প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অতিবৃষ্টিতে চাঁদপুর জেলার বহু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ॥ মাছ ধরার উৎসব
চাঁদপুরে গত ৪ দিনের অতিবৃষ্টি ও বর্ষার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চাঁদপুর সেচ প্রকল্পসহ বহু এলাকায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের কিছু রাস্তাসহ গ্রামীণ জনপদের রাস্তাঘাট, খাল-বিল-পুকুর- জলাশয় ও ফসলি মাঠ পানিতে টইটম্বুর। চারদিকে পানিতে থৈথৈ করছে। মেঘনা নদীর পানি জোয়ারে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও বিভিন্ন জায়গার ঢলের পানি নামার সময় নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চাঁদপুরেও বন্যার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
পানি নিষ্কাশন দ্রুত না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যার ফলে লোকজন খাবারের কষ্ট এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে খুবই দুর্বিষহ দিনযাপন করছেন। একই সাথে গত দুদিন বিভিন্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সরজমিনে দেখা গেছে, চাঁদপুর পৌরসভার তালতলা, নাজিরপাড়া, সদর উপজেলার বাগাদী, বালিয়া, লক্ষ্মীপুর, হানারচর, ইব্রাহিমপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা, কড়ইতলী, পৌরসভা, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে অতি বৃষ্টির কারণে বহু রাস্তা, ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত।
চাঁদপুর সদর ইউএনও জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় পৌর ও ইউনিয়ন এলাকায় ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ জানান , টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় জেলার কয়েকটি উপজেলায় লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৪০ পরিবার, হাজীগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়নে ১২ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৬০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সদরের ৮ ইউনিয়নে ৮০০ এবং হাইমচরে ১হাজার পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ নরজদারিতে রাখা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনার পানির বর্তমান লেভেল হচ্ছে ৩.৭৮ মিলিমিটার।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, গত ক'দিনের টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্প এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে ১০০ কিলোমিটার। আমরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছি। পানি কমালেও বৃষ্টিতে আবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের চর বাগাদী পাম্প হাউজ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার হাজিমারা পাম্প হাউজ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করি বৃষ্টি কমলে দুদিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।
সদর উপজেলা সরকারি মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, অতিবৃষ্টির কারণে বহু মৎস্য চাষীর মাছ ভেসে গেছে। সদর উপজেলায় ১৬০০-এর উপরে মাছচাষী রয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে প্রায় ৩০ শতাংশ পুকুর-জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে মৎস্য চাষীদের বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে যাওয়ায় সেই মাছ এখন খাল বিল এমনকি নদীতে পাওয়া যাচ্ছে। উৎসুক মানুষ মেতে উঠেছে সেই মাছ ধরার জন্য।