শুক্রবার, ০৪ জুলাই, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৫

বিদ্যুতের ছেঁড়া তার এবং দুটি করুণ মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
বিদ্যুতের ছেঁড়া তার এবং দুটি করুণ মৃত্যু

আমাদের দেশে বাসাবাড়িতে বিভিন্ন কোম্পানি কর্তৃক পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তির পূর্বে রান্নার কাজে ইলেকট্রিক হিটার খুব ব্যবহার হতো। সত্তরের দশকে এই হিটার ব্যবহার ছিলো আভিজাত্যের প্রতীক। যাদের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলো, তারা হিটার ব্যবহার করতোই। এতে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনাও বেড়ে গিয়েছিলো। প্রায়শই পত্রিকায় খবর বেরুতো-- বিদ্যুৎস্পৃষ্ট স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে স্বামীর মৃত্যু, মাকে বাঁচাতে গিয়ে সন্তানের মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের... জনের করুণ মৃত্যু। এমন দুর্ঘটনা এড়াতে ও ঘরে ঘরে গ্যাস সযোগ প্রাপ্তিতে একসময় ইলেকট্রিক হিটারের ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসলো। এখন ইলেকট্রিক হিটারে নয়, পল্লী বিদ্যুতের ছেঁড়া তারে কিংবা অবৈধ সংযোগের তারে মাঝেমধ্যে ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে নানা জায়গায় ঘটছে, তবে এড়ানো যাচ্ছে কমই। বুধবার এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটলো চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহ মাহমুদপুর ইউনিয়নে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এ দুর্ঘটনা নিয়ে কামরুজ্জামান টুটুল পরিবেশন করেছেন একটি সংবাদ, যেটি পড়ে পাঠকমাত্রই বেদনায় মুষড়ে পড়তে হয়।

‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবা-ছেলের করুণ মৃত্যু’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের কদ্দি পাঁচগাঁওযে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবা আব্দুর রউফ তফাদার (৬০) ও ছেলে সায়েম তফাদার (২৫)-এর করুণ মৃত্যু হয়েছে। রউফ তফাদার স্থানীয় তফাদার বাড়ির মৃত খালেক তফাদারের ছেলে। বুধবার (২ জুলাই ২০২৫) দুপুরে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে ঐ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে। স্থানীয়রা জানান, তফাদার বাড়ির নিকটস্থ রেল লাইনের পাশের খালে পাট জাগ দিতে যান বাবা-ছেলে। খাল সংলগ্ন আকতার তফাদারের দোকানে নেয়া বিদ্যুতের সাইড লাইনের তার ছিঁড়ে পানিতে পড়ে ছিলো, যা বাবা-ছেলে মোটেও খেয়াল করেন নি। এক পর্যায়ে সেই ছেঁড়া তারে আব্দুর রউফ তফাদার জড়িয়ে বিদ্যৎস্পৃষ্ট হয়ে কাতরাতে থাকলে ছোট্ট একটি মেয়ে তার ছেলে সায়েমকে সেটা জানায়। দূর থেকে বাবার এমন অবস্থা দেখে না জেনে বাবাকে আগলে ধরলে সায়েমও বাবার সাথে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারাত্মক আহত হন। এ সময় স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আব্দুর রউফ তফাদার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা। তিনি ৩ মেয়ে ২ ছেলের জনক। সায়েম ছিলো শাহতলী কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বাবা-ছেলের করুণ মৃত্যুর ঘটনা এমন কোনো স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যম নেই, যেখানে সংবাদ আকারে প্রকাশ পায় নি। এই সংবাদে নিহতদের গ্রাম কদ্দিপাঁচগাঁয়ে শুধু নয়, পুরো চাঁদপুর জেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং টক অব দ্যা ডিস্ট্রিক্টে পরিণত হয়। একটি দোকানে নেয়া বিদ্যুতের সাইড লাইনের ছেঁড়া তারে বাবা-ছেলের এই যুগল মৃত্যু হয়। কিন্তু এই দুটি মৃত্যু এড়ানো যেতো, যদি পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের লোকজনের গ্রাম পর্যায়ে সুষ্ঠু নজরদারি থাকতো। সাইড লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ তো বৈধ সংযোগ নয়। এ জাতীয় সংযোগ প্রতিরোধে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নজরদারির আবশ্যকতা রয়েছে। যদি এই আবশ্যকতাকে গুরুত্ব দেয়া না হয়, তাহলে বিদ্যুৎজনিত দুর্ঘটনা এড়ানো খুব কমই সম্ভব হবে। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে কারো দায়িত্বহীনতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হওয়া উচিত।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়