রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০

জেলাতে নিয়মিত ক্রিকেট লীগসহ খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে
চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম ॥

ছোটকাল থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিলো আগ্রহ। আর খেলাধুলাসহ পড়ালেখার জন্যে ছিলো বাবা ও মায়ের সহযোগিতা। এক সময় চাঁদপুরে নিয়মিত ক্রিকেটার হিসেবে ছিলো ব্যাপক পরিচিতি। এমনকি চাঁদপুর জেলায় যেই বছর (১৯৮৭ সালে) প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগ শুরু হয় সেই বছরই স্থানীয় একটি ক্লাবের হয়ে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন। একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে চাঁদপুর ও রাজধানী ঢাকাতে বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন। খেলাধুলার মাঝখানে কিছুদিন প্রবাসে চাকুরি করলেও ২ বছর আগে দেশে ফিরে আসলে (বাবার অসুস্থতার জন্য) সেই ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট উপ-কমিটির পক্ষ থেকে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ও ক্রিকেট লীগ চলাকালীন সময়ে টেকনিক্যাল কমিটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হলেন সাবেক ক্রিকেটার এসএম মুজিবুল হক রাসেল। তার বাবার নাম এম মাহফুজুল হক ও মায়ের নাম রওশন আরা বেগম। বসবাস করছেন চাঁদপুর শহরের আলীমপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে। ২ ভাই ৪ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবা ছিলেন ব্রিকসের (ইট প্রস্তুতকারী) ব্যবসায়ী। তাদের হাজীগঞ্জ উপজেলার আলীগঞ্জে ছিলো রওশন ট্রেডার্স।

