প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
খাল তুমি কার?
কচুয়া উপজেলায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে রয়েছে শতাধিক খাল। এসব খালে কচুরিপানাজটের কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। কোথাও কোথাও কচুরিপানার জটের এমন অবস্থা, অনায়াসে এর উপর দিয়ে হেঁটে খালের এপাড় থেকে ওপাড় যাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা, নষ্ট ও দূষিত পানির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার প্রতি বছর দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খালসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে লাখ লাখ টাকার মাছের পোনা অবমুক্ত করে আসছে। পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত ও খালপাড়ের মানুষের বর্জ্য ফেলার কারণে খালের পানি দূষিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ আর বাড়ছে মশার উপদ্রব। ৭০/৭৫ফুট প্রশস্তের কচুয়ার প্রধান খালটি মতলবের ধনাগোদা ও হাজীগঞ্জের ডাকাতিয়া নদীর সাথে সংযুক্ত। খাল পাড়ের বসবাসকারী মানুষগুলো এ দুর্গন্ধময় পানি ও মশার উপদ্রব নিয়ে বছরের পর বছর বাধ্য হয়ে জীবন-যাপন করে আসছে অতি কষ্টে। তাদের এ সমস্যা সমাধানে যেন কেউ নেই এমনই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
|আরো খবর
অপরদিকে ভূমি কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যচ্ছে অধিকাংশ খাল। এ যেন দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে ভূমিখেকো দখলদাররা। একজনের দেখাদেখি অন্য আরেকজন খাল ভরাট করে ভবন নির্মাণ করে জনবসতি গড়ে তোলার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। দখলদারদের মধ্যে অনেকেই নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা দাবি করে আসছেন বলেও জানা যায়।
উপজেলা পরিসংখ্যান ও তথ্য অফিসে মোট খালের দৈর্ঘ্যরে পরিমাণের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ইউনিয়ন কার্যালয় হতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে কচুয়ায় খালের দৈর্ঘ্যরে পরিমাণ প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। কচুয়া-হাজীগঞ্জ ভায়া পরানপুর, সাচার-হাজীগঞ্জ ভায়া কচুয়া, সাচার-নায়েরগাঁ ভায়া বড়দৈল, কচুয়া-রঘুনাথপুুর, কচুয়া-কাপিলাবাড়ি, কচুয়া-নলুয়া ভায়া মনোহরপুর, সফিবাদ-আলীয়ারা ভায়া ভূঁইয়ারা, উজানী-বাখৈইয়া খাল, সাপলোলা ও সুন্দরী খালসহ উপজেলার বেশকিছু খালের অংশ স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে দখল করে ইমারত নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছে। আবার কেউ কেউ বাঁধ নির্মাণ করে বাড়িতে আসা-যাওয়ার পথ তৈরি করেছে। আবার কোথাও কোথাও খাল ভরাট করে দোকানপাট নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে আসছে। এতে খালের পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতি বছর বৃষ্টি মৌসুমে মাঠে মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এটি যেন দেখার কেউ নেই।
এদিকে খাল ভরাট করে দখল করে নেয়ায় সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্বে সভা সমাবেশ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানানো হয়। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। কিন্তু দখল করে নেয়া খাল মুক্ত করতে দখলকারী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে স্থানীয়রা জানায়।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুলাতানা খানম বলেন, খালের কচুরিপানা পরিষ্কারে উপজেলা পরিষদের কোনো বরাদ্দ না থাকায় এ মুহূর্তে কচুরিপানা পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে এ বছর কচুয়ার বিভিন্ন জলাশয়ে ২৯০ কেজি পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে খাল দখলমুক্ত করণ, দূষণমুক্তকরণ ও কচুরিপানা পরিষ্কারে আমাদের অধিদপ্তরে কোনো প্রকল্প নেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশেকুর রহমান বলেন, আমার বিভাগে খাল পরিষ্কারের কোনো বরাদ্দ নেই। এ বিষয়ে উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে দেখতে পারেন।
উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, খালের কচুরিপানা পরিষ্কারে এ মুহূর্তে আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ জানান, সরকারি খাল দখলের কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।