প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যখন সংগঠনের কর্মকর্তা হয়
১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর জন্মগ্রহণকারী শেখ রাসেল হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বকনিষ্ঠ পুত্র। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য দ্বারা সংঘটিত জাতির ইতিহাসের সবচে’ কলঙ্কজনক ঘটনায় পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সাথে মাত্র ১০ বছর ৯ মাস ২৭ দিন বয়সে শাহাদাত বরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরী স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন।
|আরো খবর
শেখ রাসেলের স্মৃতিরক্ষায় স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে এই নামকরণের প্রবণতা যতোটা ছিলো, ক্ষমতায় আসার পর সেটি অনেক বেড়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের আদরের ছোট ভাইকে স্মরণের আভরণে ঢেকে রাখতে ১৯৮৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এর লক্ষ্য হচ্ছে, শিশু-কিশোররা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রমের মাধ্যমে যাতে শিশু শেখ রাসেলের স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ হালে গড়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় সংগঠনের মতো নয়। অতএব, এ সংগঠনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ ৩২ বছর বয়সী সংগঠন, যার নেতৃত্বে থাকতে হবে গ্রহণযোগ্য ও নিষ্কলুষ চরিত্রের ব্যক্তি। অথচ চাঁদপুরে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম হচ্ছে ‘শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের নেতা ইয়াবাসহ আটক ॥ সংগঠন থেকে বহিষ্কার’। বহিষ্কৃত এই নেতার নাম মাইনুল ইসলাম চৌধুরী, যিনি তার সহযোগী ওমর ফারুকসহ ২০ পিচ ইয়াবাসহ আটক হয়ে মামলা খেয়ে জেলে গেছেন। তাকে সন্ধ্যার পর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ও লেকের পাড় এলাকায় নতুনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ইসমাইল কর্তৃক মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে আটক করা হয়।
মাইনুল ইসলাম চৌধুরী শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের ছোটখাট নেতা নন। তিনি জেলা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ৮ তারিখ কেন্দ্রীয় কমিটি ২১ সদস্য বিশিষ্ট যে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটির অনুমোদন দেয়, তাতেই তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সৌভাগ্য অর্জন করেন। কিন্তু এক মাসের অর্ধেক সময় (১৫ দিন) যেতে না যেতেই মাইনুল ইসলাম চৌধুরী তার স্বভাব-চরিত্রের প্রকৃত রূপ প্রদর্শন করেন মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে। তার এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক জেলা কমিটির সভা ডেকে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং যুগ্ম সম্পাদক আফজাল কাজীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রশ্ন হলো, তারপরও কি সভাপতিসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা পুরোপুরি দায় এড়াতে পারবেন?
চাঁদপুর কণ্ঠের সংবাদে প্রকাশ, মাইনুল ইসলাম চৌধুরী এবার ইয়াবাসহ আটক হয়ে জেলে যাবার পূর্বেও দুবার একই কারণে আটক হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। এমনটি নিশ্চয়ই শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতিসহ কমিটি গঠনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উদ্যোক্তারা জানতেন। তারপরও তারা সম্ভবত ম্যানেজড্ হয়ে মাইনুলকে সদ্য ঘোষিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন কিংবা ঔদাসীন্যহেতু মাইনুল সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর না নিয়ে কাজটি করেছেন। যেভাবেই করেন না কেন, আমরা মনে করি সেটার দায় নিতান্তই মাইনুলকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে সভাপতিসহ অন্য দায়িত্বশীলরা এড়াতে পারবেন না।