এসএম মুজিবুল হক রাসেল ২০০৭ সালের মে মাসে মুক্তিযোদ্ধা মিয়া নাছির উদ্দিনের মেয়ে নাজমুন নাহারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক। তার ২ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আবরার মুনতাসির হক চাঁদপুর শহরের মিশন স্কুলের ৩য় শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে। ছোট ছেলে আরহাম আয়ান হক। তিনি খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে মাঝখানে কুয়েত এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে এক্সপোর্ট ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় শহরের মিশন স্কুল থেকে। সেখানে তিনি প্রথম থেকে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশেষে ভর্তি হন চাঁদপুর হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশেষে ভর্তি হন চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন চাঁদপুর সরকারি কলেজে। তিনি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাসে ভর্তি হন। ওইখান থেকে মাস্টার্স (এমএ) পাস করেন। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে ও কর্মজীবনের জন্যে খেলাধুলা ছেড়ে পাড়ি জমান কুয়েতে। তিনি জানান, ১৯৯৭ সালে পড়াশোনার পাঠ শেষ করে দেশেই কোরিয়ান কোম্পানী (সেমিংস কর্পোরেশন) চাকুরিতে যোগ দেন। সেখান থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কুয়েত এয়ারলাইন্সে চাকুরি নিয়ে কুয়েত চলে যান। কাজের চাপের কারণেই তিনি খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে খেলাধুলা ছেড়ে দিলেও খেলার মাঠ এখনও ছাড়েননি। চলতি মাসে শুরু হয়েছে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ। খেলা চলাকালীন শনিবার দুপুরে সাবেক এ ক্রিকেটারের সাথে আলাপচারিতা হয় চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়া প্রতিবেদকের। তার বক্তব্যগুলো হুবহু তুলে ধরা হলো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আস্সালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : জি¦ ওয়ালাইকুম আস্সালাম, আল্লাহর রহমতে সকলের দোয়ায় এবং আপনাদের ভালোবাসায় ও মাঠের ক্রিকেটারদের উৎসাহ নিয়ে ভালো আছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা শুরু করেন কবে থেকে?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াবস্থায়ই পাড়ার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা শুরু করি। আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি তখন আমাদের এলাকার সাবেক ক্রিকেটার ও আমার প্রথম কোচ জাহাঙ্গীর আলম বেদন মামার হাত ধরে ক্রিকেটের হাতে খড়ি হয়। তখন মামাসহ আমি এবং অনেক ক্রিকেটারই আমাদের আলিমপাড়া এলাকার নবজাগরণ ক্লাবের হয়ে খেলি। এ জেলাতে যখন ক্রিকেট লীগ শুরু হয়, ওই বছরই আমি নবজাগরণের হয়ে খেলা শুরু করি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটে আপনার যাত্রা?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : ১৯৮৭ সালে আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকেই ক্রিকেটের সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়ি। ওই বছরই আমি চাঁদপুরের প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে অংশ নেয়া দলগুলোর সাথে নবজাগরণের হয়ে খেলতে নামি। আমি ডান হাতে ব্যাটিং করতাম। আমি মূলত ওয়ান ডাউন ও দ্বিতীয় ডাউনে খেলতাম।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাদের সময় চাঁদপুরে প্রথম শুরু হওয়া প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে আর কোন্ কোন্ দল খেলেছিলো?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : আমাদের নবজাগরণ ক্লাব ছাড়াও ওই বছর প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে আরো ৬টি দল অংশগ্রহণ করে। দলগুলো ছিলো : নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ইয়ুথ ক্লাব, লোপাট ইলেভেন, ইলেভেন বুলেটস ও পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাব। ওই বছরই পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাব চ্যাম্পিয়ন এবং আমাদের নবজাগরণ ক্লাব রানার্স আপ হয়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : নবজাগরণ ক্লাব ছাড়া আর কোন্ কোন্ ক্লাবে খেলেছেন?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : আমি আমাদের পাড়ার ক্লাব ছাড়াও চাঁদপুর স্টেডিয়ামের ক্রিকেট লীগে আরো ৩টি দলের হয়ে খেলেছি। দলগুলো হলো : আবাহনী ক্রীড়া চক্র, চাঁদপুর পৌরসভা একাদশ এবং পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাব। ওই সময় আমার কোচ ছিলেন সমর দা।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকায় কোনো ক্লাবে খেলেছেন?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : হ্যাঁ, আমি ঢাকায় ৬ বছর খেলেছি। আমি ঢাকা লালমাটিয়া ক্লাবের হয়ে ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে খেলি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা দলের হয়ে?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : আমি অনূর্ধ্ব ১৯ (জুনিয়র দল)সহ জেলা দলের হয়ে ক্রিকেট খেলাতে অংশ নেই। এখনকার সময়ে জেলা দল যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে আমাদের সময় সেই সুযোগ সুবিধা খুবই কম ছিলো। আমাদের সময় বিভিন্ন সহযোগিতা কম থাকলেও খেলাধুলার ব্যাপারে আগ্রহ ছিলো জেলা ক্রীড়া সংস্থার।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাদের সময় আর এখনকার ক্রিকেট?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : আমাদের সময় এ জেলাতে নিয়মিতই খেলাধুলা হতো। প্রতিবছরই মাঠে খেলাধুলা ছিলো। ওই সময়েই খেলাধুলার জন্য প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হতো। আমরা যখন খেলাধুলা করতাম তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক মুনির আহমেদ ভাই। তাঁর আমলে মাঠে সারাবছরই খেলা চলতো। ওই সময় খেলাধুলার সাথে জড়িতদের মধ্যে সিনিয়র এবং জুনিয়রদের সর্ম্পক ছিলো অনেক সুন্দর। এখন তো ক্রিকেটের অনেক উন্নতি হয়েছে। খেলার মাঠ অনেক সুন্দর হয়েছে। আমরা খেলাধুলা করতে হতো অনেক কষ্ট করে। আর এখন তো ক্রিকেট খেলোয়াড়দের অনেক কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : উদীয়মান ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : খেলোয়াড়দেরকে অনুশীলনের প্রতি বেশি মনোযোগী হতে হবে। খেলার জন্য কঠিন পরিশ্রমসহ অনেক কিছু মানতে হবে। আমি মনে করি, একজন ভালো খেলোয়াড় হতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। চাঁদপুরে স্টেডিয়ামসহ আউটার স্টেডিয়াম রয়েছে। এখানে দুটি একাডেমীও রয়েছে। যারা ক্রিকেটের সাথে জড়িত রয়েছে তারা যদি পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাটিকে নিয়মিতভাবে চর্চা করে আশা করি সে একজন ভালো খেলোয়াড় হতে পারবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কী করা প্রয়োজন?

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা হতে নিয়মিতভাবে ক্রিকেট লীগ ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ খেলাধুলা চালু করতে হবে। ক্রিকেটারদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর জেলা ও উপজেলা থেকে ক্রিকেটার বাছাই করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে ক্রিকেট কোচ এনে তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু সাবেক একজন খেলোয়াড়, তিনি চেষ্টা করছেন খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে। একই সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি এবং ক্রিকেট উপ-কমিটির সদ্য সাবেক সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম রোমানের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় চাঁদপুরে ক্রিকেট লীগ ও টুর্নামন্টে হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। তারপরও আমি মনে করি, সময়মতো যে খেলাধুলাগুলো চালানো উচিত সেই সময় মতোই যেনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-এর জাতীয় দলের মূল একাদশে আমাদের জেলার ক্রিকেটার খেলছে। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। এই ক্রিকেটারদেরকে অনুসরণ করে যদি ধারাবাহিকভাবে চাঁদপুরে খেলাধুলা হয় তাহলে এ জেলা থেকে ভালো মানের অনেক ক্রিকেটারই সৃষ্টি হবে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

এসএম মুজিবুল হক রাসেল : জি¦ আপনার প্রতি এবং জেলার সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়দের প্রতি রইলো আমার শুভ কামনা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়