প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৩
নিউইয়র্ক থেকে প্রবাসী কণ্ঠের সাথে গোলাম কিবরিয়া জীবন
চাঁদপুরে আমার ৪৭ বছরের সাংবাদিকতার সহকর্মীদের বেশি মিস্ করি

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের দীর্ঘদিনের চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম কিবরিয়া জীবন বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। তাঁর সাথে সোমবার (৩০ জুন ২০২৫) কথা হয় চাঁদপুর কণ্ঠের ‘প্রবাসীকণ্ঠে’র সাথে। প্রশ্নোত্তর আকারে তাঁর কথাগুলো নিচে পত্রস্থ করা হলোÑ
প্রবাসীকণ্ঠ : মাতৃভূমি ছেড়ে কতোদিন হলো আমেরিকা এসেছেন? কোথায় থাকেন, কেমন আছেন?
গোলাম কিবরিয়া জীবন : আল্লাহর অশেষ রহমতে আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ২০২২ সালের ৯ জুন দুপুরে আমরা (আমার স্ত্রী, দুই পুত্র সন্তান) মাতৃভূমি ছেড়ে আমেরিকার বোস্টন বিমানবন্দরে অবতরণ করি। সেখান থেকে আমার স্ত্রীর বড়োভাই পিন্টু ভাইয়ের বাসা মালবোরোতে গিয়ে উঠি এবং সেখানেই থাকতে শুরু করি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই পিন্টু ভাইই আমাদের এদেশে আসার জন্যে সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সেজন্যে আমরা সবাই তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। এই বাসা ছাড়াও আমার স্ত্রীর আরেক বড়ো ভাই বোস্টনের লী’নে বসবাসরত রিন্টু ভাইয়ের বাসায় আসা-যাওয়ার মধ্যেই দেড় বছর কেটে যায়। বর্তমানে আমরা (স্ত্রী এবং দুই ছেলেসহ) নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় ভাড়া বাসায় আছি।
প্রবাসীকণ্ঠ : আপনার সন্তানরা লেখাপড়া করছে না কোনো চাকুরি করছে? এদেশে খাপ খাইয়েছে কেমন?
গোলাম কিবরিয়া জীবন : আমরা আমেরিকা যাওয়ার এক বছরের মাথায় আমার বড়ো ছেলে মমিদ নিউইয়র্কে চলে আসে, একটি রুম ভাড়া করে থাকে এবং চাকরির চেষ্টা করতে থাকে। এর কয়েক মাস পর আমার ছোট ছেলে মুফতিও তার বড়ো ভাইয়ের নিকট নিউইয়র্কে চলে আসে এবং নিউইয়র্ক সিটি কলেজে ভর্তি হয়। বর্তমানে তাদের দুজনই নিউইয়র্কস্থ জেএফকে এয়ারপোর্টে চাকরি করছে। তাদের সেখানে যাওয়ার প্রায় এক বছর পর তারা নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় একটি বাসা ভাড়া নেয়, যেখানে আমরাও চলে আসি। বর্তমানে আমরা এ বাসাতেই অবস্থান করছি। তবে এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বোস্টনে প্রায় দু বছর যখন অবস্থান করেছিলাম, তখন নিজেকে প্রথম অবস্থায় পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছে। কিন্তু নিউইয়র্কে এসে বহুজাতিক সমাজে বসবাসরত প্রচুর বাঙালি পেয়ে মনে হয় একখণ্ড বাংলাদেশেই অবস্থান করছি।
প্রবাসীকণ্ঠ : মাতৃভূমির কথা মনে পড়ে? কীভাবে কার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন?
গোলাম কিবরিয়া জীবন : হ্যাঁ, মাতৃভূমির কথা তো অবশ্যই মনে পড়ে। যখনই সুযোগ পাই বাংলাদেশে অবস্থানরত আমার একমাত্র মেয়ে মিথুনসহ আমার ভাই-বোনদের সাথে কথা বলি। তবে সবচেয়ে বেশি মিস্ করি আমার সাংবাদিকতার দীর্ঘ ৪৭ বছরের জীবনে যাদের সাথে উঠা-বসা চলাফেরা করেছি ওই সমস্ত সহকর্মী সাংবাদিকদের। তাঁদের মুখগুলো স্মরণ হলে একটু খারাপ লাগে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই মনে হয় চাঁদপুর প্রেসক্লাব থেকে একটু ঘুরে আসি। ওই সময়টাতে নিজের মনটাকে প্রবোধ দেয়ার জন্যে বিভিন্ন পার্কে চলে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করি।
প্রবাসীকণ্ঠ : প্রবাসে কখন খুব ভালো লাগে আর কখন খারাপ লাগে?
গোলাম কিবরিয়া জীবন : প্রবাসে ভালো লাগে তখন, যখন এখানে কোনো বাঙালি খুঁজে পাই, এমনকি চাঁদপুরের মানুষের দেখা যখন পাই। পার্কে ঘুরতে গেলেও যখন বাঙালি পাই তখন খুব ভালো লাগে। আরো বেশি ভালো লাগে যখন দেখি এদেশে মানুষকে সম্মান মর্যাদা এবং মূল্যায়ন করে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখানে কথা বলার স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা আছে। নিউইয়র্ক শহর থেকে প্রতিদিন ১৫-২০টি বাংলা পত্রিকা প্রকাশিত হয়। আর প্রত্যেকটি পত্রিকাই মাল্টি কালার এবং প্রতিটি পত্রিকাই ৭০ থেকে ১০০ পাতার। ওইসব পত্রিকাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রতিটি ঘটনাই প্রকাশিত হয়ে থাকে। খারাপ লাগে তখন, যখন আপন মুখগুলোর কথা মনে পড়ে, মাতৃভূমির কথা মনে পড়ে।
প্রবাসীকণ্ঠ : দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন অথবা আপনার অন্য কোনো অভিব্যক্তি থাকলে প্রকাশ করুন।
গোলাম কিবরিয়া জীবন : দেশের মানুষের কাছে একটাই আমার অনুরোধ, আপনারা যারাই যে কোনো দেশে যেতে চান, সে দেশের ভাষা সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান নিয়ে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আরেকটি বিষয় এ দেশে দেখলাম, যে কোনো উন্নয়ন কাজে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের লোকজনের সাথে সমন্বয় থাকে এবং তারা সশরীরে উপস্থিত থাকে। যেমন একটি রাস্তা কাটলে সেখানে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, ক্যাবল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট আরো যতো ডিপার্টমেন্ট আছে সবাই উপস্থিত থাকে। আমাদের দেশেও যেনো এ ধরনের আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় থাকে। পরিশেষে আমার প্রাণপ্রিয় চাঁদপুরবাসী এবং আমার পেশার সহকর্মী সাংবাদিক ভাইদের কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া চাচ্ছি, আল্লাহ যেনো প্রবাসে আমাদের ভালো রাখেন।
অনুলিখন : এএইচএম আহসান উল্লাহ।