনে করে তখনই তাদেরকে জেলা দলের কোচের দায়িত্ব দিয়ে থাকে। এতে করে কোচের নোংরামি ও তাদের নিজস্ব একাডেমীর ফুটবলারদের জায়গা করে দেয়ার ধান্ধায় অনেক উদীয়মান ফুটবলারের স্বপ্ন নিভিয়ে দেন খুব সহজেই। এই রকম ঘটনা চাঁদপুর জেলা ফুটবল দল গঠনে এমনকি মাঠে খেলা চলাকালীন সময়েও দায়িত্বপ্রাপ্ত ফুটবল কোচ করেছেন বলে ফুটবলাররা জানান। জেলা ফুটবল দলের নিয়মিত অনেক ফুটবলারই মনে করছেন, যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে জেলা দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হলে জেলার ফুটবল দলটি যে কোনো প্রতিযোগিতায় আরো ভালো ফলাফল করতে পারতো। ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় এমন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেন চাঁদপুর জেলা ফুটবল দলের নিয়মিত ফুটবলার ও চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগের উপ-ক্রীড়া সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সুমন। তার বাবার নাম মৃত মোঃ বাচ্চু পাটওয়ারী। ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ৩য়। তারা বসবাস করেন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকার দক্ষিণ জিটি রোড মধু মিয়াজীর বাড়িতে। টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করার পর বতর্মানে চাঁদপুর সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত। পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবল অনুশীলন ও বিভিন্ন স্থানে ফুটবলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন। পড়াশোনা শুরু করেছেন নিজ এলাকা ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে। সেখান থেকে চাঁদপুর সরকারি কারিগরি স্কুল এবং পরবর্তীতে টেকন্যিকাল (ভোকেশনাল) স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন। তিনি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন। ২ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে ফুটবলের অনুশীলনের ফাঁকে ফুটবলের এবং জেলা দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন তার প্রতিক্রিয়া। পাঠকদের জন্য তার বক্তব্যগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো।
|আরো খবর
ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা শুরু হয় কখন থেকে?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমি ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াবস্থায়ই ফুটবলের সাথে জড়িয়ে পড়ি। তখন থেকে পাড়া-মহল্লার বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা শুরু করি। এরপর সরকারি কারিগরি স্কুলে পড়াবস্থায় চাঁদপুর আউটার স্টেডিয়ামে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ফুটবল খেলায় স্কুলের হয়ে খেলতে নামি। স্কুল পর্যায়ে টেকনিক্যাল স্কুলের হয়ে গণি মডেল স্কুলের সাথে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামি। স্কুলের হয়ে খেলার সময় দলের অধিনায়ক হিসেবে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছি। মূলত ছোটকাল থেকেই ফুটবলের প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো বেশি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল ম্যাচে অংশগ্রহণ কবে থেকে?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমি ২০১৫ সালে চাঁদপুর আবাহনী ক্লাবের মাধ্যমে ক্লাব কাপ ফুটবলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে খেলা শুরু করি। ফাইনাল পর্যন্ত মূল একাদশের হয়ে খেলতে নামি। ২০১৭ সালে নাজিরপাড়া ক্লাবের হয়ে মাঠে ক্লাব কাপ খেলতে নামি। ওই বছর ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাবের সাথে নাজিরপাড়া চ্যাম্পিয়ন হয়। আমার দেয়া জয়সূচক গোলেই ওইবছর নাজিরপাড়া শিরোপা জয়লাভ করে। ২০১৮ সালে পুনরায় আবারো আবাহনী ক্লাবের হয়ে খেলতে নামি। ফাইনালে আবাহনী ক্লাব ৩-০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করে। সেই ম্যাচেও আমার একটি গোল ছিলো।
ক্রীড়াকণ্ঠ : জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল খেলেছেন কোন্ কোন্ দলের হয়ে?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমি চাঁদপুর সদর উপজেলা দলের হয়ে জেলা প্রশাসক কাপ ফুটবল খেলায় অংশ গ্রহণ করি। চাঁদপুর সদরের হয়ে ফাইনাল পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই খেলি। আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার হয়েও খেলতে নামি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা দলের হয়ে খেলেন কবে থেকে? কোথায় কোথায় খেলেছেন?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমি ২০১৬ সাল থেকে চাঁদপুর জেলা ফুটবল দলের হয়ে খেলি। জেলা দলের হয়ে সুনামগঞ্জ, ফেনি, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর সাথে তাদের ভেন্যুতে গিয়ে খেলি।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকার কোনো ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমি ঢাকা রহমতগঞ্জ ক্লাবের বি (অনূর্ধ্ব-১৮) দলে এবং নাসির স্পোর্টস একাডেমীতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা ফুটবল দল নিয়ে.....
