প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয় ২০১২ সাল থেকে চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে। আমি শামিম পাটোয়ারী আর আল রাহাত সাকিব চাঁদপুর টিমে একসাথে খেলে অনেক ম্যাচ জিতেছি। চাঁদপুর প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে আমি আর শামিম সব থেকে কম বয়সে অভিষিক্ত হয়েছি। তখন আমাদের বয়স মাত্র ১৪ । শামিম ফারুকী স্যার আমাদের সাহস বাড়ানোর জন্য প্রিমিয়ার লীগে চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমির টিম থেকে অভিষেক করিয়েছিলেন ২০১৩ সালে । আমরা একসাথে বাংলাদেশ আন্ডার নাইনটিন চ্যালেঞ্জ কাপ খেলেছি । কথাগুলো বলেছেন চাঁদপুরের বয়সভিত্তিক দলের ক্রিকেটার ও শামিমের বন্ধু মোরসালিন।
মোরসালিন বলেন, শামিম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি কাছ থেকে শামিমের স্ট্রাগল দেখেছি । এমনও দিন গেছে শামিমের চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে আসার জন্য ভাড়ার টাকা ছিল না। তাই শামিম সুপারি বিক্রি করে টাকা জমিয়ে তারপর প্র্যাকটিসে আসতো। তারপর একদিন শামিম নেটে প্র্যাকটিস করতে গেলে তার পায়ে একটা বল লাগে, অনেক ব্যথা পায়। সেই ব্যথার কারণে শামিম অনেকদিন প্র্যাকটিসে আসতে পারে নি। তারপর শামীম স্যার অনূর্ধ্ব ১৪ খেলার আগে শামিমের খোঁজ নেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন শামিমের পায়ের অবস্থা ভালো না। তাই তাকে গ্রাম থেকে চাঁদপুর জেনারেল হসপিটালে নিয়ে আসেন। তার পায়ে অপারেশন করিয়েছেন। ডাক্তার শামীম স্যারকে বলেছেন, আর যদি ২/১ দিন অপেক্ষা করতেন তাহলে শামিমের পা কেটে ফেলে দেওয়া লাগতো।
মোরসালিন জানান, শামিম প্রথম যখন আন্ডার ফিফটিন ন্যাশনাল ক্যাম্পে সুযোগ পায় ২০১৪ সালে এবং সেই ক্যাম্প থেকে শামিম কে বাদ দেওয়া হয়, তারপর একদিন আমাদের চাঁদপুর ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি কোচ অমিত স্যার আমাদেরকে বলেন, তোমরা বিকেএসপিতে চলে যাও। বিকেএসপিতে গেলে তোমাদের জন্যে ভালো হবে । কোচের পরামর্শ অনুযায়ী আমি আর শামিম বিকেএসপির ট্রায়ালে যাই। ২০১৫ সালে সেই ট্রায়ালে শামিম সুযোগ পেয়ে যায়। আমি সেখানে সুযোগ পাইনি। তারপর আল্লাহর রহমতে শামিমের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বিকেএসপি থেকে আন্ডার সিক্সটিন ডিভিশন খেলে তারপর ওখান থেকে আন্ডার সেভেন্টিন ন্যাশনালে সুযোগ পায় । শামিম সবসময় আমার সাথে যোগাযোগ রাখতো। শামিম যখন বিকেএসপিতে ছিলো তখন বিকেএসপিতে মোবাইল ব্যবহার করতে পারতো না। তাই প্রতিদিন রাতে বিকেএসপির এক বড় ভাইয়ের মোবাইল ফোন থেকে আমাকে কল দিতো। তারপর বাংলাদেশ আন্ডার সেভেন্টিন ন্যাশনালের হয়ে ইন্ডিয়ার সাথে ২২৬ রান করে শামিম। প্রথম দিন ১৪০ রান করে আমাকে কল দিয়েছিলো। আমি শামিম কে বলেছিলাম, বন্ধু যেভাবেই হোক আগে ১০ রান করবি, তারপর ফ্রিলি মেরে খেলবি । আমরা দুই বন্ধুর স্বপ্ন বাংলাদেশ টিমের হয়ে একসাথে খেলব । ২০১৮ সালে শামিম আন্ডার নাইনটিন ওয়ার্ল্ড কাপ টিম থেকে বাদ হয়ে যায়।
মোরসালিন বলেন, আজকে শামিম এই জায়গায় আসার পিছনে অনেক ব্যর্থতা ছিল। যেমন কিছুদিন আগেও শামিমের অবস্থা ভালো ছিল না । ২০২০ সালে আন্ডার নাইনটিন ওয়ার্ল্ড কাপে ভালো করতে পারে নি ইনজুরির কারণে। তারপর এইচপি টিমেও শামিম ছিল না। আমাকে ফোন দিয়ে শামিম অনেক কান্না করেছিলো। তখন আমি শামিমকে একটা কথাই বলেছিলাম, বন্ধু হতাশ হবি না, দেখবি নাইনটিন টিমের সবার আগে তুই ন্যাশনাল খেলবি ইনশাল্লাহ । আমার বন্ধু বলে নয়, শামিম অনেক ভালো মানুষ আমার চোখের দেখায় । আমরা যখন দুজনে একসাথে ঘুরতে বের হতাম তখন যদি কোনো গরীব মানুষ এসে শামিমের কাছে টাকা চাইতো, কখনো ফিরিয়ে দিতো না, সব সময় সাহায্য করতো তাদেরকে এবং মাঝেমধ্যে অসহায় বাচ্চাদেরকে মার্কেটে নিয়ে শপিং করে দিতো। শামিম সত্যি অনেক ভালো । আমি ছোট থেকে শামিমকে বলতাম, দোস্ত তুই একদিন অনেক উপরে খেলবি। শামিমের এটা তো মাত্র শুরু। আমার সেই ছোট থেকেই শামিমের উপর বিশ্বাস, শামিম একদিন অনেক বড় স্টার হবে । আমার জীবনে আমি অনেক প্লেয়ারের খেলা দেখেছি, অনেক প্লেয়ারের সাথে খেলেছি, শামিমের মত এত ভালো প্লেয়ার কখনো দেখিনি। শামিমের জীবনের প্রথম ম্যাচেই ৫৩ রান করে স্কুল ক্রিকেটে । শামিম এই জায়গায় আসার পিছনে সব থেকে বড় অবদান হচ্ছে শামিমের কাকার। অনেক ভালো মানুষ তিনি। শামিমকে কখনো অভাব বুঝতে দেননি। শামিমের যত খরচ আছে সব তিনি দিয়েছেন । আমি হয়তো শামিমকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারি নি, কিন্তু আমি সব সময় শামিমের পাশে ছিলাম এবং ইনশাআল্লাহ সব সময় শামিমের পাশে থাকব । ৯ বছরের জার্নিটা সহজ ছিল না। আমি কাছ থেকে শামিমের কষ্টগুলো দেখেছি। শামিম অনেক পারিশ্রমী। সেটা আমি কাছে না থাকলে বুঝতাম না।