শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল আর নেই
সাইফুল আজম/গোলাম মোস্তফা ॥

যে মানুষটি করোনা অতিমারির সময় নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক হিসেবে যিনি চাঁদপুরবাসীর কাছে সমাদৃত, সেই মানবিক চিকিৎসক ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন। বড্ড অভিমান করে যেনো তিনি এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। কাঁদিয়ে গেলেন অসংখ্য মানুষকে। তিনি গতকাল শনিবার বিকেল তিনটায় চাঁদপুর ফেমাস স্পেশালাইজড হসপিটালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না-লিল্লাহ...... রাজিউন)। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিলেন।

ডাঃ রুবেল মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক পদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আড়াই শ' শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও'র দায়িত্বে ছিলেন। ২০২০ সালে শুরু হওয়া করোনা মহামারীর সময় হাজার হাজার করোনা রোগী তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন। শুধু তিনিই নন, তাঁর স্ত্রী ডাঃ সাজেদা বেগম পলিনও একইভাবে করোনাকালে মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করে মানুষের পাশে ছিলেন। যিনি বর্তমানে নড়াইল জেলার সিভিল সার্জন। এই চিকিৎসক দম্পতি সারাদেশে করোনাকালীন সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। করোনাকালে দিনেরাতে যে কোনো সময় এই চিকিৎসক দম্পতির চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন চাঁদপুরের মানুষ। এজন্যে ডাঃ রুবেলের মৃত্যুতে চাঁদপুরবাসীও গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর এমন আকস্মিক মৃত্যুর খবরে সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। তাঁর জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিই প্রমাণ করে তিনি মানুষের ভালোবাসা কতটা অর্জন করে নিয়েছিলেন।

তাঁর পরিবার সূত্রে জানা যায়, ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল ডায়াবেটিস ও ওপেন হার্ট সার্জারী ছিলেন। গত ক’দিন পূর্বে মোটরসাইকেলের চ্যালেঞ্জার পাইপের সাথে তাঁর পা লেগে আঘাত পান। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় বাসায় চিকিৎসা নেন। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা বেখেয়ালি ছিলেন। এক পর্যায়ে গতকাল দুপুরের দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকলে তাঁকে শহরের ফেমাস স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালে আনা হয়। এর আগে তিনি বাসায় হার্ট অ্যাটাক করেন। এখানেও তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। তাঁকে আইসিইউতে নেয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মরহুমের একমাত্র সন্তান আরাবী ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী।

এদিকে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে চাঁদপুর শহরে অবস্থানরত দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা হাসপাতালে ভীড় জমাতে শুরু করেন। বিকেলে তাঁর মরদেহ কর্মস্থল সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী, হাসপতাালের স্টাফ ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

বাদ মাগরিব চাঁদপুর পৌর ঈদগাহে মরহুমের জানাজা শেষে মরদেহ বরিশাল নিজ বাড়িতে চিরস্থায়ী ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা করে। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন কালেক্টরেট জামে মসজিদের ইমাম মাওঃ মোশাররফ হোসাইন।

জানাজার পূর্বে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহর পরিচালনায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ হারুন অর রশিদ, মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাঃ সাইফুল ইসলাম সোহেল, জেলা বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম ও মরহুমের ছোট ভাই প্রফেসর রবিন।

উল্লেখ্য, মরহুম ডাঃ সুজাউদ্দৌলা রুবেল বরিশালের সন্তান হলেও চাঁদপুরবাসীর কাছে তাঁর কর্মে ছিলেন চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে। জানাজায় তার প্রমাণ মিলেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়