প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৯
জেলা প্রশাসকের একটি চিঠির এতো দাম!

চাঁদপুরে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় এর দাম নির্ধারণ এবং সিন্ডিকেটের কবলে ইলিশের বাজার সম্পর্কীয় চাঁদপুরের ডিসির একটি চিঠি মন্ত্রীপরিষদ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, এটিকে আমলে নিয়ে প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করলে তিনি তা অনুমোদন করেছেন বলে গত ২৬ জুন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানা গেছে।
ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিভাগীয় কমিশনার থেকে প্রাপ্ত জুন-২০২৫-এর পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন থেকে এটি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সামনে উপস্থাপিত হয়। চিঠিতে বলা হয়, চাঁদপুরের ইলিশের সুস্বাদুতার সুযোগ নিয়ে চাঁদপুর ও আশেপাশের জেলার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী/আড়তদার নিজের ইচ্ছে মতো দাম হাঁকাচ্ছেন, যা একেবারই নাগালের বাইরে। ইলিশের চড়ামূল্যের কারণে ইলিশের মূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। যেহেতু ইলিশ চাঁদপুরসহ অন্যান্য জেলাতেও ধরা পড়ে, তাই কেবলমাত্র চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইলিশের মূল্য নির্ধারণ হলে এর ফলপ্রসূ প্রভাব পড়বে না। তাই চাঁদপুরের পাশাপাশি বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ আরো অনেক নদী যেগুলো সাগর তীরবর্তী এলাকার জেলায় রয়েছে, সেসব নদীতে ধরা পড়া ইলিশের দামও নির্ধারণ করতে হবে। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, নদী বা সাগরে ইলিশ উৎপাদনে খরচ না থাকলেও ইলিশ বাজার অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। যেহেতু ইলিশ প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হয়, সেহেতু ইলিশ আহরণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ইলিশের দাম নির্ধারণ প্রয়োজন। আর এই দাম নির্ধারণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্যে মৎস্য অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। ইলিশ সংক্রান্ত এই প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয় এবং এর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এর অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্যে অনুরোধ করা হয়। এর আগে জুনের শেষদিকে চাঁদপুর ও দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশ প্রাপ্তির জায়গাগুলোতে ইলিশের আকাশচুম্বি দাম দেখে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেয়ার জন্যে এবং এর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমাতে মন্ত্রী পরিষদ এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবদের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। ঐ চিঠির অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকেও পাঠান তিনি। বিশেষ করে তিনি চাঁদপুরের ইলিশের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ায় এবং এখনো যেটি মওসুমের শুরু থেকেই অব্যাহত থাকায় প্রশাসনসহ ভোক্তা মহলে চরম অসন্তোষ লক্ষ্যণীয় বলে জানান।
ইলিশের দাম নির্ধারণে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের লিখিত একটি চিঠির দাম যে এতোটা হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই অনেকে ভাবেন নি। জুনে লেখা চিঠির বিষয়ে জুলাইর প্রথমদিনে সুখবর পাওয়ায় রীতিমত সাড়া জেগেছে সকল মহলে। এই চিঠির দামে যদি শেষ পর্যন্ত ইলিশের দাম নির্ধারণে ন্যায্যতা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে সেটা ভোক্তাদের জন্যে হবে অনেক সুখের বিষয়, স্বস্তির বিষয় । গরুর মাংস ও খাসির মাংসের দামের চেয়েও ইলিশের দাম বেশি হবে কোন্ যুক্তিতে সেটা ভাববার যৌক্তিক বহু দিক আছে। এই দিকগুলো বিশ্লেষণ করে ইলিশের সহনীয় দাম নির্ধারণ হওয়াটা বাঞ্ছনীয় ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চাঁদপুরসহ সকল স্থানের ইলিশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে লোকসান দিতে দিতে কেউ দেউলিয়া হয়ে গেছে--এমন খবর নিশ্চয় কারো কাছে নেই। বরং ইলিশসহ অন্যান্য মাছের ব্যবসা করে অনেক বেশি লাভবান হয়ে অসংখ্য মানুষ বাড়ি-গাড়ি করেছে, প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছে, অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে, হজ্ব-ওমরা করেছে ও করছে, আনন্দ ভ্রমণে বিদেশ গিয়েছে ও যাচ্ছে--চাঁদপুর ও ভোলাসহ অন্যান্য স্থানে এ রকম ভুরিভুরি খবর দৃশ্যমান প্রমাণ সহকারে রয়েছে। কাজেই লোভাতুর মৎস্য ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে, ইলিশের দাম সকল ধরনের ক্রেতার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে--এটাই সময়ের দাবি, এটাই ক্রেতা-ভোক্তাদের শেষ কথা।