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমার প্রথম কথা হচ্ছে, বর্তমানে জেলা ফুটবল দলে যারা কোচিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের তো ফুটবল প্রশিক্ষণের ওপর কোনো বাফুফে সার্টিফিকেট নেই। যারা যোগ্য এবং সার্টিফিকিটেপ্রাপ্ত তাদেরকে জেলা ফুটবল দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হোক। যারা জেলা ফুটবল দলের কোচের দায়িত্বে রয়েছেন তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মনগড়া খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গঠন করছে। ২০১৬ সাল থেকে জেলা দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছি। কোথাও জেলা দলের খেলা শুরু হওয়ার আগে আমাদেরকে ট্রায়ালে অংশ নিতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা জেলা দল গঠনে যেই সমস্ত ফুটবল কোচকে দায়িত্ব দেন তারা তাদের পছন্দের লোকদের নিয়ে দলগঠন করে খেলতে যান ও ম্যাচে অংশ নেন। সেজন্যে লাইসেন্সধারী কোচদের মধ্য থেকে আগামীতে জেলা দলের কোচের যেনো দায়িত্ব দেয় জেলা ক্রীড়া সংস্থা।
ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সময় কোনো সমস্যা হয় কি না?
ইসমাইল হোসেন সুমন : আমরা মাঠে যখন অনুশীলন করি, তখন স্টেডিয়াম এলাকাস্থ কিছু সংখ্যক লোক একাডেমীর নাম করে মাঠে এসে বিভিন্ন মন্তব্য করতে থাকেন। এরা কিন্তু কখনও ফুটবল খেলেন নি। কিন্তু তারা মাঠে এসে চেয়ার নিয়ে এমন কর্মকর্তার ভাব দেখায় যে, তারা ছাড়া মাঠে আর কারও কোনো অধিকার নেই। এই সমস্ত লোকজনই গত কয়েকমাস আগে মাঠে খেলাশেষ হওয়ার পর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তারা মাঠে এসেই অনুশীলনকারীদের পক্ষ না হয়ে তাদের নামকৃত একাডেমীর কর্মকর্তা হয়ে মাঠে বিঘœ সৃষ্টি করে। তারা নিজেদের মাঠ মনে করে পুরো স্টেডিয়ামটি দখল করে রাখতে চায়।
ক্রীড়াকণ্ঠ : ফুটবল উন্নয়নের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার কী প্রয়োজন?
ইসমাইল হোসেন সুমন : তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলার খোঁজ করে তাদেরকে নিয়ে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। চাঁদপুর স্টেডিয়ামে আজ ক’বছর যাবত ফুটবল লীগ কিংবা ফুটবলের অন্য কোনো প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। গত ক’দিন আগে আমাদের চাঁদপুরের মেঘনাপাড়ের কন্যা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি চাঁদপুর স্টেডিয়ামে একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আসলে স্থানীয় ক্রিকেটারগণ তাঁর কাছে ক্রিকেট লীগ চালু করার আবেদন জানালে জেলা ক্রীড়া সংস্থা শিক্ষামন্ত্রীর ব্যবস্থাপনায় খেলা শুরু করে। আমাদের ফুটবল খেলার ব্যাপারে চাই, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী এবং নির্বাচিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কার্যকরী কমিটি কিছু ভালো উদ্যোগ নিবে।
এছাড়া নিয়মিত মাঠে খেলাধুলা হলে খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়বে। সকলেরই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। নিয়মিত খেলাধুলা না হওয়ার কারণে উঠতি বয়সী ছেলেরা বিভিন্নভাবে খারাপ কিছুর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। আমি চাই চাঁদপুর স্টেডিয়াম মাঠে নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হোক।